দুই দেশের সুসম্পর্কের স্বার্থে সীমান্ত হত্যা থেকে ভারতের বেরিয়ে আসা উচিৎ বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, সীমান্ত হত্যা ভারতের উপকার করছে এ রকমটি কাউকে বলতে শুনিনি। বরং সীমান্ত হত্যা দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সীমান্ত হত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদে কি কোনো কাজ হয়নি?
সীমান্ত হত্যার বিরুদ্ধে ভারত সরকারের কাছে গত ৫ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর গত সোমবার ঠাকুরগাঁওয়ে বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ আরো একজন বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করেছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রতিবাদের ভাষা অনেক শক্ত করেছি। এই মুহূর্তে আমাদের এটুকুই করার আছে। আমরা সবসময় বলছি, সীমান্ত হত্যা একটি সংবেদনশীল বিষয়। আশা করছি ভারত বিষয়টিকে বিবেচনায় নিবে।
বাংলাদেশী কিশোরী স্বর্ণা দাসকে বিএসএফ গত ১ সেপ্টেম্বর গুলি করে হত্যার পর ভারতীয় হাইকমিশনে প্রতিবাদ নোট পাঠানোর কথা উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছি এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছি। সোমবারের হত্যাকাণ্ড নিয়েও আমরা একই রকম প্রতিবাদ জানিয়েছি। যেখানে সুযোগ হয়, সেখানেই এ বিষয়ে আমরা কথা বলব।
প্রতিবাদ জানানোর পর ভারতের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় ভারত : বাংলাদেশের সাথে বহুমুখী সম্পর্ক এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নবনিযুক্ত পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। হাইকমিশনার বলেন, দু’দেশের জনগণের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা, শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছি। বহুমুখী খাতের এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে আমরা এই সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখব। বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনগুলোতে এই সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার প্রত্যাশায় রয়েছি।
প্রণয় ভার্মা বলেন, নতুন দায়িত্ব নেয়া পররাষ্ট্র সচিবের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। দু’দেশের সরকারের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। একে-অপরকে জানার জন্য এটা ভালো বৈঠক ছিল।
বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী নিহতের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, এটা নিয়ে ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কথা বলেছেন।
সাক্ষাতের সময় পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সাথে জনকেন্দ্রিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় বাংলাদেশ। এ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সীমান্তহত্যা বন্ধ, তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।
সার্ক ও বিমসটেকের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
সূত্র : বাসস