জাতীয়শিরোনাম

গুলিস্তানে ব্যবসায়ী-হকার সংঘর্ষ:ঘরমুখো মানুষের র্দূভোগ

রাজধানীর গুলিস্তানে ব্যবসায়ী ও হকারদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। হকারমুক্ত রাখতে দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ও ডিএমপি কমিশনার মো: আসাদুজ্জামান মিয়া গুলিস্তান পরিদর্শন করে চলে যাবার পর আবার দোকান বসানো নিয়ে এ সংঘর্ষ বেধে যায়।

দুই গ্রুপের মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার হয়। এ সময় ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিটি সড়কেই সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজটের। সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে এ সংঘর্ষ চলতে থাকে।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় মেয়র ও ডিএমপি কমিশনার গুলিস্তান এলাকা পরিদর্শনে যান। এর আগেই গুলিস্তানের রাস্তার উপর থাকা দোকানপাট তুলে দেয় পুলিশ। তবে এ সময় ফুটপাত দখল করে দোকান বসিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যায় হকাররা। মেয়র গোলাপশাহ মাজার থেকে সিনেমা হল মোড় হয়ে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে পর্যন্ত পরিদর্শন করেন। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমানে গুলিস্থান এলাকার রাস্তাঘাট হকারমুক্ত থাকায় নগরবাসী স্বস্তির সাথে এ এলাকা দিয়ে চলাফেরা ও পবিত্র ঈদ উপলক্ষ্যে কেনাকাটা করতে পারছেন।

পবিত্র রমজানের সময় ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা ছাড়াও নগরবাসী যেন স্বস্তির সাথে চলাফেরা করাসহ কেনাকাটা করতে পারেন এবং যানবাহন চলাচল যেন বিঘ্নিত না হয় সেজন্য গুলিস্থান এলাকার রাস্তা-ঘাট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিয়ে যেকোন মূল্যে হকারমুক্ত রাখা হবে। রাস্তার আর হকার বসতে দেয়া হবে না।

ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া গুলিস্থান এলাকায় যানবাহন ও জনসাধারনের সহজ চলাচল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুলিশী কঠোর নজরদারী অব্যাহত রাখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।তিনি বলেন, রমজানের সাত দিন আগে থেকে নগরী যানজটমুক্ত এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য মেয়রের নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। রাস্তাকে আমরা চলাচলের উপযোগী করেছি, সবাই যেন বাসায় গিয়ে ইফতার করতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা করেছি।

তিনি বলেন, হকার যেন আর রাস্তায় বসতে না পারে সেজন্য গোলাপশাহ মাজার থেকে পাতাল মার্কেট পর্যন্ত সড়কে গাড়ি চলাচলের প্রবাহ বাড়াতে হবে। কিছু পুলিশ সদস্যের কারণে হকাররা বসার সুযোগ পায়, সাংবাদিকদের এমন অভিযোগের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সব পেশায় কিছু কিছু খারাপ লোক থাকে। তাদের দায়িত্ব পুরো পুলিশ বিভাগ নেবে না।

রমজানে যানজট বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তা ভেঙে গেছে। ইফতারের আগে সবাই একসাথে বাসায় ফিরতে চাচ্ছে। এসব কারণে কিছু যানজট হয়। আমরা হয় তো সুপারসনিক গতিতে যানজট ঠিক করে দিতে পারব না। কিন্তু অল্প গতিতে হলেও রাস্তায় গাড়ি চলতে পারবে। আমরা চেষ্টা করছি।

এরপরই মেয়র ও ডিএমপি কমিশনার ওই এলাকা ছেড়ে গেলে হকাররা আবারো রাস্তার উপর দোকান বসানো শুরু করে। নতুন টাকা বিক্রেতারা মেয়রের গাড়ি পার হতেই টুল নিয়ে বসে পড়েন। একে একে অন্য সড়কেও হকাররা রাস্তায় পণ্যের পসরা বসানো শুরু করেন।

কিন্তু ঢাকা ট্রেড সেন্টারের সামনে হানিফ ফ্লাইভারের নিচে হকাররা আবার বসতে গেলে দোকান মালিকরা বাধা দেয়। এ সময় হকারদের সাথে তাদের সংঘর্ষ বেধে যায়। ঢাকা ট্রেড সেন্টারের ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, মার্কেট কমিটির লোকজন ফুটপাতের দোকানদারদের চলে যেতে বলে। কিন্তু তারা না গিয়ে কমিটির লোকদের মারধর শুরু করে। তখন ব্যবসায়ীরা জোট বেঁধে হকারদের উপর চড়াও হয়।

এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এবং ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ হকার্স লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবুল কাশেম নয়া দিগন্তকে বলেন, মার্কেটের লোকদের ভাড়া দিয়ে হকাররা ব্যবসা করে। কিন্তু আজকে তারা বসতে না দেয়ায় প্রতিবাদ করতে গেলে সংঘর্ষ হয়। তিনি আরো বলেন, দোকান মালিকরা ছাদের উপর থেকে ইট মেরেছে। এ কারণে ২০/৩০ জন হকার আহত হয়েছে। তিনি এ ঘটনার নিন্দা জানান। মেয়রের গুলিস্তান এলাকা পরিদর্শন উপলক্ষে প্রায় এক ঘন্টা আগে থেকেই রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখে পুলিশ।

এ কারণে গুলিস্তান থেকে বিভিন্ন রুটের গাড়ির দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। মেয়র চলে যাওয়ার পর গাড়ি ছাড়ার আগেই সংঘর্ষ বেধে গেলে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। মতিঝিল থেকে গুলিস্তান, জিরো পয়েন্ট থেকে গুলিস্তান, নবাবপুর এবং ফুলবাড়িয়া বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আসাদ পুলিশ বক্স থেকে গাজীপুর ও নরসিংদীগামী বাসও চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এরফলে ইফতারের আগে ঘরমুখো মানুষকে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button