sliderস্থানীয়

কুষ্টিয়ায় লোকসানের মুখে দুশ্চিন্তায় পাট চাষিরা, দাম বাড়ানোর দাবি

হৃদয় রায়হান, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় চলতি মৌসুমে পাটের চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। বাজারে পাটের যে দর, তাতে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। গত মৌসুমেও পাটের কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি, এবারও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। পাট বিক্রি করে খরচের টাকা উঠছে না। এতে প্রতিবিঘা পাট চাষে লোকসান হচ্ছে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা। তাই সরকারের কাছে পাটের দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।

কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় পাট চাষে আগের তুলনায় এবার খরচ বেড়েছে। মজুরির ব্যয়, সার, কীটনাশক ও বীজসহ চাষাবাদের খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে প্রতি বিঘা পাটের উৎপাদন খরচ প্রায় ১৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় পাট উৎপাদন হচ্ছে ৫ থেকে ৬ মণ। এক মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা পাট চাষে লোকসান হচ্ছে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা।

লোকসানে পড়া পাট চাষিরা বলেন, সার, বিষ, মজুরির ব্যয়, জমি লিজ খরচসহ সবকিছুর দাম বাড়ে। কিন্তু পাটের দাম বাড়ে না। পাট চাষের খরচ বেড়েছে, ফলনও তুলনামূলক কম। এতে লোকসানে পড়েছেন পাট চাষিরা।

জেলা কৃষি অফিস ও জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলায় প্রায় ৩৫ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। গত বছরে ৩৭ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছিল। জেলায় এ বছর পাট চাষ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৬১৫ হেক্টর কম চাষ হয়েছে। পাট উৎপাদনের ফলন ধরা হয়েছে ৯২ হাজার ৮৮৮ মেট্রিক টন। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি বিঘায় ৮ মণ ধরা হলেও ফলন হচ্ছে ৫ মণ থেকে ৬ মণ।

মিরপুর উপজেলার কৃষক সুজাত আলী বলেন, আমার এক বিঘা জমিতে পাটের বীজ, সার, কীটনাশক, মজুরির ব্যয়, লিজ খরচ ও পুকুর ভাড়া দিয়ে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। পাট উৎপাদন হয়েছে ৫ মণ। ২ হাজার টাকা দরে ৫ মণ পাট বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা হয়েছে। আমার ৬ হাজার টাকা লোকসান। পাট চাষের খরচ বেড়েছে, কিন্তু দাম বাড়েনি। এজন্য আমার মতো সব পাট চাষির লোকসান হচ্ছে। পাটের দাম বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি। যে ফসলে লোকসান, সেই ফসল উৎপাদন বন্ধ করে দেবে কৃষক। পাট চাষে লাভবান না হওয়ায়, চাষিরা পাট চাষ কমিয়ে দিয়েছে। পাটের দাম না বাড়লে আমিও আর পাট চাষ করবো না।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, এ বছর তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং খরার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাট চাষ কম হয়েছে। পাট চাষের বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নতুন জাতের বীজ, সার, প্রণোদনা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করা হচ্ছে। আমরা কৃষকদের পাশে থেকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছি।

জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শক সোহরাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, গত বছরে পাট চাষিরা লোকসানে পড়েছিলেন। এ কারণে পাট চাষ কমেছে। এ ছাড়াও খরার কারণে অনেকে পাট চাষ করেনি। পাট উৎপাদনে খরচ বেশি হচ্ছে চাষিদের। পাটের দাম বাড়ানো উচিত। একই সঙ্গে পাট রপ্তানি ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button