
সিরাজুল ইসলাম, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) : মানিকগঞ্জের সিংগাইরে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গভীর রাতে হামলা চালিয়ে ভেকু দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ চারটি বসতবাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছে। এ সময় মো. আবুল বাশার ওরফে বাহের (৭৫) ও তার ছেলে মো. আরিফ হোসেনকে (৩৩) ঘরে বন্দি রেখে মারধর করে গুরুতর আহত করে। তান্ডব চলাকালে ভুক্তভোগীরা ৯৯৯ ফোন করে ভুক্তভোগীরা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও থেমে থাকেনি সন্ত্রাসীদের কর্মযজ্ঞ । ফলে অসহায় হয়ে পড়ে ওই পরিবারসহ আশ পাশের লোকজন।
বুধবার (১১ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টা থেকে ৩ ঘন্টাব্যাপী উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে সন্ত্রাসীরা এ তান্ডব চালায়।
আহত মো. আবুল বাশার ওরফে বাহেরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার তারা রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এরই মধ্যে রাত ১ টার দিকে প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক (৭০) এবং তার দুই ছেলে মো. হাসেম (৪৫) ও জসিম (৩২), নাতি মো. রাজিব (১৮) এবং মেয়ের জামাই পাশর্^বর্তী ভাটিরচর গ্রামের সিরাজুল (৪৫) ও তার ছেলে কামরুল (১৯)সহ অজ্ঞাত আরও ৬০-৭০ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী প্রথমে বাহেরের ঘরের দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এরপর বাহেরের মাথায় কোপ দিয়ে রক্তাক্ত করে হাত-পা বেঁধে আটকিয়ে রাখে। শব্দ পেয়ে পাশের ঘর থেকে ছেলে আরিফ বের হতে গেলে তাকেও ঘরে আটকিয়ে মারধর করে এক হাত ও এক পা ভেঙ্গে দেয়। সন্ত্রাসীরা ঘরে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও প্রয়োজনীয় দলিলপত্রসহ গুরত্বপূর্ণ সব মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়।
অপরদিকে, মো. আব্দুল গফুর মোল্লার কাছে বাহেরের বিক্রি করা বাড়ির ভাড়াটিয়া ঘরে থাকা অবস্থায় ৯টি কক্ষ সম্পূর্ণ গুড়িয়ে দেয়। ভেঙ্গে ফেলে বাউন্ডারি দেয়াল । এতে রুমগুলোর ভাড়াটিয়াদের ব্যবহারের মূল্যবান মালামাল বের করতে না পারায় তারা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়াও পাশের মো.জাকির হোসেনের মালিকানাধীন শাহজালাল কেইন ফার্ণিচার কারখানা ভাঙ্গচুর করে ল্যাপটপ, কর্মচারিদের মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে নেয়। এ সময় মো. ফারুক হোসেনের বাউন্ডারি দেয়াল ও ঘর ভাংচুর করে তারা।
সন্ত্রাসীদের ভাংচুর চলাকালীন সময়ে মো. আব্দুল গফুর মোল্লা ৯৯৯ এ কল করলে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, দু’দফায় পুলিশ আসলেও তারা কোন পদক্ষেপ না নিয়ে পিছু হটে। বাহেরের চাচাতো বোন আব্দুল রাজ্জাকের স্ত্রী আউসির (৭০) সঙ্গে বিক্রি করা জমি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে চলা বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আহত বাহের ও তার ছেলে আরিফুল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে প্রতিপক্ষ হামলাকারীদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবী করেছেন।
এ প্রসঙ্গে ধল্লা পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এসআই মো. রফিকুল ইসলাম প্রথমে ঘটনাটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পরক্ষণে বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাইনি। তবে দেয়াল ভাঙ্গা ও একটি ভেকু দেখে ওসি স্যারকে জানাই। তিনি আমাকে কিলো পার্টি পাঠানোর কথা বলে চলে যেতে বলেন। তার পর সব ওসি স্যার বলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে সিংগাইর থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ মিজানুর ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এস আই রফিকের এ ধরণের বক্তব্য দেয়ার কথা নয় বলেও তিনি জানান।