সৌদি-কাতার বিরোধের নেপথ্যে সন্ত্রাসবাদ নয়, তরল গ্যাস
সৌদি আরব ও কাতারের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত আসলে ১৯৯৫ সালে। সে সময়ই তরল গ্যাস (এলএনজি) উত্তোলনের ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করে কাতার। এই এলএনজি গ্যাস উত্তোলন দোহাকে রিয়াদ থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এভাবেই সৌদি আরবের অন্যতম প্রধান শত্রুরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ঘটে কাতারের।
এনএলজি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে কাতার দ্রুততার সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে ধনি রাষ্ট্রগুলোর একটিতে পরিনত হয়। দেশটির নাগরিকদের বার্ষিক মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার। সময়ের ব্যবধানে কাতার পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি তরল গ্যাস (এনএলজি) রপ্তানীকারক দেশে পরিণত হয়। দেশটির সমুদ্র তীরবর্তী উত্তরাঞ্চলের গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলিত গ্যাস দিয়েই আভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে আবার ইরানেও রপ্তানী করা হয়। এছাড়াও দেশটি ২.৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে রাশিয়ার প্রধান তেল কোম্পনি রোজনেফট’র শেয়ার কিনেছে।
ব্লুমবার্গ’কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে যুক্তরাষ্ট্রের হিউজস্টনের রাইস ইউনিভার্সিটির এনার্জি রিসার্চ ফেলো জিম ক্রেন বলেন, ‘একসময় কাতার সৌদি আরবের নিয়ন্ত্রাধীন ছিলো, কিন্তু তরল গ্যাস দেশটিকে স্বকীয়তা প্রদান করেছে।’
ক্রেন আরও বলেন, ‘ওই অঞ্চলের বাকী দেশগুলো তাই কাতারের ডানা কেটে ফেলার ছুঁতো খুঁজে বেড়ায়।’
গত সোমবার সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন সহ আরও দু’একটি দেশ কাতারের সঙ্গে সব ধরণের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। আর ওই সম্পর্ক ছিন্নের অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো হয় সন্ত্রাসবাদে সমর্থন ও অর্থায়নের প্রসঙ্গটি।
তরল গ্যাসের সম্পদ সৌদি আরব থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনভাবে বৈদেশিক নীতি নির্ধারণে সহায়তা করে কাতারকে। কিন্তু এই স্বাধীনতাকে মানতে না পেরে সৌদি আরব কাতারকে মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড, গাজা উপত্যকার হামাস এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সহায়তা দানে দোষী সাব্যস্থ করে।
এছাড়াও সৌদি আরব এবং অন্যান্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হুট করেই তরল গ্যাসের প্রয়োজন বেড়ে যায়। কিন্তু সর্বনিম্ন মূল্যে কাতার যেখানে তরল গ্যাস রপ্তানী করে সৌদি আরবকে সেখানে উচ্চমূল্যে গ্যাস আমদানী করতে হয়।
কাতার ইউনিভার্সিটির গবেষক স্টিভেন রাইট ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘প্রশ্ন উঠতে পারে, কাতার কেন তার প্রদিবেশী রাষ্ট্রগুলোর গ্যাসের চাহিদা সত্ত্বেও গ্যাস রপ্তানী করছেনা? জানা মতে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো আসলে মূল্যহৃাসে ওই গ্যাস কাতার থেকে সংগ্রহ করতে চায়।’