sliderবিনোদন

সীমানা পেরিয়ে পরীমনি

প্রথম ছবি ভালোবাসা সীমাহীন মুক্তির আগেই ২৫টি চলচ্চিত্রের শুটিং সম্পন্ন করেছিলেন পরী মনি। সমালোচকেরা তখন বলেছিলেন, স্বল্প বাজেটের কারণেই পরীর হাতে এত ছবি, কিন্তু পরী এখন কাজ করছেন দেশের সবচেয়ে বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে। হাতে থাকা ছবির তালিকাও বেশ লম্বা। এসব নিয়ে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম নায়িকার সাথে কথা বলেছেন সাকিবুল হাসান
২০১৫ সালের সালতামামিতে মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বাধিক চলচ্চিত্রের নায়িকা ছিলেন পরী মনি। ওই বছরই ভালোবাসা সীমাহীন ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষিক্ত এ অভিনেত্রী আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘রানা প্লাজা ছবিটি মুক্তি পেলে দর্শক আমাকে আরো ভালোভাবে চিনত। হাত উঁচিয়ে আঙুল দিয়ে বলা যেত, দেখেন, মৌলিক গল্পের ছবির জন্য কতটা উন্মুখ হয়ে থাকে দর্শক।’ এটা ঠিক যে, মৌলিক গল্পের ছবি এখন খুব একটা হচ্ছে না। প্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার সবাই এই জায়গাটায় উদাসীন। নানা যুক্তি দিয়ে দর্শকদের মৌলিক গল্পের ছবি থেকে বঞ্চিত করছেন। ফলাফল, দিনকে দিন দর্শকশূন্য হয়ে যাচ্ছে প্রেক্ষাগৃহ। ঠিক এই জায়গায় পরিবর্তন দেখতে চান পরী মনি। তিনি বলেন, ‘পূর্বে দেখা কোনো গল্পে যদি নতুন করে দর্শক আমাকে দেখেন, যত ভালো অভিনয়ই করি কেউ আমাকে হৃদয়ে স্থান দেবেন না। সবচেয়ে বড় কথা, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজের ত্রুটিগুলো দূর করার যে অঙ্গীকার তার কোনো বাস্তবায়ন হবে না।’
একজন অভিনেত্রীর কাছ থেকে এমন দায়িত্বশীল কথা শোনা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। বর্তমান ভঙ্গুর চলচ্চিত্রবাজার আবার স্থিতিশীল, লাভজনক অবস্থায় ফিরে আসার ইঙ্গিত, যার বাস্তবায়নও বোধহয় শুরুর পথে। কারণ সম্প্রতি পরী চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন দেশের সবচেয়ে বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার সাথে। এই প্রতিষ্ঠানের ‘রক্ত’ ছবিতে পরী অভিনয় করছেন খ্যাতনামা পরিচালক মালেক আফসারীর নির্দেশনায়। গল্পের প্রয়োজনে এই ছবিতে অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হবে পরীকে। এ জন্য তাকে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে ভারতের চেন্নাইয়ের একজন প্রশিক্ষকের কাছ থেকে।
প্রশিক্ষণের কারণ হলো ওই ছবিতে পরী মনিকে উঁচু ভবন থেকে লাফ দিতে হবে, পিচঢালা পথে স্কেটিং করতে হবে এমনকি পানির নিচে অন্তত আড়াই মিনিট থাকতে হবে এবং লড়াইও করতে হবে শত্রুপক্ষের সাথে! পানির নিচে থাকতে গেলে পরীকে ওই আড়াই মিনিট সময় দম বন্ধ রাখার কৌশলও রপ্ত করতে হবে। এসব কৌশলই তিনি রপ্ত করেছেন কয়েক সপ্তাহ ধরে। পরিচালক মালেক আফসারী বলেছেন, ‘রক্ত ছবিতে দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি রাস্তায় পরী মনিকে ভিলেনরা পেছনে ধাওয়া করবে স্কেটিং করে। তাই স্কেটিংয়ের ট্রেনিং নিয়েছে পরী। এই ছবিতে আরো এমন কিছু ভয়াবহ দৃশ্য দেখা যাবে, যা বাংলা সিনেমায় আগে কখনো দেখা যায়নি। শুধু ধাওয়া করা নয়, স্কেটিং করেই ফাইট করবে পরী মনি।
সীমানা পেরিয়ে পরী ..


পরীর এহেন এগিয়ে যাওয়া অবশ্যই দেশীয় চলচ্চিত্রের জন্য সুখবর; কিন্তু মোটা দাগে একটি প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই, জাজের ছবিতে অভিনয় করা মানে, অন্য প্রযোজনা সংস্থাকে গুড বাই বলা। বিষয়টিকে কিভাবে দেখনে পরী? ‘আমি এ ধরনের প্রশ্ন অবান্তর মনে করি। কারণ আমি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নায়িকা নই। আমি বাংলাদেশ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নায়িকা। এ পর্যন্ত আনুমানিক ৩০টা প্রডাকশন হাউজের সাথে কাজ করেছি। আমার কাছে জাজও একটা প্রডাকশন হাউজ মাত্র।’ পরী বলেন, ‘জাজও অন্য ৩০টা হাউজের বাইরে মঙ্গল গ্রহের মতো আশ্চর্যজনক কিছু নয়। তবে এই সময়ের সব থেকে বড় প্রডাকশন হাউজ সেটা অস্বীকার করার কিছু নেই। জাজের সুনাম, অবস্থান, কাজের কোয়ালিটি সম্পর্কে সবাই ভালো জানেন। একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমি অবশ্যই চাই বড় হাউজে কাজ করতে। আমি যতগুলো হাউজে কাজ করেছি সবগুলোকে আমার নিজের এবং আপন ভেবেই কাজ করছি। জাজও আমার আপন।’
তিনি বলেন, ‘এই ছবিটা যেমন জাজের ছবি, তেমনি এটা নির্মাতা মালেক আফসারী স্যারের ছবি। এই প্রডাকশনের সব মেম্বারের ছবি। হিরো রোশানের ছবি। আমার ছবি। এটা আমাদের বাংলার ছবি, বাংলাদেশের ছবি।’ জাজের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার বিষয়টিকে অনেক নির্মাতা প্রযোজকরাও সহজে নিতে পারেনি উল্লেখ করে পরী বলেন, যে দিন আমি ‘রক্ত’ ছবিতে সাইন করলাম সে দিন থেকে আমার অনেক ছবির নির্মাতা প্রচণ্ড রকম দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলেন। পরদিন থেকে একজনের পর একজন এলেন তাদের ডেট রিকনফার্ম করতে। আমি ভীষণ অবাক হলাম। তাদের ধারণা, এই বুঝি আমি আমার সারা বছরের ডেট জাজকে দিয়ে দিলাম। যে দিন এই ছবি সাইন করলাম সেদিন থেকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই আমাকে কেমন অচেনা অপরিচিত মানুষের নজরে দেখতে শুরু করল। মনে হলো তাদের পরিবারের অনেক দূরে চলে গেছি। বিশেষ করে কাছের কো-আর্টিস্টদের এই আচরণ- আমার কাছে সত্যি অসহনীয়, অনেক বেশি কষ্টকর।’
পরী তার অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, ‘এর আগে অন্য নায়ক নায়িকারা যখন জাজের হাউজে এ কাজ করেছে তখন কেবল জাজেরই কাজ করেছে। জাজের বাইরে কাজ করেছে কোনো একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর। আমার সেই নির্দিষ্ট সময়টা নেই। সেই সময়টা আপনারা আমাকে আগেই হাত ধরে পার করে দিয়েছেন আমি টেরও পাইনি।’
রক্ত চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের জন্য কলকাতায় যাওয়ার আগে সৈকত নাসিরের পাষাণী নামের একটি চলচ্চিত্রের গানের দৃশ্যে অংশ নিয়েছিলেন পরী। এ ছাড়া কিছু ছবি রয়েছে শেষের দিকে, এর মধ্যে শামীমুল ইসলাম শামীমের আমার প্রেম আমার প্রিয়া, সৈকত ইসলামের নদীর বুকে চাঁদ এবং শফিক হাসানের ধূমকেতু। পরী বলেন, ‘এই ছবিগুলো কি প্রমাণ করে না আমি আগের মতোই কমিটমেন্টর জায়গায় অটল।’ ভারত থেকে দেশে ফিরে তিনি অংশ নেবেন দেবাশিষ বিশ্বাসের মন জ্বলে সহ বড় প্রোডাকশনের একাধিক ছবির শুটিংয়ে। মুক্তির তালিকায় রয়েছে পরীর একাধিক ছবি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অপূর্ব রানার ইনোসেন্ট লাভ মুক্তি পাবে শিগগিরই। এ ছাড়া সম্প্রতি কাজ শেষ করেছি, শাহ আলম মণ্ডলের আপন মানুষ, ওয়াকিল আহমেদের কত স্বপ্ন কত আশা। এই দু’টি ছবিও মুক্তির প্রক্রিয়াধীন।
ছোট বেলায় বাবা-মা হারানো পরী বড় হয়েছেন পিরোজপুরে নানা শামসুল হক গাজীর কাছে। কথা শেষ করার আগে পরী সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘ভালো কাজ করতে চাই, সবার সহযোগিতা চাই, আর ছোট বড় সবাইকে জানাতে চাই ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা।’
২০১৫-এর মতো ২০১৬ সালেও সালতামামিতে যে পরীর নাম প্রথম দিকে থাকবে সে বিষয়টি এখন থেকেই আঁচ করা যায়, তবে দর্শক, সংখ্যার চেয়ে মানের দিকটিই বেশি প্রাধান্য দেন, সেটা নিশ্চয়ই পরী নতুন কাজ হাতে নেয়ার আগে খেয়াল রাখবেন।
সুত্র: নয়া দিগন্ত

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button