
নাসির উদ্দিন, আজিমনগর প্রতিনিধি : হরিরামপুরের চরাঞ্চালে কৃষকগণ মাটির ধরন অনুযায়ী ফসলবৈচিত্র্য চাষ করে। দূর্যোগ মোকাবেলায় ফসল বৈচিত্র্য গুরুত্বপুণ। প্রতিটি বীজ কৃষকের প্রাণ। মাঠের ফসল বৈচিত্র্য কৃষকের শক্তি। মাটির আমাদের জীবন। মাটি সকল প্রাণকে বেঁচে থাকার রসদ যোগান দেয়। আমাদের শিক্ষা হোক মাটিকে ভালোবেসে খাদ্য তৈরি করা। প্রকৃতিকে নিরাপদ রাখতে বিষাক্ত রাসায়নিক নয়, আসুন জৈব চর্চা করি। প্রকৃতি থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে জীবন চলাকে সহজ করি। জৈব কৃষি চর্চা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, কৃষি ভিত্তিক অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে প্রাণ প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করি। কৃষিকে নিরাপদ করে সকলে ভালোভাবে প্রাণকে বেঁচে থাকার সুযোগ তৈরি করি। প্রাকৃতিক কৃষি জ্ঞান ও অভিজ্ঞাকে সহভাগিতা করে নিরাপদ খাদ্য তৈরি করি। স্থানীয় জাতের বীজ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও বিনিময়ের সহযোগিতা করি।
হরিরামপুর উপজেলার, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন এর বাহিরচর গ্রামে কৃষকগণ গুজিতিল চাষ করে জাতবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে মাঠ দিবস পালন করেন।
কৃষকগণ মাঠ দিবসে বিলুপ্ত প্রায় গুজিতিল বীজ বিনিময় ও চাষ উদ্যোগ গ্রহন করেন। স্থানীয় কৃষি বীজ বৈচিত্র্য চাষ বৃদ্ধিতে আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
গুচিতিল মাঠ দিবসে কৃষক গবেষক শহীদ বিশ্বাস বলেন, আমরা হারানো সম্পদ গুজিতিল বারসিক এর সহযোগিতায় ফিরিয়ে পেয়েছি। আমি বলব টিয়া পাখির খাবার গুজিতিল আবার ফিরে এসেছে। টিয়া পাখি গুজিতিল খুব ভালো খায়। দেশে টিয়া পাখির খাবার গুজিতিল, কামরাঙ্গা কম। টিয়া পাখিও চোখে পড়ে কম। গুজিতিল চাষের মাধ্যমে আমাদের দেশে পাখি সহ প্রাণবৈচিত্র্য বাঁচিয়ে রাখতে পারি। এলাকায় নতুন করে গুজিতিল চাষ করতে পেরে কৃষি বীজবৈচিত্র্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গুজিতিল চাষে কোন খরচ লাগে না। গুজিতিল সবমাটিতেই হয়। তবে যেখানে অন্যকোন ফসল হয় না, নদীর তীরে, সেখানা গুজিতিল ভাল হয়।
গুজিতিল চাষে জমির আগাছা বাছাই করা লাগে না। পোকার আক্রমন করে না। গুজি তিল চাষে খরচ খুবই কম। গুজিতিলে মৌমাছি পরাগায়ন করে বেশী। আবার জমির আইলে গুজিতিল বেড়া হিসাবে কাজ করে। কারণ ছাগল গরু খায় না। চকে গুজিতিল চাষ ভাল হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে চাষ উদ্যোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাহিরচর কৃষক ইয়াসমিন বেগম বলেন আগে নদীর তীরে গুজিতিল হতো। বর্ষার পানি গেলে মাটিতে গুজিতিলের বীজ ছিটিয়ে দিতাম। কোনো যত্ন নাই, এমনেই হতো। তবে শীতে ফুল ফুটার সময় খুব সুন্দর দেখায়। ফলে উপকারী মৌমাছি বসে পরাগায়নে সহায়ক হয়। গুজিতিলে পোকা লাগে না, সার বিষ লাগে না। ফলে কোনো খরচ ছাড়া, যে কোনো তিলে চেয়ে গুজি তিলের ফলন বেশী হয়। কোনো খরচ ছাড়া আমাদের পরিবারের খাবার তেল হতো। তবে আমরা শরিষা ও গুজিতিল বা তিল মিশিয়ে ভাঙ্গাই। তাতে খাবার তেল খুব ভালো হয়। তাতে পুষ্টি ও স্বাদ বেশী হয়। ফাল্গুন চৈত্র মাসে গুজিতিল কেটে নিয়ে আসতাম। ৩৩ শতাংশ জমিতে প্রায় ৬ মন গুজিতিল হয়। গুজিতিলের গাছ খড়ি হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
আমাদের এলাকা থেকে গুজিতিল হারিয়ে গেলে বারসিক সহযোগিতায় এই গুজিতিলের বীজ পাওয়ায় আমাদের খুবই উপকার হলো। কারণ নদীর তীরে যেখানে অন্য কোন ফসল হয় না সেখানে গুজিতিল ভাল হয়। গুজিতিল পতিত জায়গায় চাষাবাদে সহায়ক হবে। গুজিতিলের বীজ অন্যান্য কৃষকগণ নেয়ার আগ্রহ করছে। এ বীজ আমাদের কাছ থেকে আর হরাবে না। কৃষক পর্যায়ে বীজ বিনিময় ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রয়োজন অনুযায়ী সংরক্ষণ করতে পারব।