জাতীয়শিরোনাম

সড়কদ্বীপে বিআরবি কেবলের দখলদারিত্ব ঠেকাতে সাইন্সল্যাবে গুণিজন সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি : রাজধানীর সাইন্সল্যাব মোড়ে সবুজ গাছপালা ঘেরা সড়কদ্বীপটি (প্রাকৃতিক অর্ঘ্য) বহুলালোচিত ভূমিখেকো কুষ্টিয়ার বিআরবি কেবলের কাছে দখল হয়ে পড়ছে জানিয়ে এটি মুক্ত করতে বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে দেশের গুণিজনরা। সড়ক দ্বীপটি দখল মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
বুধবার (৩ জুলাই) সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত ধানমন্ডির গ্রিন রোড সংলগ্ন সাইন্সল্যাবটরি মোড়ে কুষ্টিয়ার আলোচিত শিল্প গ্রুপ বিআরবি’র নিকট বেদখল হওয়া সড়কদ্বীপের সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে দাবি আদায়ে বিশাল এ গুণিজন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজিত সমাবেশে অংশ নেয়, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), গ্রিণভয়েস, ডাব্লিউবিবিট্রাষ্ট, হেরিটেজ ক্রিয়েটিভ কাউন্সিল, ব্লু প্ল্যানেট ইনিশিয়েটিভ, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ-স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রতিসৃষ্টি এবং নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘যদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস হয়ে যায়, আমরা যে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশের প্রত্যাশা করছি সেটি হবে না। আমরা জঞ্জালতায় ভরা মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ চাই না। চাই স্বস্তির মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ। তাই শহরের সবুজায়ন রক্ষায় নাগরিক সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। ভূমিখেকো-দখলদারদের ঠেকাতে সাহস করে প্রতিবাদও করতে হবে। ’
সমাবেশে গুণিজনরা বলেন, এই নগরের পরিবেশকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা ও শহরটিকে ন্যূনতম বাসযোগ্য করার লক্ষ্যে সিটি করপোরেশন, বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে ঢাকায় গত দুই দশকে কিছু সড়ক বিভাজক, সড়ক সংযোগ ও সড়কের দু’পাশের পরিকল্পিত বৃক্ষশোভিত এবং সবুজায়নযুক্ত সড়কদ্বীপ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এসবের অনেকগুলোই এখন নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তাঁরা আরও অভিযোগ করে বলেন, সাইন্সল্যাব মোড়ের এ দ্বীপটিতেই এখন কুনজর পড়েছে ভূমি আগ্রাসী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বিআরবি কেবলের চেয়ারম্যান মজিবর রহমানের। প্রভাবশালী ওই মহল ব্যবসায়িক স্বার্থে নিসর্গ শোভিত সবুজ সড়কদ্বীপটির সৌন্দর্য বিনষ্টে গভীর চক্রান্তে সক্রিয় রয়েছেন। তারা এ এলাকার একমাত্র পেট্রোল পাম্পটি (সড়কদ্বীপ সংলগ্ন) দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে, যা এ এলাকার সব কিছুর জন্যই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও নিরাপত্তার হুমকি স্বরূপ। তারা পার্কসমৃদ্ধ সড়কদ্বীপটি ধ্বংস করে হাসপাতাল কিংবা বহুতল পার্কিং নির্মাণেরও চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের এ অপচেষ্টা সফল হলে এলাকার মানুষের সামান্য স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার এ পার্কটিও ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই এটিকে রক্ষা করতে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
সমাবেশে বক্তৃতা করেন, বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির অব বাংলাদেশের উপচার্য ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহম্মেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দ্র মজুমদার, নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ, সাবেক সচিব ও গীতিকবি ভূঁইয়া শফিকুল ইসলাম, প্রকৃতি ও নগর সৌন্দর্যবিদ রাফেয়া আবেদিন, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ইবনুল সাঈদ রানা প্রমুখ।
এ সময় সড়কদ্বীপটি রক্ষায় ৪টি দাবি জানান গুণিজনরা। দাবি গুলো হলো, ১.সৌন্দর্যমণ্ডিত প্রাকৃতিক পার্ক অর্ঘ্য সড়কদ্বীপের লিজ বাতিল করতে হবে। এটিকে কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে লিজ দেওয়া যাবে না। ২. সড়কদ্বীপ বিনষ্ট বা ধ্বংস করে ভিন্ন কোনো স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে। ৩. বাসা-বাড়ি, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিজ্ঞান গবেষণাগার সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যমান তেল-গ্যাসের পাম্প বন্ধ করে যে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে সেটি বন্ধ করতে হবে এবং জন-নিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ সকল স্থাপনা অপসারণ করতে হবে। ৪. নির্মানাধীন ১৮ তলা ভবনের নকশা বাতিল করে ওই জায়গায় ধানমন্ডির স্মৃতিবিজড়িত পাম্প স্টেশন বহাল রাখতে হবে।
গুণিজন সমাবেশ শেষে সড়কদ্বীপটির সামনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশু-কিশোরদের সমন্বয়ে সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে নগরে সবুজায়নের কুফল-সুফল তুলে ধরে এরপর সংগীত পরিবেশন করে শিশু-কিশোররা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button