৩ বছরে বিদেশ সফর করেছেন তিন হাজার বিদ্যুৎ কর্মকর্তা!
বিদ্যুৎ বিভাগের চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিগত তিন বছরে বিদেশ সফর করেছেন দুই হাজার ৯৬১ কর্মকর্তা। গতকাল ১৭ অক্টোবার, বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এসব তথ্য উঠে আসে।
এসময় অযথা কেউ যেন বিদেশ সফরে না যেতে পারেন ও অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে যাতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় না হয় সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে সতর্ক থাকতেও পরামর্শ দেয় কমিটি। একই সঙ্গে স্বচ্ছতার সঙ্গে যেন এসব সফর সম্পন্ন হয় সে বিষয়েও নজর রাখতে বলা হয়েছে। আমাদের সময়ের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘অনিয়মটা তো এখন আর ধরতে পারব না। তাই মন্ত্রণালয়কে সতর্ক থাকতে বলেছি, যেন অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিদেশ সফর না হয়। অনেক সময় দেখা যায়, একই কর্মকর্তা ঘুরে ফিরে বিদেশ সফর করেন, এমনটিও যেন না হয়, সে জন্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি।’
তিনি আরো জানান, তার এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের সচিব তাদের অবহিত করেছেন, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সব কিছু সুষ্ঠুভাবে চলছে। বিদেশে সফর নিয়ে কোথাও কোনো অনিয়ম হয়নি বলেও তাদের কাছে দাবি করেছেন সচিব।
সভায় বিদ্যুতের সিস্টেম লসের পরিমাণ নির্ধারণ করার সুপারিশ করেছে কমিটি। একই সঙ্গে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুতের সিস্টেম লসের পরিমাণ সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনা, অবৈধ সংযোগ ও চুরি প্রতিরোধে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতেও মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
জানা যায়, সভায় সিস্টেম লস নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ চুরির বিষয়টি যুক্ত না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে চুরির বিষয়টি বাদ দিয়ে প্রকৃত সিস্টেম লস দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কী পরিমাণ চুরি হয়, সেটিও আলাদা দেখাতে বলা হয়।
সভায় জানানো হয়, গ্রামাঞ্চল ও অফগ্রিড এলাকায় সোলার বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে ২১টি সোলার মিনি গ্রিড, এক হাজার ৩৭৪টি সোলার ইরিগেশন পাম্প এবং ৫০ লাখ ৮০ হাজার সোলার হোম সিস্টেম বসানো হয়েছে। এ ছাড়া ৬টি সোলার মিনি গ্রিড এবং ২৩২টি সোলার ইরিগেশন পাম্প বসানোর প্রক্রিয়া চলমান।
এসময় আরো জানানো হয়, গ্রিডে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, এমন এক হাজার ৬৯টি অফগ্রিড গ্রাম চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে ৬২০টি গ্রামে গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে। ২০২০ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনার জন্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।
সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, পল্লী বিদ্যুতের আওতাভুক্ত দেশের ৪৬১ উপজেলার মধ্যে ৩৫৩টি শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১০৮টির বিদ্যুতায়নের কাজ চলছে।
জানা গেছে, গত ২০০৯-০৯ অর্থবছরে বিদ্যুতের সিস্টেম লস ছিল ১৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ, তা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কমে ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই ১১ বছরে ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ সিস্টেম লস হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে যে ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ সিস্টেম লস আছে, তার মধ্যে সঞ্চালন লস ২ দশমিক ৬১ ও বিতরণ লস ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, মো. আবু জাহির, মো. আছলাম হোসেন সওদাগর, মোছা. খালেদা খানম, বেগম নার্গিস রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমদ কায়কাউসসহ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।