
সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বরুদ্দোজ্জা চৌধুরী ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। শুক্রবার (৫ অক্টোবর) দিনগত রাত ৩টা ১৫ মিনিটে নিজের প্রতিষ্ঠিত উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। তার স্ত্রী, এক ছেলে ২ মেয়ে রয়েছে।
ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ায় গত ২ অক্টোবর সকালে বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেদিন তার মেয়ে ডা. শায়লা চৌধুরী জানান যে তার বাবা আগে থেকেই স্কিমিক হার্ট ডিজিজেস ভুগছিলেন।
অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন।
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী দেশের খ্যাতিমান চিকিৎসক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ বি. চৌধুরী ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরে (প্রখ্যাত ‘মুন্সেফ বাড়ি’) নানাবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাবা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৪৭ সালে ঢাকার বিখ্যাত স্কুল সেন্ট গ্রেগরি থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৫৪-৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। সব পরীক্ষাতেই তিনি মেধা তালিকায় ছিলেন।
এছাড়া তিনি যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ লন্ডন, এডিনবার্গ ও গ্লাসগো থেকে নির্বাচিত ফেলো-এফ.আর.সি.পি এবং বাংলাদেশের (সম্মানিত) এফ.সি.পি.এস। তিনি স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং বহু গ্রন্থের প্রণেতা।
বি. চৌধুরী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের অনুরোধে ১৯৭৮ সালে রাজনীতি শুরু করেন। তিনি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ১৯৭৯ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং কেবিনেট মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী ও পরে সংসদ উপনেতা হন। ১৯৯৬ সালে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০০১ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একই বছরের অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন।
২০০৪ সালের ৮ মে বি. চৌধুরী বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি দলটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
তার সহধর্মীনির নাম হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী। অধ্যাপক চৌধুরী দুই মেয়ে এবং এক ছেলের জনক। তার বড় মেয়ে মুনা চৌধুরী পেশায় একজন ব্যারিস্টার। ছোট মেয়ে শায়লা চৌধুরী পেশায় চিকিৎসক এবং ঢাকার উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা করেন। একমাত্র ছেলে মাহী বি. চৌধুরী রাজনীতিবিদ।
বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জানাজা কখন-কোথায়?
সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রথম নামাজে জানাজা আজ সকাল ৮টায় উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অনুষ্ঠিত হবে।
দ্বিতীয় জানাজা বাদ জোহর বারিধারা কূটনৈতিক এলাকার ৮ নম্বর সড়কে অবস্থিত বায়তুল আতিক জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে।
রোববার (৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় শ্রীনগর স্টেডিয়ামে তৃতীয় নামাজে জানাজা এবং বাদ জোহর গ্রামের বাড়ি মজিদপুর দয়হাটায় চতুর্থ নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।