স্কুলের পুকুর খননের নামে আওয়ামী লীগ নেতার কোটি টাকার মাটি বিক্রি

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গড়পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বিতর্কিত চেয়ারম্যান আফসার সরকারের বিরুদ্ধে এবার একটি বিদ্যালয়ের পুকুর সংস্কারের নামে মাটি বিক্রি করে কোটি টাকার উপরে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সদর উপজেলার ঘোনা গড়পাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত আফসার ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে স্কুলের প্রায় ৪শ’ শতাংশ জায়গার ওপর পুকুর থেকে মাটি বিক্রি করার অভিযোগে ইতিমধ্যে আফসারসহ ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।
তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ ম্যানেজিং কমিটির বেশির ভাগ সদস্য মাটি বিক্রির দায় নিজেদের কাঁধে না নিয়ে উল্টো আফসার সরকারের বিরুদ্ধে একক আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ এনেছেন। বিষয়টির সত্যতা পেয়েছে মানবজমিন। অভিযোগ রয়েছে, এখানে ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য আব্দুস সালাম ছাড়া বাকি সদস্য এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের মতামতের কোনো তোয়াক্কা করেননি আফসার সরকার। প্রায় দেড় কোটি টাকার উপরে মাটি বিক্রি করলেও বিদ্যালয়ের ফান্ডে ১ টাকাও জমা দেননি।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সাইদা আখতার মানবজমিনকে বলেন, বিদ্যালয়ের পুকুর সংস্কারের বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আফসার আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা করেননি। কোনো প্রকল্পের কাজ করতে গেলে আগে একটি কমিটি করতে হয়। রেজ্যুলেশন করতে হয়। কিন্তু এখানে কিছুই করা হয়নি। আমি বলার পর কোনো কর্ণপাতও সে করেনি। তার অপকর্মের দায় আমরা নেবো না। তিনি বলেন, পুকুর খননের নামে বিক্রি করা কোনো টাকা স্কুল ফান্ডে তারা দেয়নি। আসলে ওনারা বড় মানুষ। মন্ত্রী-এমপি’র লোক। তাদের কাছে আমরা খুদে মানুষ। তারা ইচ্ছা করলে ডিসি ও এসপিকেও বদলি করতে পারে, আবার আনতে পারেন। এদিকে অভিযোগপত্রের প্রথম স্বাক্ষরকারী এসএম মন্টু বলেন, চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে পুকুরটি খনন শুরু হয়। এলাকাবাসী সহ আমরা ভেবেছিলাম প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়া পুকুর এবং পার মেরামত করার জন্য খনন করা হচ্ছে। কিন্তু পরে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। দিনে রাতে ভেকু লাগিয়ে খনন করে পুকুরের মাটি ট্রাকে করে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। প্রতি ট্রাক মাটি বিক্রি করা হয়েছে কম করে হলেও ১০০০ টাকা দরে। এ হিসেবে প্রায় দেড় কোটি টাকার মাটি বিক্রি করা হয়েছে। অথচ এই টাকা স্কুল কমিটির ফান্ডে জমা পড়েনি।
অভিযোগ রয়েছে, পুকুরটি প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ টাকা দিয়ে মৎস্যজীবীদের ইজারা দেয়া হতো। কিন্তু আফসার সভাপতি হওয়ার পর থেকে অর্ধেক টাকাও স্কুলের ফান্ডে জমা দিতেন না। এ ছাড়াও গত দুই বছর কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় স্কুলের নামে বরাদ্দকৃত পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেছেন। তিনি পলাতক থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন ডালি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।