sliderআন্তর্জাতিক সংবাদশিরোনাম

হার বা জিতে কিছু যায় আসে না

কাজল ঘোষ
আমি যখন ডেপুটি অ্যাটর্নি হিসেবে কাজ শুরু করি তখন নোট প্যাড নিয়ে তালিকা তৈরি করি করণীয় নিয়ে। এর মধ্যে যা চেয়েছি তার অনেক কিছু হয়েছে, আবার করতে হবে এমন কিছুও আছে। আমি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম সবগুলো বিষয় নিয়েই। আমার তালিকায় দেয়াল রঙ করাও ছিল। আমি বিষয়গুলোকে গুরুত্বসহকারে নিয়েছিলাম। আমি সবসময় বিশ্বাস করি কাজ যত ছোটই হোক তা করতে সমস্যা নেই। আমি জানি এটি হয়তো নগণ্য কিন্তু মানুষ বছরের পর বছর তার অফিসের দেয়ালগুলোই রঙ করেনি। ডিপার্টমেন্ট জুড়েই সকলের মধ্যে হতাশা পেয়ে বসেছিল আর এর প্রকাশ ছিল জীর্ণ দেয়ালগুলো।
কর্মচারীরা হতাশায় ডুবে গিয়েছিল। তারা মনে করছিল তাদেরকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না, তারা উৎসাহ হারাচ্ছে এবং হার মেনে যাচ্ছে। দেয়াল রঙ করার মধ্য দিয়ে তাদেরকে আমি এ বার্তা দিতে চেয়েছিলাম যে পরিবর্তন আসছে।
আমি একটি জরিপ করেছিলাম যে কীভাবে চাকরির পরিবেশ উন্নত করা যেতে পারে। সবচেয়ে বেশি যে অনুরোধটি পেয়েছি তা হলো একটি ফটোকপিয়ার। আমি আবিষ্কার করলাম যে, আইনজীবীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছে পুরনো মেশিনে কাগজের জট লেগে থাকার জন্য। সুতরাং আমি নতুন ফটোকপিয়ার ক্রয়ের ব্যবস্থা করি এবং এটি আসার পর আমরা যেভাবে তা উদ্‌যাপন করেছিলাম তা আপনাদের কল্পনারও বাইরে।
এটা খুবই সহজ বিষয়। কিন্তু বড় রকমের লক্ষ্য পূরণে এরকম পেশাগত সমস্যার সুরাহা ছিল খুবই প্রয়োজনীয়। আমি জানি ন্যায়বিচার নিশ্চিতে পেশাগত দিক থেকেই সেবা দেয়া ছিল দরকারি। আমি মানুষকে কাজের চূড়ান্তটাই দেখাতে চেয়েছি। আমি যখন ডেপুটি অ্যাটর্নি অফিসের নেতৃত্ব দিচ্ছিলাম তখন সেখানে একটি সেকেলে চর্চা ছিল এটি হচ্ছে কার্যালয়ের সকলের একে অন্যের পেছনে লেগে থাকা। আমি এটি পরিবর্তনের চেষ্টা করি এবং নিশ্চিত করি সকলেই একটি দল হিসেবে কাজ করবে। প্রতি সোমবার বিকালে আমি আইনজীবীদেরকে লাইব্রেরি রুমে আসতে বলতাম এবং গত এক সপ্তাহে তারা যে মামলাগুলো নিয়ে লড়েছেন সে বিষয়ে সকলকে তাদের সহকর্মীদের কাছে উপস্থাপন করতে বলতাম। যখনই কারও উপস্থাপনার সময় আসতো তাকে দাঁড়াতে হতো এবং তার মামলাগুলো নিয়ে কথা বলতে হতো। এতে তিনি উল্লেখ করতেন কীভাবে বাদীর পক্ষে লড়েছেন, বিচারকের প্রতিক্রিয়া কি ছিল, সাক্ষ্যরা কি বলেছিল। এসবই থাকতো আলোচনার বিষয়। সবশেষে আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতাম। ফলাফল যাই হোক না কেন হার বা জিতে কিছু যায় আসে না। এটি ছিল মূলত তাদের পেশাদারিত্বকে উৎসাহিত করা।
পেশাদারিত্ব হচ্ছে এমন একটি বিষয় যা প্রতিটি অফিসের মধ্যেই থাকা উচিত। এবং একই সঙ্গে মানুষ অফিসের বাইরে কীভাবে আচরণ করবে তাও নির্ধারণ করে। যখন আমি তরুণ আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দিতাম আমি তাদের বলতাম স্পষ্টভাবে জেনে রাখুন, আপনারা সমগ্র আইনজীবী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন। সুতরাং আমি আশা করবো মানুষের কাছে আপনারা নিজেদেরকে এমনভাবেই প্রকাশ করবেন যেন তারা আপনাদের দেখে আইনজীবীদের সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে পারে। আমি তাদেরকে সকল সম্প্রদায় সম্পর্কে জানতে বলতাম, আশেপাশের খবর রাখতে বলতাম, স্থানীয় উৎসবে যেতে বলতাম এবং সামাজিক নানা বিষয়ে আলোচনা করতে বলতাম। এবং এটা করতে বলতাম, সব মানুষের জন্য। সেন্ট ফ্রান্সিসকো ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির কার্যালয় একমাত্র অফিস ছিল না যেখানে অনিয়ম চলছিল এবং আমিই প্রথম ব্যক্তি ছিলাম না যেখানে সব অনিয়ম নিয়ে কথা বলছি। তবে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিস চালানো ছিল সত্যিকার অর্থে সান ফ্রান্সিসকোর ক্যাবল কার নিয়ন্ত্রণের চেয়েও কঠিন, মানুষের মনোবল বৃদ্ধির থেকেও কঠিন, বাজেট প্রণয়নের চেয়েও কঠিন। এর সঙ্গে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাও কঠিন ছিল। কারণ অ্যাটর্নির অফিসের অনিয়ম অবিচারের দিকে ঠেলে দেয়। প্রসিকিউটররাও মানুষ। যখন তাদের পরিবেশ ভালো থাকে তখন তারাও ভালোভাবে কাজ করতে পারে না। এর ফলে যে মানুষের জেলে যাওয়ার কথা সে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় আর যার রাস্তায় ঘুরে বেড়াবার কথা সে জেলে আটক থাকে। আইনজীবীদের এতোই ক্ষমতা।
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি
‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে।
সুত্র : মানবজমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button