পতাকা ডেস্ক: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার একদিন পর সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদে বড় রদবদল করা হয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার একদিন পর সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদে বড় রদবদল করা হয়। এর অংশ হিসেবে গত ৬ আগস্ট এক বিজ্ঞপ্তিতে মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছিল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
এদিকে শুক্রবার সকালে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পাঠানো খুদে বার্তায় নিউমার্কেট থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করার কথা জানানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তাকে ওই থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (গোয়েন্দা) থাকাবস্থায় জিয়াউল আহসান বহুল পরিচিত ছিলেন। ওই সময় কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। এ ছাড়া চাকরিচ্যুতের আগ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে তাকে ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে। বিকালে তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ব্রিফ করা হবে।
অসংখ্য গুম-খুনের হোতা ছিলেন জিয়াউল আহসান
রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ছিলেন অসংখ্য গুম-খুনের নায়ক। ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অসংখ্য গুমের ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা। ওই ৪ বছর তার ইশারায় চলত পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র্যাব। ওই সময়ে তিনি কখনো র্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ে প্রধান এবং অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এই দীর্ঘ সময়ে অসংখ্য গুম এবং খুনের ঘটনার নেপথ্য নায়ক ছিলেন জিয়াউল আহসান। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত ৭ মার্ডারের সঙ্গেও তার হাত ছিল। কিন্তু নিজের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে এবং তৎকালীন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইদের ওপর সব দায় চাপিয়ে তিনি পার পেয়ে যান। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ থেকে ব্যবসায়ী আবু বক্কর সিদ্দিককে অপহরণের ঘটনার সঙ্গেও তার হাত ছিল। র্যাবের যে টিম নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারে জড়িত ছিল তারাই গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আবু বক্কর সিদ্দিককে অপহরণ করেছিল। এক পর্যায়ে বিভিন্ন মহলের চাপে শেষ পর্যন্ত তাকে মধ্যরাতে মিরপুর এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়। পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে ধানমন্ডি থানায় নিয়ে যায়।
সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌধুরী আলমের গুমের ঘটনার সঙ্গে জিয়াউল আহসানের হাত ছিল বলে সেসময় সাংবাদিকদের কাছে খবর আসে। চৌধুরী আলম মারা গেছেন নাকি বেঁচে আছেন তা এখন পর্যন্ত খোলসা হয়নি। এমনকি বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী গুমের ঘটনার সঙ্গে জিয়াউল আহসানের হাত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া এনটিএমসির প্রধান হওয়ার পর জিয়াউল আহসান বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের ফোনে আড়ি পাততেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতেন। এনটিএমসিতে ল-ফুল ইন্টারসেপশন যন্ত্রপাতি কেনাকাটাতে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে।
এনটিএমসির হাজার কোটি টাকার কেনাকাটায় ২০১৭ সালে ব্রিগেডিয়ার জিয়াউল আহসান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের পিএস হারুন অর রশীদ বিশ্বাস সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাজার কোটি টাকার এই কেনাকাটায় প্রশ্ন তোলায় এবং বাঁধা দেওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব ও বর্তমানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিনকে হেনস্তা করেন তারা। এমনকি স্বরাষ্ট্র সচিব হওয়ার কয়েক মাসের মাথায় তাকে সরিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে বদলি করা হয়। পরে এই সিন্ডিকেট তাদের আজ্ঞাবহ একজন কর্মকর্তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বানান। এরপর এনটিএমসির হাজার কোটি টাকার কেনাকাটা করে ব্যাপক লুটপাট চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।