sliderজাতীয়শিরোনাম

সুস্থ ধারার রাজনৈতিক সংগ্রামের জীবন্ত কিংবদন্তী বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম খান কামাল

মো.নজরুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ :মানিকগঞ্জ অঞ্চলের তথা জাতীয় রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের একজন জীবন্ত কিংবদন্তি বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম খান কামাল এখনো সবার থেকে ভিন্ন। তিনি আজীবন বিপ্লবী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারনও লালন করেন। তিনি জীবনের শেষপ্রান্তে এসেও মনে তারুণ্য নিয়ে সন্ত্রাস,চাঁদাবাজি,মাদক,ঘুষ,দুর্নীতি ও কালো টাকা নির্ভর লুটপাটের রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন।

মাঝেমধ্যে সময় হলেই গল্পের ছলে তার সাথে একান্তই অনেক না বলা কথা হয়। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে উঠে আসে পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা বিষয়ের অসংগতি ও সম্ভাবনার কথা। তার মানিকগঞ্জের বাসভবনে গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ নানা বিষয় নিয়ে আলাপনের ফাঁকে আমি তাকে জানার চেষ্ট করি। তারই অংশবিশেষ এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি-
বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম খান কামাল মানিকগঞ্জ সাটুরিয়া উপজেলার ধলেশ^রী নদীর তীরে অবস্থিত বরাইদ গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খান পরিবারে ৪ অক্টোবর ১৯৪২ সালে নিজ বাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। ছোটবেলা থেকেই তার ডানপিটে ও খেলার সাথীদের নিয়ে দল গঠনের দক্ষতায় সকলকেই অবাক করেন। তিনি খেলার সাথীদের নিয়ে শৈশবেই অবলোপন করেছেন ধলেশ^রী নদীর উত্তাল যৌবন। তাদের পাঁচ একর জায়গা জুড়ে বিশাল বাড়ির কৃষি খামারের মালামাল নৌপথে আনানেয়া ও হাটঘাটের দৃশ্যও মনে আছে। ঘাটে বাঁধা থাকত অসংখ্য নৌকা ও মাঠে ছিল ঘোড়া। তখন নৌকা ও ঘোড়াই ছিল পরিবহনের অন্যতম বাহন।

তিনি বনেদি পরিবারের সন্তান হয়েও ছোটবেলা থেকেই সাধারন জীবন যাপন করতেন। বাড়ির পাশেই ১৯২৩ সালে তার বাবার প্রতিষ্ঠিত বরাইদ (দক্ষিণ) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবনের হাতে খড়ি শুরু করেন। বৃটিশ আমলে তৎতকালীন চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার স্তর এখানেই সমাপ্ত করেন। তিনি প্রাথমিক স্তরে তার সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে অহিদুল ইসলাম খান মজলিস, মো. কনক মিয়া,পারুল খান, রেনু বালা সাহা,মদন সরকার প্রমুখদের স্মৃতি এখনো বয়ে বেরান। তাদের শ্রদ্ধাশীল শিক্ষকগণের মধ্যে নরেন্দ্র নারায়ণ সাহা, ইসমাইল হোসেন ও আব্দুস সোবহানদের স্মৃতিও তাকে বিমোহিত করেন। তারপর তিনি বরাইদ এম ই স্কুলে পঞ্চম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। তিনি ঐ সময় সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে রফিউল আলম ভূইয়া বিল্টু , তৈয়ব আলী, আমির আলী খান মজলিশ ও ইলিয়াস আলী খান মজলিসদের সাথে অসংখ্য স্মৃতির কথা বলেন। তিনি বিদ্যালয়ের নামকরা শ্রদ্ধাশীল শিক্ষকদের মধ্যে আবু নইম খান মজলিশ ও মদন মোহন সরকারদের নীতিনিষ্ঠতা ও আদর্শ এখনো মনে প্রাণে ধারন করেন।

পারিবারিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিদ্যার্জনের নেশায় তারপর তিনি সহপাঠী বন্ধুদের নিয়ে প্রতিবেশী জেলা টাঙ্গাইল এর পাকুটিয়া বি.সি.আর.জি (বৃন্দাবন চন্দ্র রাধা গোবিন্দ) উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখানে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বিদ্যলয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নজরে আসেন। সেসময় তার সহপাঠী বন্ধুদের হাসান মাহমুদ ও ননী বাবু ছাড়াও বিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য শিক্ষকগণের মধ্যে নলিনী কান্ত বোস, নিরদ বরন ঘোষ, আব্দুল আলী, ইসমাইল হোসেন, জগেন্দ্র কুমার সরকার, মো.নজরুল ইসলাম বাবু ও ননী মোহন সরকারদের অধ্যভাষায়,পাঠ্যাভাষের ধরন ও ছাত্রদের প্রতি তাদের অঘাধ ভালবাসা ও দরদ কখনই ভুলার নয় বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে তার বড় ভাই ড. এ কে এম সিদ্দিক ঢাকা বিশ^বিদ্যালযে শিক্ষকতা করায় ঢাকায় অবস্থান করেন। পরবর্তীতে তিনি বিশ^বিদ্যালয়ের ভাই চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৭ সালে তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া উত্তাল ধলেশ^রীর প্রবল আক্রমনে তাদের বাড়ির একটি বড় অংশ নদী গর্ভে চলে যায়। তখন তার বাবা আব্দুর রহমান খান বরাইদের বাড়ি রেখে পোড়রাতে আমাদের মানিকগঞ্জের জায়গায় বসবাসের জন্য কাজ শুরু করেন। বাড়ির কাজ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি তার খালার বাসায় অবস্থান করেন। তার খালু হলেন খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন খান। পরবর্তীতে তার খালুর নামেই তার উদ্যোগে খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন খান উচ্চ বিদ্যালয় ও ডিগ্রী কলেজ স্থাপন করা হয়।
মফিজুল ইসলাম খান কামাল বলেন- আমি ও আমার বন্ধু রফিউল করিম চৌধুরী বিল্টু পাকুটিয়া বিসিআরজি স্কুল থেকে ঘোড়ায় চড়ে টিসি নিয়ে মানিকগঞ্জ ভিক্টেরিয়া হাই স্কুল বর্তমান মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই এবং খালার বাসা থেকেই ম্যট্রিকুলেশন পাশ করি। ঐ সময় আমার সহপাঠি বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম হলেন রফিউল করিম বিল্টু, আতিকুল্লাহ খান, কফিল উদ্দিন আহমেদ, আব্দুর রফিক,ড. অজিত রায়, ভবতোষ রায়,রবি ধর, হাকিম উদ্দিন, মোজাফফর হক, হাফিজুল ইসলাম, হোসেন খসড়–, স্বপন রহমান প্রমুখ।
রাজনীতি আমার পারিবারিক ঐতিহ্য রক্তের মধ্যে মিশে আছে। পরিবারে রাজনীতি থাকায় ছোটবেলা থেকেই নেতৃত্ব ও রাজনীতি আমার পিছু ছাড়েনি। তৎতকালীন মানিকগঞ্জের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আমার খালু খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন খান, বাবার মামাতো ভাই আমার চাচা পূর্ব পাকিস্তানের চিপ মিনিস্টার আতাউর রহমান খান ও লুৎফর রহমান খান, বাবার ফুফাতো ভাই এবং আমার নাতী জাসদ নোত কমরেড ইকবাল হোসেনের দাদা মোয়াজ্জেম হোসেন খান সর্বভারতীয় ফরোয়ার্ড বøকের নেতাজী সুবাষ বোসের খুবই ঘনিষ্ট ছিলো। আমার বাবা আব্দুর রহমান খান বরাইদ ইউনিয়নের একটানা ২৫ বছর চেয়াম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এভাবেই পরিবারে মাধ্যমেই আমার রাজনীতির হাতে খড়ি শিক্ষা পেয়েছি।
তিনি আরো বলেন যে- আমি ১০-১১ বছর বয়স থেকেই মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্র লীগের কর্মী হয়ে প্রতিবাদী রাজনীতিতে প্রবেশ করি। যতদূর মনে পড়ে ১৯৫৭ সালে আমি যখন মানিকগঞ্জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র তখন ছাত্রলীগের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে উপস্থিত ছিলেন তুখোড় ছাত্রনেতা মোস্তফা সরোয়ার ও লায়লা সরকার। সেদিন মানিকগঞ্জ মহুকুমা কমিটি গঠিত হয়। সভাপতি কাজী আফতাব উদ্দিন(বর্তমান উদীচী জেলা শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি কাজী শিউলির বাবা),সাধারন সম্পাদক রফিউল করিম বিল্টু। আমি এই কমিটির কার্যকরি পরিষদের একজন সদস্য ছিলাম। এদিকে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সামরিক শাসক আয়ুব খান মার্শাল ল জারি করেন। তখন দুর্বার ছাত্র আন্দোলন তুঙ্গে। এই উত্তাল আন্দোলন সংগ্রাম মাথায় নিয়ে ১৯৫৯ সালে ম্যট্টিকুলেশন পাশ করি। মাট্টিকুলেশন পাশের পর নতুন জীবন শুরু হলো। আমার বাবা ও বড় ভাই ঢাাক বিশ^বিদ্যালযৈর শিক্ষক প্রফেসর এ কে এম সিদ্দিকসহ পরিবারের ইচ্ছে আমি যেন বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করি। এদিকে মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজে তখনো বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়নি। পরিবারে ইচ্ছে পুরনে ঢাকা থেকে বড় ভাইয়ের আমন্ত্রণে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হলাম। জগন্নাথ কলেজে এসেও মানিকগঞ্জের অনেক বন্ধুদের পেয়ে গেলাম। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন লিয়াকত হোসেন চৌধুরী, আমিনুর রহমান, এ এম সায়েদুর রহমান। এখানে এসেও আয়ুব বিরোধী তথা হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে উত্তাল ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হলাম। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাসের কালের সাক্ষি হয়ে কাজ করলাম।
এদিকে বড় ভাই ড. এ কে এম সিদ্দিক বিশ^বিদ্যালয়ের চাকরি থেকে পরমানু শক্তি কমিশনের পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন। ইন্টারমিডিয়েট পাশের কিছুদিন পরই বড় ভাই ড. এ কে এম সিদ্দিক স্বকলারশীপ পেয়ে উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য লন্ডনে যেতেই হলো। বড় ভাই লন্ডনে থেকে আমাকে ঢাকায় রাখার ব্যবস্থা করলেও আমি আর থাকত রাজি হলাম না। রাজনীতি ও পারিবারিক নানা জটিলতায় আমাকে বাধ্য হয়েই পুনরায় মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে মানবিক শাখায় বি.এ ভর্তি হতেই হলো। বিজ্ঞান নিয়ে আর পড়া হলো না এবং পরিবারের ইচ্ছে পুরন করতে না পারার বেদনা আমাকে এখন নাড়া দেয়। মানিকগঞ্জে এসেই ছাত্রলীগ ও দলীয় রাজনীতির গুরুদায়িত্ব আমাকে কাঁেধ নিতে হলো। আমি দেবেন্দ্র কলেজে ভর্তির পরই ১৯৬২ সালে মানিকগঞ্জ মহুকুমা ছাত্রলীগের আরেকটি সম্মেলন অনুষ্টিত হয়। সম্মেলনে সভাপতি রফিউল করিম ভূইয়া বিল্টু ও সাধারন সম্পাদক আব্দুল শহীদ বিশ^াস, সাংগঠনিক সম্পাদক মফিজুল ইসলাম খান কামাল। কার্যকরি পরিষদের সদস্য এ এম সায়েদুর রহমান, কফিল উদ্দিন আহমেদ কফিল মাস্টার প্রমুখ। সম্মেলনে ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি কে এম ওবায়দুর রহমান ও ডাকুসর জিএস এনায়েতুর রহমান এবং ওয়ালিউল হক প্রমুখ। এভাবে ছাত্র রাজীতিতে প্রতিদিন আন্দোলন সংগ্রাম মিছিল সভা সমাবেশ করেও ১৯৬৪ সালে কৃতিত্বের সহিত বি.এ পাশ করলাম।

এদিকে বড় ভাই লন্ডন থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে পুনরায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালযের ভাইস চ্যন্সেল হিেেসবে স্থলাভিষুক্ত হন। আবার বড় ভাইয়ের আমন্ত্রনে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে এলএলবি তে ভর্তি হলাম। ঢাকা বিশ^বিদ্যলয়ে এলএলবির কনস্টিউশন ল ক্লাসে শিক্ষক হিসেবে ড.কামাল হোসেনকে পেলাম। তখন থেকেই আমি স্যারকে খুবই পছন্দ ও শ্রদ্ধা করি তাই বঙ্গবন্ধুর পরই ড.কামাল হোসেন আমার আদর্শ ও রাজনৈতিক গুরুজন। এছাড়াও শিক্ষক ছিলেন সালমা সোবহান স্যার প্রমুখ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম কামাল এর রাজনৈতিক সংগ্রামের আরো নানা অধ্যায় নিয়ে আমরা আলোচনা করতে চাই- তিনি মানিকগঞ্জের একজন নীতিবান পরিচ্ছন্ন রাজনীতির প্রতীক। মুলত ১৯৫৭ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমেই প্রত্যেক্ষ রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন। তারপর একই সংগঠনে ১৯৬৩-৬৪ সালে বৃহত্তর ঢাকা জেলার সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে আওয়ামীলীগে যোগদানের মাধ্যমে মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সামনের সারির কান্ডারীর ভূকিা পালন করেন। ১৯৬৮-৭০ সালে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে তৎতকালীন ৬৩ টি ইউনিয়নে ও ৭টি থানা কমিটি গঠন এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগেই পূর্ণাঙ্গ কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা কমিটি গঠনে মূল ভূমিকা পালন করেন। এদিকে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর বাংলার আকাশে বাতাসে মুক্তিযুদ্ধের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তরুণ নেতা মফিজুল ইসলাম খান কামাল আগেই যুদ্ধে যাওযার মনস্থির করেছেন এবং পাকিস্থানি হয়েনাদের বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়েছেন। ঠিকই ১৯৭১ সালে আমার সোনার বাংলায় যখন পাকিস্তানি হায়েনা ও তাদের দেশীয় দোসররা হত্যা,লুন্ঠন,অগ্নি সংযোগ,ধর্ষণসহ বাংলা মায়ের সন্তানদের চির গোলামী করে রাখার অপচেষ্ঠায় ব্যাস্ত ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুর ডাকে নিজের জীবন বাজি রেখে দেশ মাতাকে রক্ষা করতে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহন করেন। ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে যখন পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষন বুকে ধারন করে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহন করেন। তারপর গভীর রাতে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঝাপিয়ে পড়তে বঙ্গবন্ধুর বার্তায় সবাইকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে আহবান জানান। মানিকগঞ্জে ক্যপ্টেন আব্দুল হালিম চৌধুরী,মোসলেম উদ্দিন খান হাবু মিয়া, মাজাহারুল হক চাঁন মিয়া,খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, সৈয়দ আনোয়ার আলী চৌধুরী,ডা: মীর আবুল খায়ের ঘটুদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের কমান্ড কাউন্সিল গঠিত হয়। পরবর্তীতে কমাল সাহেব ভারতের কালসী এবং দেরাদুনে অস্ত্র ও প্রশাাসনিক প্রশিক্ষণ শেষ করেন। অত:পর কেন্দ্রীয় মুজিব বাহিনীর অন্যতম প্রধান নেতা ও পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার শেখ ফজলুল হক মনির কর্তৃক মানিকগঞ্জ জেলা মুজিব বাহিনীর(বিএলএফ) কমান্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একাত্তরের সাহসী টকবগে তরুণ ও মেহনতি শোষিত মানুষের প্রিয় নেতা মফিজুল ইসলাম খান কামাল বিএলএফ কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধের সাংগঠনিক প্রস্তুতি গ্রহন করেন। তিনি দীর্ঘ নয় মাস জীবন বাজি রেখে দেশ মাতাকে মুক্ত করে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দেশীয় দোসর কর্তক ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মানিকগঞ্জ জেলাকে পুর্গঠনের দায়িত্ব হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশে মানিকগঞ্জ জেলার(মহুকুমা) বেসামরিক প্রশাসকের দায়িত্ব নেন।

যুদ্ধ দিনের স্মৃতিচারণে তিনি আরো বলেন- ২৮ মার্চ সকাল প্রায় ১১টা। মোসলেমউদ্দিন খান হাবু মিয়া, ক্যাপ্টেন আবদুল হালিমসহ আমরা মানিকগঞ্জ শহরের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করছি। সেখানে গিয়ে হাজির ফজলুল হক মনি ও তোফায়েল আহমেদ। মনি ভাই আমাকে একটু দূরে ডেকে নিয়ে বললেন, শহরের পাশে বেউথা ঘাটে নৌকায় অপেক্ষা করছেন ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামান। তাদেরকে সিরাজগঞ্জ পৌঁছানোর ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। জিপে করে নেতাদের নিয়ে গেলাম আরিচা ঘাটের মাইলখানেক আগে। কিছুটা পথ পায়ে হেঁটে তেওতা গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা কাইয়ুমদের লঞ্চে করে নেতাদের সিরাজগঞ্জ পাঠাই।
ভারতে যাওয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছিলাম মানিকগঞ্জ শহরে পাকিস্তনি সেনারা প্রবেশের পর। ১০ মে কেরানীগঞ্জ গেলাম বোরহানউদ্দিন গগনদের বাড়িতে। গগন বলল, ‘কাজী আরেফ ভারতে যাবে—লোক পাচ্ছে না, তোমরা এক সঙ্গে যাও।’ ২৬ মে কাজী আরেফকে নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে রাজবাড়ী-ফরিদপুর হয়ে যাত্রা করি। ফরিদপুরের খলিলপুর হাটে পৌঁছলে আবুল হোসেন বেচন ও জলিল মৌলভী নামে দুই রাজাকার আমাদের ধরে ফেলে। বেঁচে যাই পার্শ্ববর্তী গ্রামের ওবায়েদুল হক নামের একজনের কারণে। ওবায়েদুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি কাজী আরেফকে চিনতেন। ওবায়েদের বাবা আবদুল ওহাব বিশ্বাস এলাকার চেয়ারম্যান, প্রভাবশালী মানুষ, তিনি ছাড়িয়ে নেন আমাদের।
তারপর ২০ মে আমরা কলকাতা প্রবেশ করি। শিয়ালদহ স্টেশনে নামার পর দেখি কাজী আরেফের নোট বইয়ে কিছু ঠিকানা লেখা। কোন নেতা কোথায় আছেন সেই ঠিকানা। ওই ঠিকানা অনুসারে ভবানীপুরের সানি ভিলায় গিয়ে দেখি সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ বসা। জানতে পারলাম এটা চিত্ত সুতারের বাড়ি। সিরাজুল আলম খান আমাদের ২৫টা টাকা দিলেন প্যান্ট-শার্ট কেনার জন্য।
তখনো প্রশিক্ষণ শুরু হয়নি। মাঝে মাঝে ৮ নম্বর থিয়েটার রোডে তাজউদ্দীন আহমদের অফিসে আসি। তাজউদ্দীন আহমদ ও আমি ঢাকা জেলার লোক। তিনি যে সময় ঢাকা উত্তর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, আমি সেই কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলাম। একদিন তাজউদ্দীন ভাই বললেন, ‘ফজলুল হক মনি তোমাকে আগরতলা যেতে বলেছেন, আমার কাছে খবর পাঠিয়েছেন।’ তাজউদ্দীন ভাই-ই দ্রæত আগরতলা যাওয়ার ব্যবস্থা করলেন বিএসএফের একটি কুরিয়ার বিমানে। ৫ জুন আগরতলা যাই। মনি ভাইয়ের মুজিব বাহিনী সেক্টরের হেডকোয়ার্টার করা হয়েছিল ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায়। ফজলুল হক মনির সঙ্গে দেখা হলো, তাঁর সঙ্গে ছিলেন বোরহানউদ্দিন গগন। ফজলুল হক মনি গগনসহ আমাকে একটি ঠিকানা দিয়ে বললেন, ‘যাও বিশ্রাম নাও।’ আগরতলার শহরতলিতে, বাড়ির নাম শ্রীধর ভিলা, সেখানে বেশ কদিন বিশ্রাম নিলাম। একদিন মালিক ভাড়া নিতে এলেন। তাঁর কাছ থেকেই শুনলাম, বাড়িটি ভাড়া নেওয়া হয়েছে ১ ফেব্রæয়াারি। শুনেই দ্বিধায় পড়ি, ঢাকায় আক্রমণ হলো ২৫ মার্চ অথচ আগরতলায় বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছে ফেব্রæয়াারি মাস থেকে, বিষয়টি কী? তা হলে যুদ্ধের প্রস্তুতি কি আগেই পুরোপুরিভাবে নেওয়া হয়েছে?

আমি তখন ছাত্র রাজনীতি ছেড়ে মূল দলে প্রবেশ করেছি। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। তবুও মনি ভাই বললেন, তোমাকে মুজিব বাহিনীতে থাকতে হবে। আমাকে প্রথম দায়িত্ব দেওয়া হলো নিজের এলাকা ও অন্য এলাকার পরিচিত যেসব ছাত্রকর্মী ভারতে প্রবেশ করেছে তাদের ক্যাম্পে প্রশিক্ষণের জন্য রিক্রুট করার। কিছুদিন এ দায়িত্ব পালন করার পর আমাদের প্রশিক্ষণে পাঠানো হলো দেরাদুনে কালচি ক্যাম্পে। আমাদের ব্যাচে আরো উল্লেখযোগ্য ছিলেন বঙ্গবন্ধুর মেজো ছেলে শেখ জামাল ও শেখ ফজলুল হক মনির ছোট ভাই শেখ মারুফ।

আমাকে মুজিব বাহিনীতে রাখার একটি কারণ হলো, সংগঠন ও জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার ধারণা প্রচার। ভিত শক্ত করতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে গঠিত নিউক্লিয়াসে ছিলাম আমি। মানিকগঞ্জ জেলা থেকে সিরাজুল আলম খান আমাকে ও রফিকুল করিম ভুইয়া বিল্টুকে অন্তর্ভুক্ত করেন। মুজিব বাহিনীর নেতাদের সঙ্গে প্রবাসী সরকারের শুরু দিকে কিছু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল এটা ঠিক। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে ছিল সংসদীয় পদ্ধতির সরকার। কিন্তু প্রবাসী সরকার গঠিত হয়েছিল রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির। ফজলুল হক মনি এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ ছাড়া যুদ্ধ পদ্ধতি নিয়েও মুজিব বাহিনীর চার নেতার সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদের মতভেদ ছিল। যদিও কিছুদিন পর তা থাকেনি। আবার সে সময়ও ছাত্রলীগের ভেতরে একাধিক গ্রুপ ছিল। দেখা যায়, মুজিব বাহিনীর রাজনৈতিক প্রশিক্ষক বা মোটিভেটর হিসেবে যেসব ছাত্রনেতা কাজ করেছেন তাঁদের সিংহভাগ পরবর্তীকালে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে জাসদে যোগ দিয়েছেন। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের এই জীবন্ত কিংবদন্তী ও সকলের আস্থাফাজন মহান নেতা মফিজুল ইসলাম খান কামাল নিষ্ঠার সহিত যুদ্ধকাজ পরিচালনা করেন এবং বিজয় ছিনিয়ে আনেন।

তিনি গণমানুষের একচ্ছত্র ম্যান্ডেট নিয়ে ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে (সাটুরিয়া-মানিকগঞ্জ সদর) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩-৭৮ সালে মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৮-৮১ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতা নির্মমভাবে নিহত হলে সামরিক সরকার রাজনীতি বন্ধ করে দেয়। ১৯৭৬ সালে আবার রাজনীতি উন্মুক্ত হলেও কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতৃবৃন্দ জেলে থাকায় নতুন নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ তরুণরাই সংগঠিত করতে থাকে। সংগঠন গড়ার এই মহান কাজে মানিকগঞ্জ থেকে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন মফিজুল ইসলাম খান কামাল।
তারপর তিনি ১৯৭৭ সালে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সদস্য নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন এই বীর সেনানী ১৯৮১-৯২ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘ ১২ বৎসর দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮১ সালে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অধিবেশনে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর কণ্যা দেশের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সভাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম জাতীয় সংগঠক জাতীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুর রাজ্জাক সাহেবকে সাধরণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। সেই কমিটির উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সৈয়দা জহুরা তাজউদ্দিন, আব্দুল মালেক উকিল,ডক্টর কামাল হোসেন,আব্দুস সামাদ আজাদ,ফনি ভূষণ মজুমদার,এ্যাড. মনোরঞ্জন ধর,শেখ আবন্দুল আজিজ,মতিয়ার রহমান,আব্দুল মান্নান,আব্দুল মমিন, জিল্লুর রহমান(সাবেক রাষ্ট্রপতি)। সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য হলেন- সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী,সালাউদ্দিন ইউসুফ, তোফায়েল আহমেদ,সামসুর রহমান খান শাহজাহান,আব্দুল জলিল, আমির হোসেন আমু, এ্যাড.জহিরুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম খান কামাল,এ্যাড.মফিজুল ইসলাম খান কামাল,এ্যাড.সিরাজুল ইসলাম,প্রফেসর আবু সাইদ, সরদার আমজাদ হোসেন,শফিকুল আজিজ মুকুল,এসএম ইউসুফ, শিক্ষক নেতা কামরুজ্জামান,নুরুল ইসলাম ভান্ডরী প্রমুখ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১,৮২,৮৩ সালে শীতের সময় জনাব কামাল সাহেবের মানিকগঞ্জের বাসায় বেড়াতে আসেন। এসময় তার সফর সঙ্গী ছিলেন তার স্বামী বিশিষ্ঠ পরমানু বিজ্ঞানী ডক্টর মরহুম আব্দুল ওয়াজেদ মিয়া। উল্লেখ্য ডক্টর ওয়াজেদ মিয়া কামাল সাহেবের বড় ভাই বিশিষ্ঠ পরমানু বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডক্টর একেএম সিদ্দিক সাহেবের ছাত্র ছিলেন।

যুদ্ধ পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর রুপকল্পে সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী সৈনিক মফিজুল ইসলাম খান কামাল ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষে আওয়ামীলীগসহ সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক-আওয়ামীলীগ (বাকশাল) গঠন করেন এবং বঙ্গবন্ধু মানিকগঞ্জ জেলা বাকশাল এর দায়িত্ব কামাল সাহেবের উপর ন্যাস্ত করেন।
সংসার ও পারবারি জীবন: তিনি মানিকগঞ্জের বরাইদ অঞ্চলের বিখ্যাত খান পরিবারের যোগ্য উত্তরসূরী। তার পিতামহ মরহুম ডা: হামিদ উদ্দিন খান জাতীয়ভাবে একজন জনদরদী ডাক্তার ছিলেন। তার পিতা মরহুম আব্দুর রহমান খান তৎতকালীন ভারতের কলকাতা শহরের রেঙ্গুনের একজন বিশিষ্ঠ প্রেস ব্যবসায়ী ছিলেন। এলাকায় দানবীর ও সমাজ সেবক হিসেবেও যথেষ্ঠ খ্যাতি নিয়ে বরাইদ ইউনিয়নে একটানা ২৫ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মাতা মরহুম সৈয়দা উম্মে ছোলেমা খাতুন একজন উদার মনের মানুষ ছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সম্মতিক্রমে ক্যাপ্টেন(অব:) আব্দুল হালিম চৌধুরীর কনিষ্ঠ কণ্যা রোফিকা হালিম চৌধুরী সুলতানার সাথে এবছরের ২৫ জুলাই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সংসার জীবনে তার এক পুত্র সাকিবুল ইসলাম খান(সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার),কন্যা ব্যরিষ্টার মাহেরীণ ইসলাম খান একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান আইনজীবি। বড় ভাই মরহুম সিরাজুল ইসলাম খান সাবেক ইনকাম ট্যাক্স অফিসার। মেঝ ভাই প্রফেসর ড. এ কে এম সিদ্দিক একজন প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ও সাবেক ভিসি, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়। চতুর্থ ভাই আজিজুল ইসলাম খান পেয়ারা একজন বিশিষ্ঠ ব্যাবসায়ী। ছোট ভাই বাদরুল ইসলাম খান বাবুল একজন বিজ্ঞ আইনজীবি ও রাজনীতিবিদ।

মানিকগঞ্জ মাটি ও মানুষের মহান এই নেতা তার নিজ গ্রাম বরাইদে ফয়জুন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় এবং আব্দুর রহমান খান উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্যদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মানিকগঞ্জ জেলা প্রবীণ হিতৈষী সংঘের বর্তমান সভাপতি তিনি। এছাড়াও তিনি বিশ^ বরেণ্য আইনজীবি বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ড.কামাল হোসেন এর নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৭৪ সালে এমপি থাকাকালীন তার মাধ্যমে মানিকগঞ্জের প্রথম থানা হিসেবে (সাটুরিয়া-মানিকগঞ্জ)এ বিদ্যুতায়ন করেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে তার নির্বাচনী এলাকায় সেচ কাজের সুবিধার্থে বিনামূল্যে ৬০টি ডিপ টিউবয়েল স্থাপন করে কৃষিতে পিটøব সৃষ্টি করেন। কৃষক-শ্রমিক মেহনতী মানুষের এই ত্যাগী নেতা। ১৯৭৩-৭৪ সালে মানিকগঞ্জ জেলায় ৩৩৮ জন প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। উল্লেখ্য এক্ষেত্রে কাউকে কোন প্রকার টাকা পয়সা খরচ করতে হয়নি। প্রসঙ্গত তিনি সাটুরিয়া গার্লস স্কুল,আব্দুর রহমান খান উচ্চ বিদ্যালয় বরাইদ ও মানিকগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মানিকগঞ্জ বাসীর শিক্ষাঙ্গনে এক ত্রাতার ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন খান উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অন্যতম উদ্যেক্তাসহ মানিকগঞ্জে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠনকে এমপিওকরণসহ উন্নয়নে ভূমিকা পালনসহ এখনো শিক্ষার আলো ছড়াতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও তিনি ১৯৭২-১৯৮৭ সাল পর্যন্ত সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের (অবৈতনিক) দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষকতা থেকে সেচ্ছায় অবসরের পর তিনি সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে নিজেকে নিবেদন করেন। বর্তমানে তিনি মেহনতি মানুষের জন্য একজন সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা। তিনি ভোটাধিকার আন্দোলনে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব প্রদান করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম এমপি মফিজুলল ইসলাম খান কামাল ১৯৯১ সালে নৌকা এবং ১৯৯৬,২০০১,২০০৯. ২০০১৮ সালে ড.কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন গণফোরামের উদীয়মান সূর্য্য প্রতীক নিয়ে (সাটুরিয়া-মানিকগঞ্জ সদর) আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করে আসছেন।
বয়সে আশি পেরুলেই সদা হাসিমাখা তারুণ্যময় এই মানুষটি মেহনতি মানুষের সার্বিক মুক্তির লক্ষে সার্বক্ষণিক নীতিনিষ্ঠ রাজনীতির সাথে থেকে সন্ত্রাস,চাঁদাবাজি,মাদক,ঘুষ,দুর্ণীতি ও কালো টাকার নির্ভর লুট-পাটের রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জনতাকে সাথে নিয়ে লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তিনি মানুষের ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং সুস্থ ধারার রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোষকের বিরুদ্ধে শোষিত মানুষের পক্ষে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। তিনি মনে প্রাণে একজন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একনিষ্ট সৈনিক। তিনি বিশ^াস করেন দেশের মালিক জনগন। জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস। তিনি আশাবাদী যে জনগনই আগামীতে তাকে জনতার এমপি করে মহান সংসদে আসীন করবেন।
[সংকলন ও সম্পাদনায়: মো. নজরুল ইসলাম,সাধারণ সম্পাদক,বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ,মানিকগঞ্জ]

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button