slider

সিংগাইরে গাড়ী চালকের ২ কোটি টাকার ডুপ্লেক্স বাড়ি! ঢাকায় একাধিক ব্যবসা

সিরাজুল ইসলাম,সিংগাইর, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের সিংগাইরে দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করে আলোচনায় এসেছেন প্রাইভেটকার চালক আতিকুর রহমান (৩৮)। আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়ি চালক হিসেবে সবাই তাকে চিনেন। প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছেন গাড়ী চালক আতিক । স্থানীয়দের ভাষ্যমতে,অবৈধ পন্থায় কামানো টাকা দিয়ে আতিক ডুপ্লেক্স বাড়িটি নির্মাণ করেছেন ।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিংগাইর পৌর এলাকার ৯ নং ওয়ার্ডের কাশিমনগর মহল্লার মৃত লেহাজুদ্দিনের ছেলে আতিকুর রহমান । ছোট বেলায় প্রাইমারীর গন্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিকে প্রবেশ করে লেখাপড়ায় ইতি টানেন। এর পর বেবি ট্যাক্সি চালানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার কর্মজীবন। বড় ভাই সরকারি দপ্তরে ড্রাইভিং পেশায় চাকরির সুবাদে এক সময়ে তার সহযোগিতায় আতিক কাজ পায় ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর প্রাইভেটকার চালক হিসেবে। সেই সুবাদে অবৈধ পথে রোজগার করেন মোটা অংকের টাকা। গ্রামের বাড়ী কাশিমনগর মহল্লায় নির্মাণ করেন ডুপ্লেক্স বাড়ি। স্থাপনাসহ যার বাজার মূল্য ২ কোটি টাকার ওপরে । এ ছাড়াও রাজধানী ঢাকায় তার রয়েছে একাধিক ব্যবসা। একজন প্রাইভেটকার চালক হয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের বিষয়টি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর)সরেজমিন স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,আতিকুর রহমান সড়ক পরিবহণ ও সেতু বিভাগে গাড়ী চালকের চাকরি নিলেও তিনি গাড়ী চালাতেন সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর। এ সুযোগে তাদের ছত্রছায়ায় নানা অনিয়ম ও তদবির বানিজ্য করে অবৈধ উপায়ে উপার্জন করেন মোটা অংকের টাকা। সেই টাকা দিয়েই গ্রামে ডুপ্লেক্স বাড়ি ও ঢাকায় ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র জনতার তোপের মুখে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর আতিকের এ বাড়িটি নিয়ে এলাকার মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছেন। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী আতিক সড়ক পরিবহণ ও সেতু বিভাগে গাড়ী চালকের চাকরির সুবাদে ওবায়দুল কাদেরের পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিচিতি পান ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়ী চালক হিসেবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, করোনাকালীন সময়ে সিংগাইর থেকে ইটভর্তি ট্রাক ঢাকায় প্রবেশ করতে বিধি-নিষেধ থাকলেও মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর নাম ব্যবহার করে আতিক গাড়ী প্রতি ৫ হাজার টাকা করে নিতেন। ফলে ভাটা মালিকরাও তার শরণাপন্ন হতেন। এভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা । এছাড়াও আতিকের রাজধানী ঢাকায় রয়েছে জেন্টস পার্লার ও রেস্টুরেন্টের ব্যবসা।

অভিযুক্ত আতিকুর রহমানকে তার বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি । মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ না করে পরক্ষনেই বন্ধ করে দেন ।
আতিকুর রহমানের ছোট বোন রাবেয়া খাতুন বলেন, আমার ভাই ঢাকায় থাকেন। সরকারি চাকরি ও ইটের ব্যবসা করেন। সাত-আট বছর মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়ী চালিয়েছেন। এখন ছোট-খাটো সাহেবের গাড়ী চালায়। বেঁচে থাকাবস্থায় মাকে দেখানোর জন্য ভাই বাড়িটি নির্মাণ করেছেন।

আতিকুর রহমানের মা ছাহেলা খাতুন বলেন, আমার ছেলে সরকারি চাকরি করে গাড়ী চালায়।পাশাপাশি ঢাকায় দুটি দোকান আছে পার্টনারে ব্যবসা করে। তিনি আরো বলেন, বাড়ি নির্মাণে আনুমানিক ২ কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়েছে । এখন আমার ছেলেটা চাপে আছে, বিভিন্ন লোকজন বাড়িতে এসে টাকা দাবী করে বলেও জানান তিনি।
সিংগাইর উপজেলা দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো.ইউনুস বলেন,আমাদের কাজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করা। তদন্ত করার এখতিয়ার আমাদের নেই। তবে এ বিষয়ে কেউ দুদকে অভিযোগ করলে কমিশন তদন্ত করে দেখবেন ।

এ ব্যাপারে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আজিজ উল্লাহ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, যদি কেউ এরকম হয়ে থাকে তবে সেটা সরকারিভাবে তদন্ত হবে,মামলা হবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এবং এ্যাকশন নিবে। এটা আমার দুদক চায়, পিপি হিসেবে আমিও চাই । আমাদের পিপিদের কাছে কোনো রেকর্ড না আসা পর্যন্ত আমলে নিতে পারি না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button