sliderস্থানীয়

সিংগাইরের হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি ১৯ বছর পর গ্রেফতার

সিরাজুল ইসলাম, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ)প্রতিনিধি : ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যা করে দীর্ঘ ১৯ বছর পালিয়ে থেকেও শেষ রক্ষা হলোনা পাষন্ড স্বামী সিরাজুল ইসলামের (৪০) । মানিকগঞ্জ সিংগাইরের চাঞ্চল্যকর অন্তঃসত্ত্বা জুলেখা (১৯) হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি সিরাজুলকে ১৯ বছর পর বুধবার (২২ জুন) রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন চর সৈয়দপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস টিম।
গ্রেফতারকৃত সিরাজুলের বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর থানার বারাহির চর এলাকায়। মিরপুর ১ এ অবস্থিত র‌্যাব-৪ এর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী , ২০০২ সালের জুলাই মাসে গ্রেফতারকৃত আসামী সিরাজুল ইসলামের সাথে সিংগাইর উপজেলার উত্তর জামশা গ্রামের মোঃ আব্দুল জলিলের মেয়ে জুলেখা বেগমের পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে নগদ অর্থ, গহণা এবং আসবাবপত্র প্রদান করা হয়। এরপরও সিরাজুল স্ত্রী জুলেখাকে আরো যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। যৌতুক না দিলে তালাক দেওয়ার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। এরই মধ্যে জুলেখা ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। জুলেখার পরিবার থেকে কাঙ্খিত পর্যাপ্ত যৌতুক না পাওয়ার ফলে পারিবারিক কলহ আরো বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে সিরাজুল তার প্রতিবেশী মোশারফ নামের এক যুবকের সাথে স্ত্রীর পরকীয়ার সম্পর্কের মিথ্যা অপবাদ দেয়। বিষয়টি মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় গ্রাম্য সালিশে তাকে গালিগালাজ করে এবং স্ত্রীকে নির্যাতন না করতে সতর্ক করে দেয়া হয়। এ ঘটনার পর সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটে। পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি সিংগাইরের উত্তর জামশা গ্রামে যায়। পর দিন স্ত্রীকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে মানিকগঞ্জ শহরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে কৌশলে তার শ্বশুর বাড়ির নিকটবর্তী কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে নির্জন স্থানে তার ব্যাগে থাকা গামছা জুলেখার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে নদীর পাড়ে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ৭ ডিসেম্বর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মোঃ আব্দুল জলিল বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় সিরাজুলসহ তার বড় ভাই রফিকুল, মা রাবেয়া বেগম, খালু শামসুল, চাচা ফাইজুদ্দিন ও তাইজুদ্দিন এবং মামা আবুল হোসেন সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরবর্তীতে জুলেখাকে হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ২০০৫ সালের শেষের দিকে মানিকগঞ্জের বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মোতাহার হোসেন চার্জশীটে অভিযুক্ত আসামী সিরাজুলকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন এবং অপর ৩ আসামিকে বেকসুর খালাস দেন। উক্ত ঘটনার পর হতে আসামি সিরাজুল প্রায় ১৯ বছর পলাতক ছিল।
এদিকে, প্রথম স্ত্রী জুলেখাকে হত্যা করার পর সিরাজুল সাভারে কয়েকদিন আত্মগোপনে থাকে। ২০০৫ সালে সে পুনরায় বিয়ে করে। গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে আসামি সিরাজুল তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন চর সৈয়দপুর এলাকায় বসবাস করে আসছিল। বর্তমান সংসারে তার একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রী জুলেখাকে হত্যার পর থেকে সে আর কোনোদিন মানিকগঞ্জে আসেনি। স্ত্রীকে হত্যার পর আত্মগোপন এবং গ্রেফতার এড়ানোর জন্য সে কখনো শরিয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করতো। এক জায়গায় সে বেশিদিন অবস্থান করতো না। তাছাড়াও পরিচয় গোপনের উদ্দেশ্যে সে প্রতিনিয়ত পেশা পরিবর্তন করত। সে বিভিন্ন সময় রিকশা চালক, ফেরিওয়ালা, সবজি বিক্রেতা, কুলি, রাজমিস্ত্রি, ট্রাকচালক এবং পরিবহন অফিসের দালালি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। নারায়ণগঞ্জ চলে যাওয়ার পর নিজেকে আড়াল করার জন্য সিরাজ নামে নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন চর সৈয়দপুর গ্রাম’কে বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী করে।
এ বিষয়ে র‌্যাব জানায় গ্রেফতারকৃত সিরাজুলকে সিংগাইর থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button