শফিকুল ইসলাম সুমন, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের সিংগাইরে সিংগাপুর প্রবাসী উজ্জল মিয়া (৩০) হত্যার রহস্য উনম্মোচন করলো পুলিশ। হত্যার সাথে স্ত্রী ও আপন ছোট ভাই সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর)দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোঃ বশির আহমেদ।
জানা গেছে, স্ত্রী ও ভাইয়ের পরকিয়ার জের ধরে নিহত উজ্জল মিয়া নিখোঁজের ১৮ দিন পর সিংগাইর থানা পুলিশ ধলেশ্বরী নদীর কচুরিপানার মধ্যে মাটিভর্তি
প্লাস্টিকের ড্রামের সাথে রশি দিয়ে বাঁধা গলিত লাশ ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত
আলামত উদ্ধারসহ ০৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো.বশির আহমেদ বলেন,সিংগাইর উপজেলার প্রবাসী উজ্জল মিয়া(৩০) বিদেশ থেকে বাড়ীতে আসার ৯ দিন পর গত ১২ অক্টোবর দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বাড়ী হতে নিখোঁজ হয়। নিখোজেঁর ১৮ দিন পর গত ৩০ অক্টোবর দুপুরে তালেবপুর ইউনিয়নের কাংশা ব্রীজের পশ্চিম পাশে ধলেশ্বরী নদীর দক্ষিণ পাশে মোহাম্মদ আলীর আবাদি জমি সংলগ্ন নদীতে পানিশূন্য কচুরিপানার মধ্যে মাটিভর্তি প্লাস্টিকের ড্রামের সাথে লাইলনের রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়, হত্যা মামলা রুজু হওয়ার পর মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ও (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মোঃ বশির আহমেদের দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ আব্দুল ওয়ারেস তত্ত্বাবধানে ও অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বিপিএমের নেতৃত্বে একটি টিম ৬ নভেম্বর উত্তর কাংশা গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে এই ক্লুলেস হত্যা মামলার হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ডিসিস্ট উজ্জল মিয়ার আপন ছোট ভাই আসামী মোঃ ঝন্টু (২৪),ডিজিস্ট এর স্ত্রী আসামী মোসাঃ কাঞ্চন ওরফে মনিরা(২৩), ও মাসুদ(২২)কে গ্রেফতার করে। এসময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি হালকা গোলাপী রংয়ের ওড়না, একটি হালকা বেগুনী রংয়ের প্রিন্টের সুতি ওড়না,একগোছা নাইলনের চিকন রশি, একটি চায়র কাপ, নগদ বাংলাদেশী ৮ হাজার ৫শত-টাকা, একটি হাসুয়া, একটি গামছা উদ্ধার উদ্ধার পূর্বক জব্দ তালিকা মূলে জব্দ করেন।
উল্লেখিত আসামীদের গ্রেফতার পরবর্তীতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে, আসামী মোঃ ঝন্টু ও কাঞ্চনা ওরফে মনিরা সম্পর্কে দেবর-ভাবী। আসামী ঝন্টু ও তার আপন বড় ভাই ডিসিস্ট উজ্জল মিয়া উভয়েই সিংগাপুর প্রবাসে থাকাকালে আসামী ঝন্টু মোবাইল ফোনে তার ভাবী আসামী কাঞ্চন ওরফে মনিরার সাথে কথা বার্তা বলার একপর্যায়ে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। পরকিয়া সম্পর্কের জের ধরে ঝন্টু তার ভাইকে সিংগাপুরে রেখে বাড়ীতে চলে এসে তার ভাবী কাঞ্চন ওরফে মনিরার সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত থাকে। ঘটনার ০৯ দিন পূর্বে আসামী ঝন্টুর ভাই সিংগাপুর হতে বাড়ীতে আসলে ঝন্টু ও কাঞ্চন ওরফে মনিরার অবৈধ পরকিয়ায় বিঘ্ন ঘটতে থাকে। যার প্রেক্ষিতে উল্লেখিত আসামীরা পরষ্পর যোগসাজশে ডিজিস্ট উজ্জল মিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পূর্ব-পরিকল্পনা মাফিক ১২ অক্টোবর দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ১১ টার দিকে আসামী কাঞ্চন ওরফে মনিরা কফির সাথে তার স্বামীকে ঘুমের ঔষধ সেবন করিয়ে অচেতন করে।
আসামী ঝন্টু তার বন্ধু আসামী মাসুদকে ইমুতে কল করে বাড়ীতে ডাকে। মাসুদ আসার পর তিনজনে মিলে ডিসিস্ট উজ্জল মিয়াকে অচেতন অবস্থায় গলায় গামছা প্যাচাইয়া শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে। তৎপরবর্তীতে আসামীরা লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে উজ্জল মিয়ার মৃতদেহ বাঁশের সাথে বেঁধে ঘটনাস্থল ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। অতঃপর, আসামী মাসুদ তার বাড়ী হতে নীল রংয়ের প্লাস্টিকের ড্রাম ও ধারালো হাসুয়া নিয়ে নদীর পাড়ে এসে ড্রামে কাদা মাটি ভরে ড্রামের সাথে রশি দিয়ে উজ্জল মিয়ার মৃতদেহ বেঁধে লাশ নৌকায় উঠিয়ে নদীর দক্ষিণ পাশে নিয়ে হাসুয়া দিয়ে লাশের বুক চিড়ে লাশ নদীর পানিতে ডুবিয়ে গুম করে। এ ঘটনায় আগামীকাল আসামিদের আদালতে তোলা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আব্দুল ওয়ারেস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন সরকার, সিংগাইর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান, সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।