নাসির উদ্দিন, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : চলতি মৌসুমে হরিরামপুর চরাঞ্চলে আউশধান চাষে কৃষককের সাফল্য হয়েছে। এ বছর চরে বন্যার পানি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকায় কৃষকরা তাদের আউশ কেটে ঘরে তুলতে পারছে। হরিরামপুর আজিমনগর ইউনিয়ন, এনায়েতপুর, শিকারপুর, রঘুনাথপুর এবং লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পাটগ্রাম নটাখোলা, চর, বালিয়াচর,গঙ্গাধরদি, হরিহরদিয়া সেলিমপরু, জয়পুর গ্রামে ব্যাপক পরাঙ্গি ও কালামানিক আউশ চাষ হয়েছে। হরিরামপুর কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে লেছড়াগঞ্জ সুতালড়ী ও আজিমনগর ইউনিয়নে ৭০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ হয়েছে। যা চরাঞ্চলের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় ভুমিকা রাখবে। হরিরামপুর চরাঞ্চলে বেশির ভাগ মাটির ধরন বেলে প্রকৃতির হওয়ার কারনে বোরো মৌসুমে ধান চাষ কম তার কারন হলো কৃষকদের উৎপাদন খরচ বেশি হয়ে যায়। তাই চরাঞ্চলের কৃষকরা রবি শশ্য, যেমন আউশ, ধান, আমনধান গম, পায়রা, সরিষা, মাস কালাই,মুসরি কালাই, ধনিয়া সজ, সবজি চাষ, তিল, কাউন চাষের মাধ্যমে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন ।
মানিকগঞ্জ তথা হরিরামপুর উপজেলা একটি বন্যা প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে প্রতি বছর এই এলাকার কৃষককের ফসল চাষাবাদের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই তাদের মোকাবেলার জন্য বৈচিত্র্যময় ফসল চাষের উদ্যোগ গ্রহন করতে হয়। তার বর্ষা মোৗসুমে আউশ ধানের চাষ তাদের অন্যতম একটি ফসল। প্রতি বছর বন্যার পানিতে আউশ আমন ধান সহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু এ বছর চলতি আউশ মৌসুমে বন্যার পানি দেরিতে আসার কারনে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আউশ ধান ভাল ভাবে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এবং বাজারে কৃষকরা নায্য মুল্যে বিক্রি করতে পারছে।
হরিরামপুর চরাঞ্চলের এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ খান বলেন, বিঘা প্রতি ১৪ থেকে ১৬ মণ পর্যন্ত আউশ ধানের ফলন হয়েছে।ফলে বাড়তি ফসল হিসেবে এ ধান চাষে ঝুঁকছেন তারা। মধ্যবর্তী সময় হওয়ায় গো-খাদ্য হিসেবে বাজারে প্রচুর চাহিদাও থাকে আউশ খড়ের।
নটাখোলা গ্রামের কৃষক এরশাদ আলী বলেন, গত বছর ২০২২ সালে বন্যার পানি বেশি হওয়ার কারনে কিছ’ আউশ ধান পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু মৌসুমে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে এ বছর বন্যার পানি একটু দেরিতে বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে বিশেষ করে চরাঞ্চলের সকল কৃষকই ভালভাবে ধান কেটে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছি। তিনি আরো বলেন, আমি ৫ বিঘা জমিতে আউশ ধান পরাঙ্গি ও কালামানিক জাত চাষ করেছিলাম। আমরা মোট খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা এবং ধান পেয়েছি ৩৫ মন যার বর্তমান বাজার বিক্রি মূল্য ৩৮ হাজার টাকা। নটাখোলা গ্রামের কৃষক সুফিয়া বেগম বলেন আমরা ৩ বিঘা জমিতে আউশ পরাঙ্গি ধান চাষ করে ২০ মন ধান পেয়েছি। আবার এই গ্রামের মোতালেক হোসেন ৪০ মন আউশ ধান পেয়েছে। দিন দিন চরে আউশ ধান চাষ বাড়তেছে।
লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের বালিয়াচর গ্রামের কৃষক শহিদ সেখ বলেন আউশধান চাষে আমাদের খরচ কম। আউশ ধান চাষে তেমন কোন রাসায়নিক সার বিষ প্রয়োজন হয় না। আউশের চাউল ভাত খেতে স্বাদ। আউশ ধান নিরাপদ খাদ্যর উৎস হিসেবে আমরা গ্রহন করি। আগামী বছর হরিরামপুর চরাঞ্চল সহ মানিকগঞ্জ জেলার কৃষক পর্যায়ে আউশ ধান চাষ সম্প্রাসারণ করতে চাই। যা আমাদের দুর্যোগকালীন সময়ে খাদ্য নিরাপত্তায় ভুমিকা রাখতে সহায়ক হবে।
বারসিক প্রোগ্রাম অফিসার মুকতার হোসেন বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও জমি যাতে পতিত না থাকে সে লক্ষ্য নিয়ে কৃষকদের আউশ চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আউশ চাষ বাড়লে এক ফসলি এসব জমি দুই ফসলের আওতায় আসবে।
বারসিক ২০১১ সাল থেকে মানিকগঞ্জ জেলায় দুর্যোগ মোকাবেলায় আউশ আমন জাতের ধান নিয়ে কৃষক পর্যায়ে প্রায়োগিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, বৈচিত্র্যময় ফসল চাষে কৃষকদের উদ্ধোদ্ধ করণ, আলোচনা সভা, অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর, স্থানীয়ভাবে বীজ সংরক্ষন কার্যক্রম, আউশ ধানের খাদ্য উৎসব স্থানীয় বীজ ব্যাংক তৈরি কৃষকের মধ্যে বীজ বিনিময় সহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করে আসছে।