sliderস্থানীয়

সাভারে স্কুলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থান

সোহেল রানা,সাভার (ঢাকা)প্রতিনিধি : রাজধানীর নিকটে সাভার উপজেলায় অধর চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভেতরে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে বিষয়টি অবগত নয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এতে ভর্তি হতে না পেরে তৃতীয় দিনের মত স্কুলটির প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছেন অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীরা। ভর্তির দাবিতে তারা স্কুলটির সামনের থানা রোড অবরোধ করে রেখেছে।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ১০ টার দিকে সাভার অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান নেয়। পরে ওই সড়কটি অবরোধ করে তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভার অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন ব্যবহার করে প্রাথমিক শাখা নামে বেসরকারি একটি স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয় সেখানে। ১৯৭৭ সাল থেকে সাভার অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক শাখা’ নামে বিদ্যালয়টি চলছে। তবে এবার সেই প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করা ছাত্র-ছাত্রীরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে গিয়ে বিপাকে পড়ে। লটারির মাধ্যমে ভর্তি হতে গিয়ে ছিটকে পড়ে প্রাথমিক শাখার ৬১ শিক্ষার্থী। পাসকৃত শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে না পারায় বিষয়টি সামনে আসে। ২০১৮ সালের মে মাসে সরকারীকরণ হয়। ফলে ২০১৯ সাল থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া সরকারি নিয়ম মেনে চলছে। ২০২০ থেকে লটারি মাধ্যমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যেহেতু প্রাথমিক শাখাটি সরকারি হয়নি ফলে সেখানকার শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভর্তি সুযোগ নেই। তবে এ বিষয়টিতে অবগত নয় অভিভাবকরা।

শিক্ষার্থীরা জানায়, বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখার প্রধান শিক্ষক মিসেস রোকেয়া হক আশ্বাস দিয়েছিলেন লটারি হলেও প্রাথমিক শাখার সকল শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক শাখায় ভর্তির সুযোগ পাবেন। কিন্তু আমরা প্রায় ৬১ জন শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাচ্ছি না। আমাদের বিভিন্ন মহল থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষায় রাখা হয়েছিল। একই বিদ্যালয়ে ভর্তির আশায় শিক্ষার্থীরা অন্য স্কুলে ভর্তির ফরম তোলেনি। এখন ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা তাদের। বিভিন্ন দপ্তরে পত্র পাঠিয়ে কাজ না হওয়ায় তাই বাধ্য হয়ে ১০ জানুয়ারি ঢাকা আরিচা মহাসড়কের থানা বাস স্ট্যান্ডে মানববন্ধন করার পর ১১ জানুয়ারি সকাল থেকে দুপুর এবং আজ ১২ জানুয়ারি সকাল থেকে স্কুলের সামনে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে অভিভাবক তাহেরা খানম রত্না বলেন, আমাদের সন্তানরা এই স্কুলে প্রাথমিক পর্যায় অতিক্রম করেছে। তারা এখানে ৫ থেকে ৬ বছর অতিবাহিত করেছে। তাদের মাইন্ড সেটআপ হয়েছে এখানে। হঠাৎ করে অন্য স্কুলে গেলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব পরবে এটাই স্বাভাবিক। তাই আমাদের দাবি এই স্কুলেই আমাদের সন্তানদের ভর্তির সুযোগ করে দিতে হবে।
শিক্ষার্থী দিহানের বাবা আবু দাউদ বলেন, আমাদের দাবি একটাই আমাদের সন্তান সাভার অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়েই ভর্তি হতে হবে। আমাদের সন্তানদের বঞ্চিত না করে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। সবাই ভর্তি হতে পারলে কেনো আমাদের এই ৬১ জন ভর্তি হতে পারবে না। এরাও তো এখানে প্রাথমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে।
তিনি বলেন,আজ ১২ জানুয়ারি সকালেও আমরা সাভার অধর চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সড়কে ছিলাম। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাসুদ চৌধুরী আমাদের সন্তানদের এই স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে দায়িত্ব নিয়ে আমাদের সরিয়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন পিটার গোমেজ বলেন,আমরা চেষ্টা করছি প্রাথমিক শাখাটি সরকারি করার জন্য। সরকারি না হওয়া পযন্ত পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে সরাসরি ভর্তির সুযোগ নেই। তবে শেষ পর্যন্ত যদি প্রাথমিক শাখাটি সরকারীকরণ না হয় তাহলে সেটা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই অবগত আছেন। যারা রাস্তায় নেমেছে তারা মূলত লটারি মানতে পারছে না।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, সরকারি নিয়ম মেনে ভর্তি করা হচ্ছে। সরকারি না হয়েও প্রাথমিক শাখাটি অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। মানুষ যাতে প্রতারিত না হয় সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। নতুন শাখা অনুমোদন হতে অন্তত এক বছর সময় লাগে। তখন প্রাথমিক শাখাও লটারির মাধ্যমে ভর্তি হতে হবে। তবে সাভারে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কোটা খালি আছে। সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে মেয়েরা ভর্তি হতে পারবে।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল মজিদ বলেন, বেসরকারি প্রাথমিক স্কুল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যে চলতে পারে না। সরকারের অনুমোদন লাগবে। উচ্চ বিদ্যালয় সরকারি অনুমোদনের সময় প্রাথমিক শাখার তথ্য হয়তো দেয়নি তারা। তথ্য দিলে প্রাথমিক শাখাসহ জাতীয়করণ হওয়ার কথা। আমি নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি আরো খোঁজ নিয়ে দেখছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button