sliderস্থানীয়

১৬৭তম সাঁওতাল কৃষক বিদ্রোহ দিবস পালিত

বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় দিনাজপুর জেলা প্রেস ক্লাবের হল রুমে বাংলাদেশ আদিবাসী সমিতি, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, বাংলাদেশ কিষাণী সভা ও বাংলাদেশ আদিবাসী সমিতি আয়োজনে আদিবাসী সমিতির সভাপতি অমলী কিসকুর সভানেত্রীত্বে, সাধারণ সম্পাদক স্বপন এক্কার পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ ইকবাল খান, বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী সমিতির নেত্রী রিনা মারডি, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের জেলার সভাপতি তারোক কবিরাজ, পিন্টু, উজ্জ্বল, বাংলাদেশ কিষাণী সভার জেলার সভানেত্রী সাবিহা খাতুন, পৌরসভা সভানেত্রী রওশন আরা, শুক্লা রাণী, সুচিত্রা রাণী, হাজেরা বেগম, ছাত্র ঐক্য ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ রিদয় হোসেন, ছাত্রী নেত্রী কামরুনাহার, নয়ন তারা প্রমূখ।


১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ কর্তৃক ভারতবর্ষ দখলের পরপরই সারা ভারতে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ বিদ্রোহ সন্ন্যাস-ফকির বিদ্রোহ বলে খ্যত। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনেবেশিক শাসনের অবসান অবধি সারা ভারতে হাজার হাজার বিদ্রোহ–অভ্যূথান সংঘটিত হতে থাকে। ইতিহাসের এ দীর্ঘ পরিক্রমায় ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন দমি-নি-কোহ বা সাঁওতাল পরগণা হতে সাওতাল আদিবাসী নেতা সিধু-কানু-চাঁদ-ভৈরব এবং তাদের দুই বোন ফুলো মুর্মু ও ঝানু মুর্মুর নেতৃত্বে হাজার হাজার সাঁওতাল নিজেদের ব্রিটিশ থেকে স্বাধীন ঘোষণা করে হুল বা বিদ্রোহ করে। এ লড়াইয়ে সাঁওতালরা আধুনিক সমরাস্রে সজ্জিত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তাদের ঐতিয্যবাহী তির ধনুক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যুদ্ধে সাঁওতালরা প্রথমে জয়ী হলেও পরবর্তীতে ব্রিটিশবাহিনী হিংস্র দানবীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে রক্ত গঙ্গা বইয়ে দিয়ে বিদ্রোহ দমন করে। এতে নিহত হয় ৪ সাঁওতাল ভাই সিধু-কানু-চাঁদ-ভৈরবসহ পঁচিশ হাজার সাওতাল আদিবাসী বিদ্রোহী। ইতিহাসে তাই এটি সাঁওতাল বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এ সাঁওতাল বিদ্রোহ পরবর্তীতে হয় আরও অসংখ্য বিদ্রোহের অনুপ্রেণার উৎস। এমনকি ব্রিটিশ হতে ভারতের মুক্তি আন্দোলনের প্রতিটি পর্বেই সাঁওতাল বিদ্রোহ মানুষকে চেতনাউদ্দিপ্ত করেছে। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে সংগঠিত তেভাগা অভ্যূত্থান ও নাচোল বিদ্রোহ ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহেরই অনুরণন।

সাঁওতাল আদিয়াবসীরাই এ অঞ্চলের আদি অধিবাসি। বন-জঙ্গল কেটে বসবাসের উপযোগী ও ভুমি আবাদযোগ্য করে তোলে। নিজেদের উৎপাদিত ফসলে তাদের জীবন-জীবিকা চলত। ব্রিটিশ সৃষ্ট দালাল জমিদার মহাজন গোষ্ঠীর খপ্পরে পড়ে সাওতাল আদিবাসীরা সর্বস্বান্ত হয়। ফলে তারা ঋণের জালে আটকা পড়ে দাসানুদাসে পরিণত হয়।
এ বিশেষ পরিস্থিতিই তাদেরকে পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দ্রোহী করে।
ইতিহাসে এত বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের ঐতিহ্য থাকলেও সাঁওতাল আদিবাসীদের আজও আর্থ-সামাজিক অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় নি। আদিবাসীরা নিজ ভুমে পরবাসী। রাষ্ট্রীয়ভাবে ও সাংবিধানিকভাবে তাদের যথাযথ স্বীকৃতি নেই। নাগরিক অনেক সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। তাদের ভাষা সংস্কৃতি ও কৃষ্টি রক্ষায় কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেই। ভূমির উপর তাদের প্রথাগত অধিকার সংরক্ষিত হয় না। একশ্রেণীর জবরদখলকারী সাঁওতালদের জমি প্রতারণার মাধ্যমে দখল নিচ্ছে ও কোথাও কোথাও বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা দখলদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। অধিকন্তু তারা সামজিকভাবেও নানারকম অত্যাচার ও নিপীড়নের শিকার।
সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৭তম দিবসে নিম্নোক্ত দাবীসমুহঃ
১। আদাবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে;
২। আদিবাসীদের উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে;
৩। আদিবাসীদের ভাষা সংস্কৃতি ও কৃষ্টি রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
৪। আদাবাসীদের উপর হতে সকল অত্যাচার ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে;
৫। আদিবাসীদের জমির উপর প্রথাগত অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের স্বত্ব/মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে;
৬। বনবিভাগ কর্তৃক আদিবাসীদের জমি দখল বন্ধ করতে হবে;
৭। সমতলের আদিবাসীদের জমি সংক্রান্ত সকল সমস্যা সমাধানে আলাদা ভুমি কমিশন গঠন করতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button