sliderস্থানীয়

হত্যা মামলার বাদি ও স্বাক্ষীকে নাশকতা মামলায় আসামী করে হয়রানির অভিযোগ

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানায় বিএনপির নাশকতা মামলায় পার্শ্ববর্তী সিংগাইর উপজেলার জামশা ইউনিয়নের ছোট বরুন্ডি গ্রামে পুত্রবধু ও তার পরকীয়া প্রেমিকের হাতে খুন হওয়া তহুরা বেগম (৫৫) হত্যা মামলার বাদি নিহতের ছোট ভাই মামুন হোসেন ও স্বাক্ষী একই গ্রামের চায়ের দোকানদার বোরহান মোল্লাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আসামী করে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

তুহুরা বেগম হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ২নং আসামি লালমুদ্দিন ও নাশকতা মামলার বাদি বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু । দুই বন্ধুর যোগসাজসে হত্যা মামলাকে বাঁধাগ্রস্ত করতে বাদি ও স্বাক্ষীকে নাশকতা মামলার আসামী করা হয়েছে বলে নিহত তহুরা বেগম হত্যা মামলার বাদী ও সাক্ষীর পরিবারসহ একাধিক এলাকাবাসীও অভিযোগ করেন।

জানা যায়, আওয়ামী শাসনামলে ২০২২ সালের ৩০ মে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকীতে জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতার বাস ভবনে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ হামলা চালায়। এ ঘটনায় গত ২৯ অক্টোবর আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ৮৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন দুলাল হরিরামপুর থানায় একটি মামলা করেন । আর এতে উদ্দেশ্যেমুলকভাবে আসামি করা হয়েছে সিংগাইরের তহুরা বেগম হত্যা মামলার বাদি প্রবাসী মামুন ও রাজ স্বাক্ষী চায়ের দোকানদার বোরহান মোল্লাকে।

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৩ অক্টোবর পারিবারিকভাবে নিহত তহুরা বেগম ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী রাসেল বিশ্বাসের সাথে বিয়ে হয় আইরিন আক্তারের। এরপর চলতি বছরের ২ জানুয়ারি আইরিন আক্তারের স্বামী রাসেল বিশ্বাস আবার বিদেশ চলে যায়। এরপর ১০জানুয়ারি রাতে পরকীয়া প্রেমিক ঝিটকা খাজা রহমত আলী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক লালমুদ্দিন আইরিন আক্তারের সাথে দেখা করতে বরুন্ডি গ্রামে আইরিন আক্তারের শ্বশুর বাড়ি যান। তাদের প্রেম লীলার বিষয়টি শ্বাশুড়ি টের পেলে আইরনি আক্তার ও তার প্রেমিক লালমুদ্দিন ছুরি দিয়ে তহুরা বেগমকে হত্যা করে। হত্যার পর লালমদ্দিন পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও আটক হয় গৃহবধু আইরিন আক্তার। এরপর নিহত তহুরা বেগমের ভাই প্রবাসী মো. মামুন হোসেন সিংগাইর থানায় ওই দিনই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় এক নম্বর আসামী করা হয় গৃহবধু হরিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের আলগীরচর গ্রামের আইরিন আক্তার এবং২ নম্বর আসামী করা হয় একই উপজেলার চালা ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের মৃত মহিউদ্দিনের ছেলে প্রভাষক লালমুদ্দিনকে। এরপর দুজনই আটক হলেও মাসখানেক পর হাইকোর্ট থেকে ছয়মাসের জামিনে আসেন। এদিকে গত জুন মাসে এজাহারভুক্ত দুজনকেই অভিযুক্ত করে মামলার চার্জশিট দেয় থানা পুলিশ। ওই মামলা প্রধান স্বাক্ষী করা হয় সিংগাইরের জামশা ইউনিয়নের গোলাইডাঙ্গা খেয়া ঘাটের চায়ের দোকানদার ছোট বরুণ্ডি গ্রামের বোরহান মোল্লাকে (৬৫)।

জামশা ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক বাদল জানান, মামলা হওয়ার আগে মামুন এবং বোরহানকে আসামী করার বিষয়ে হরিরামপুর থেকে আমাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করেনি। মূলত মামুনের বোনের হত্যার সাথে জড়িত লালমদ্দিন নামের ওই ব্যক্তিই চক্রান্ত করে হরিরামপুর থেকে আসামী করেছে। আসামী দেয়ার দরকার হলে তো সিংগাইরে যে মামলা হয়েছে, আমরা এখানেই দিতে পারতাম। এখানে খুনের মামলার প্রতিহিংসায় এ কাজ করা হয়েছে।
মাটিকাটা গ্রামের খালেক দেওয়ান জানান, মামুন খুব নিরীহ ও ভদ্র একটা পোলা। সে ছোটবেলা থেকেই বিদেশে থাকে। এলাকায় কখনও সে রাজনীতি তো করেই নাই, তার সুযোগও পাই নাই। তুহুরা হত্যা মামলার আসামি লালমুদ্দিন চক্রান্ত করে মামুনের নাম দিয়েছে।
মাটিকাটা বাজারের মুদি দোকানদার রহমত জানান, মামুনের নাম কখনই নাশকতা মামলার আসামী হতে পারে না। অনেক বছর ধরে মামুন বিদেশে। আবার শুনলাম চায়ের দোকানদার বোরহানকে আসামী করা হয়েছে। সে হলো বয়স্ক মানুষ। চা, সিংগারা আর পুরি বিক্রি করে। মামুনের বোনের হত্যা মামলার স্বাক্ষী সে। এ জন্যই তাকেও এই মামলায় আসামী করা হয়েছে।

হত্যা মামলার বাদি মামুনের স্ত্রী ইতি আক্তার অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামীর বোনের হত্যা মামলার আসামী লালমদ্দিনের ষড়যন্ত্রেই এই মামলায় আমার স্বামীকে আসামী করেছে।
স্বাক্ষী বোরহানের স্ত্রী জানান, মামুনের বোনের হত্যা মামলার স্বাক্ষী হওয়ায় আমার স্বামীকে আসামী করা হয়েছে। মিথ্যা মামলার কারণে সে চায়ের দোকান বন্ধ রেখে বাড়ি ছাড়া।

মামলার বাদি দেলোয়ার হোসেন দুলাল জানান,স্থানীয় নেত্রীবৃন্দের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই মামলার আসামি করা হয়েছে। তারপরও ভাত খেতে গেলে দুই একটা পরতে পারে। এদিকে প্রভাষক লালমুদ্দিনের সঙ্গে যোগসাজশ্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি আরো বলেন – আসামি মামুন হোসেন ও বোরহান মোল্লার ব্যাপারে থানা পুলিশ তদন্ত করে যে ব্যবস্থা নেয়ার সেটা নিবে। এতে আমার সমস্যা নাই।

এ ব্যাপারে হরিরামপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মুমিন খান জানান, নিরপরাধ কেউ আসামি হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button