পতাকা ডেস্ক: দেশে ২০০৮ সালের পর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। ২০১৪ থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ সরকার ছিল। সেজন্য তাদের অনেককে খুশি রাখতে হয়েছে। এর মধ্যে তারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সেনাবাহিনীকে ১৫ বছর খুশি রাখার কাজটি করেছে বা করতে হয়েছে। আর সেইসূত্রে স্বৈরতন্ত্রের সৃষ্টি হয়েছে। এখন স্বৈরতন্ত্রের পতন হয়েছে। এখন দরকার গণতন্ত্রকে সুসংগঠিত করা। ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
শনিবার রাজধানীর কাঁটাবনে পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে ‘সংকটে গণতন্ত্র: সামরিক শাসনোত্তর বেসামরিক শাসনের সমস্যা’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। বক্তারা বলেন, বৈষম্যমূলক সমাজ নির্মাণ করতে হলে শ্রেণি, জাতি, ধর্মীয়, লিঙ্গীয় বৈষম্য নিরসন জরুরি। না হলে এক ফ্যাসিবাদের বিদায়ে আরো অনেক ফ্যাসিবাদের সৃষ্টি হলে তা হবে দুঃখজনক। আর সবরকম বৈষম্য দূর করতে দরকার সুনির্দিষ্ট রূপকল্প।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল অব.আমিনুল করিম, সংকটে গণতন্ত্র বইয়ের লেখক আমীর খসরু প্রমুখ।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, জনগণের দায়িত্ব নিয়ে নতুন সমাজ গড়ার অঙ্গীকারে আমরা প্রস্তুত। কিন্তু স্বৈরতান্ত্রিক পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার পর কিভাবে জনগণের জন্য কাজ করা যায়, জনগণের শক্তি কাজে লাগানো যায়, বর্তমান সরকার সেই দিকনির্দেশনা এখন দেয়নি। তারাও ঘুরে ফিরে আমলাতান্ত্রিক নির্ভরতার ওপরে ভর করছে। গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক নির্ভরতা বৃদ্ধি করে ফেলেছে। এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশের ব্যবসায়িক অবস্থা পরিবেশকে সচল করতে হবে, প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ সচল করতে হবে, আইনশৃঙ্খলার পরিবেশটা সুসংহত করতে হবে। যারা স্বৈরাচারী সরকারের অন্যতম সহযোগী ছিল, সেগুলো চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা অবৈধ টাকা উপার্জন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এগুলো নিয়ে আমরা কোথাও দৃশ্যমান কিছু দেখতে পারছি না।
তিনি আরো বলেন, পরিবর্তনের সুযোগে অনেক অস্বচ্ছ আকাঙ্ক্ষা সামনে চলে আসছে। এ আকাঙ্ক্ষাগুলো বন্ধ করা জরুরি। সমাজের সব শ্রেণিপেশার মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কারণ দেশের এমন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়া চ্যালেঞ্জ। যদিও এই চ্যালেঞ্জে অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। সেজন্য আমলাতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসার বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে অসম্ভব সম্ভাবনার মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। ফলে কোনোভাবেই অস্বচ্ছ আকাঙ্ক্ষাকে সুযোগ দেয়া যাবে না।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, হাসিনা সরকারের আমলে সার্বক্ষণিক একটা নজরদারি ছিল- কেউ কোনো প্রশ্ন তুললেই ছাত্রলীগ চলে আসত, গোয়েন্দা চলে আসত। কিংবা পুলিশ বা অন্য কোনো উইং এসে হুমকি দিচ্ছে, ক্রসফায়ারের হুমকি দিচ্ছে। দেশের মানুষ এমন পরিস্থিতিতে ছিল পুরোটা সময়।
শুরুতেই লেখক আমীর খসরু বইটি রচনার নেপথ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, দুনিয়ার অন্তত এক ডজন দেশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সামরিক শাসন চলছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে আমাদের এখানেও রাজনীতিকদের ব্যর্থতায় বিভিন্ন সময়ে সামরিক শাসন এসেছে। একাত্তরে এবং বর্তমানে ২০২৪-এর ঘটনার সময় যারা পরে নায়ক হয়েছেন তারা দু’জনই বাইরে ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা বিপ্লবকে ধারণ করতে পারেননি। বিপ্লবী একজন নেতা আমরা পাইনি।