
নাসির উদ্দিন, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ : বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বারসিকের আয়োজনে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলা লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের গঙ্গাধোদি গ্রামে সোমবার (১৩ নভেম্বর) দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মোঃ নান্নু পরামানিক এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন,মোয়ােজ্জম হোসেন, চেয়ারম্যান লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ।
বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন,সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার সবুজ।
সমতল প্লাবনভুমি কৃষি প্রতিবেশী অঞ্চলের অন্তর্ভক্ত মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলা একঝাঁক তরুণ জলবায়ু যোদ্ধা। এই অঞ্চলের মানুষের জন্য নানান প্রতিকূল পরিবেশ দুর্যোগ সামাজিক বৈষম্যর পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন আজ আমাদের জন্য একটি হুমকি তৈরি করছে। বাংলাদেশ বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে চরাঞ্চল। নদীবিধৌত এই দেশে প্রায় নদী ও উপকূলেই চর আছে। চরাঞ্চল দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য মৎস্য সহপ্রাকৃতিক সম্পদ ভরপুর চরাঞ্চল । চরের প্রকৃতি এবং লোকায়ত সংস্কৃতি বাংলাদেশের বিশ্বের পরিচয় কে গর্ভের সাথে বিশ্বের বুকে তুলে ধরে৷ চরাঞ্চল একসাথে দেশের বিভিন্ন পাখি এবং পরিযায়ী পাখিদের বিচরণস্থল। চরের কাশবনে ও ঘাসবনগুলি বহু বন্যপ্রাণীর শেষ আশ্রয়স্থল। বন্যা, ভাঙ্গন,কৃষিজমি বিনষ্ট, তীব্র তাপদাহ, মওসুমি খরা, অনাবৃষ্টি এরকম চরাঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাব বিষয়ে মনোযোগী ও তংপর হতে হবে।কেবল ধান নয় চরাঞ্চলে দানা জাতীয় নানা শস্য, পাট, মরিচ, মিষ্টিকুমড়া বাদাম সব নানা রবিশস্য ফলে। কিন্তু প্রতিনিয়ত চরাঞ্চলে নানা দুর্যোগ জলবায়ু গত সংকট বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সুরক্ষা বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলের জন্য সোচ্চার হচ্ছে মানুষ।
হরিরামপুর চরাঞ্চলে ‘চরাঞ্চল যুব জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩’ আয়োজন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বারসিক। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে চরাঞ্চলের সুরক্ষার চর এলাকায় নানা শ্রেণি-পেশা মানুষ বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিল গঠনের জন্য উক্ত সম্মেলনে বহুজন নিজেরদের দাবি ও সুপারিশ উপস্থাপন করেন।
চরাঞ্চল যুব জলবায়ু সম্মেলন ঘোষণা সমুহ:-
১. জলবায়ু পরিবর্তন জনি দুর্যোগ মোকাবেলা বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিল গঠন করতে হবে। চরাঞ্চলের জন্য একটি বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিল নিশ্চিত করতে হবে।
২. চরের জলবায়ু অভিযোগ ও প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষা করতে হবে এবং চরাঞ্চলের জলবায়ু উপযোগী কৃষিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
৩. চরের নদী ভাঙ্গন রোধ কার্যকর ভুমিকা গ্রহণ করতে হবে।
৪. চরাঞ্চলের যুব সমাজের জলবায়ু কর্মসূচি ও পরিকল্পনা যুক্ত করতে হবে।
৫. চরাঞ্চলের জলবায়ুজনিত ক্ষয় ক্ষতি নিরূপণ ও ক্ষতিপূরণে চরবাসীর সবার মতামত ও অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে।
৬. চরাঞ্চলে খাদ্যগুদাম শস্য প্রক্রিয়া জাত কেন্দ্রসহ কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হবে।
৬. নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে চরাঞ্চলের জন্য অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৭.গণমাধ্যমকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কর্মরত গ্রামীণ সমাজের দৃষ্টান্তমূলক কাজগুলোকে আরো বেশি প্রচার ও প্রকাশ করতে হবে। যুবদের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও পরিবেশ সুরক্ষার কাজকে আরো বেশি প্রচারের জন্য জলবায়ুবান্ধব গণমাধ্যম গড়ে তুলতে হবে।
জলবায়ু ঘোষণায় যুবকরা আরো বলেন, ‘আমরা তরুণ যুব সমাজ। আমরা বুঝতে পারছি এই পৃথিবীকে প্রতিদিন বিশে^র কিছু ধনী ক্ষমতাবান দূষিত ও সংকটাপন্ন করে তুলছে। আমরা এই পৃথিবীর দায়িত্ব কিছু মানুষের কাছে ছেড়ে দিতে পারি না। এই পৃথিবী আমাদের, আর একটাই মাত্র গ্রহ আমাদের। একে বাঁচাবার দায়-দায়িত্ব আমাদের। আমরা আর কোনো মিথ্যা অঙ্গীকার ও ভুয়া সমাধান শুনতে চাই না। আমরা এমন বহু বছর ধরে বহুকিছু শুনে এসেছি। আমরা বারবার সম্মেলন আর সংলাপের মাধ্যমে একই কথা আর সুন্দর সুন্দর অঙ্গীকার বিশ্বেনেতৃবৃন্দর কাছ থেকে শুনতে চাই না। আমরা বুঝতে পেরেছি সমাজ পরিবর্তনের কোনো যোগ্যতা তাদের নাই, তারা কেবল পৃথিবীটা মুনাফা আর লোভের কারণে মেরে ফেলতে চায়। তারা আমাদের শৈশব কেড়ে নিয়েছে। আমাদের খেলার মাঠ নাই, আমাদের নদী দূষিত, আমাদের খাবারে প্লাস্টিক, আমাদের বনভ’মি উজাড়, আমাদের বাতাসে সীসা। এর জন্য উন্নত ও ধনী দেশের ভোগবিলাসিতা দায়ী। আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই।’ তারা আরও বলেন, ‘জলবায়ু নয়, এই বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। দেশ থেকে দেশে আমরা যুবরাই ইতিহাস রচনা করেনি। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিশ^াস করি। আমরা জানি আজ আমরাই পরিবর্তন। আমরাই এই অবস্থার পরিবর্তন করবো। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমরাই আজ এক বৈশি^ক সংহতি জোরালো করবো।’
মানিকগঞ্জ জেলা হরিরামপুর উপজেলা চরাঞ্চল যুব জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩ এ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় শস্য ফসলের জাত, লোকায়ত চর্চাসহ বিভিন্ন ধরনের হস্ত ওকারু শিল্পের প্রদর্শনী করা হয়। উক্ত সম্মেলনে অংশগ্রহণকারিগণ এগুলো থেকে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
উল্লেখ্য বারসিক ২০১১ সাল থেকে মানিকগঞ্জ জেলায় হরিরামপুর উপজেলা দুর্যোগ মোকাবেলায় আউশ আমন জাতের ধান নিয়ে কৃষক পর্যায়ে প্রায়োগিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, বৈচিত্র্যময় ফসল চাষে কৃষকদের উদ্ধোদ্ধ করণ, আলোচনা সভা, অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর, স্থানীয়ভাবে বীজ সংরক্ষন কার্যক্রম, আউশ ধানের খাদ্য উৎসব স্থানীয় বীজ ব্যাংক তৈরি কৃষকের মধ্যে বীজ বিনিময় সহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করে আসছে।