sliderস্থানীয়

সিংড়ায় নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের স্তুপ

নাটোর প্রতিনিধি : আগামী ২৬ ডিসেম্বর ৪র্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নাটোরের সিংড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ১০টিতে চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে এ দিন। বাকি ২টি ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। এ উপজেলায় আ’লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তুপ এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধেও নৌকার প্রার্থীদের অভিযোগ পড়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দপ্তরে।
জানা যায়, ৭ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত অভিযোগ জমা পড়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দপ্তরে। যার সিংহভাগ নৌকার প্রার্থী ও কর্মীদের বিরুদ্ধে।
নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মারধর, হুমকি, পোস্টার ছেঁড়া, অফিস ভাংচুর, প্রচারণায় বাধা, এলাকা ছাড়া করাসহ নানা অভিযোগ করেছেন বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এসব অভিযোগ উল্লেখ করে প্রতিকার চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। যার অনুলিপি দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র‌্যাব ক্যাম্প, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, অফিসার ইনচার্জ ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সুকাশ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী এড. মোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে প্রচারণায় বাধা, মাইক ভাংচুর ও হুমকির লিখিত অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশীক ইকবাল, ডাহিয়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মামুন সিরাজুল মজিদের বিরুদ্ধে ৯টি লিখিত অভিযোগ করেছেন আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এম এম আবুল কালাম। কলম ইউনিয়নে নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থী পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। তাজপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মিনহাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী শরিফুল ইসলাম, আঃ জব্বার ও আঃ মালেক। চৌগ্রাম ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী জাহেদুল ইসলাম ভোলার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী আলতাফ হোসেন, ছাতারদিঘী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আঃ রউফ বাদশার কর্মীদের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগ করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী আলতাব হোসেন আকন্দ। রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী জাকির হোসেন। এদিকে সুকাশ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশীক ইকবালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন নৌকার প্রার্থী। ডাহিয়া ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী এম এম আবুল কালামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন নৌকার প্রার্থী। তাজপুর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ৩টি অভিযোগ করেছেন নৌকার প্রার্থী মিনহাজ উদ্দিন। হাতিয়ান্দহ ও লালোর ইউনিয়নে কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থীর অভিযোগ নাই।
এদিকে গত ৮ ডিসেম্বর কলম ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মইনুল হক চুনুকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় গুলি-রিভলভারসহ দুইজনকে আটক করে পুলিশ। এছাড়াও ১৫ ডিসেম্বর সুকাশ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচার মাইক ভাংচুরের সময় এক নৌকার কর্মীকে পুলিশে দেয় জনতা। পরে তাঁকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়াও ৩টি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী (স্বতন্ত্র) ও ৭টিতে ইসলামী আন্দোলন এবং ৪টি ইউনিয়নে বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।
তাজপুর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারা হবে বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে। প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ দাবি করেন তিনি।
একই ইউনিয়নে অপর বিদ্রোহী প্রার্থী আঃ জব্বার বলেন, নৌকার প্রার্থী ও কর্মীরা আমার কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে। বারবার লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছি না।
তাজপুরে নৌকার প্রার্থী মিনহাজ উদ্দিন তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্শান্বিত হয়ে প্রতিপক্ষরা অপপ্রচার ছড়াচ্ছে।
ডাহিয়া ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী এম এম আবুল কালাম বলেন, আমার পোস্টার ছেঁড়া হচ্ছে ও সংখ্যালঘু ভোটারদের হুমকি দেয়া হচ্ছে।
ছাতারদিঘী ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী আলতাব হোসেন আকন্দ বলেন, আমার কর্মীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। লিখিত অভিযোগ করেছি। সুষ্ঠু ভোটের জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।
সুকাশে বিদ্রোহী প্রার্থী আশীক ইকবাল বলেন, নৌকার কর্মীরা ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে দিবেনা বলেছে। আমাকে হুমকি দিচ্ছে, বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছে না।
নৌকার প্রার্থী এড. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ষড়যন্ত্র করছে প্রতিপক্ষ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম এম সামিরুল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা ও থানায় বলা হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন।
নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা করার চেষ্টা করা হলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রশাসন সর্বোচ্চ সজাগ রয়েছে। একটা সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button