sliderবিনোদনশিরোনাম

সাগর গর্ভে বিলীন হচ্ছে কুয়াকাটা ও সোনারচর

মু.জাবির হোসেন: বাস্তবমুখী পদক্ষেপ না নেয়ায় বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে আঘাতে ভেঙ্গে যাচ্ছে পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ও সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র সোনারচর। প্রাকৃতিক দূর্যোগে আক্রান্ত হয়ে ক্রমশই এই দুই পর্যটন কেন্দ্র তাদের সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে পর্যটন শিল্পে।
অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে কুয়াকাটার মুলাংশ সমুদ্র সৈকত। কুয়াকাটার মহাপরিকল্পনা নিয়ে তৎকালিন জেলা প্রশাসক অমিতাভ সরকারের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় একটি গেজেট প্রকাশ করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে। কিন্তু দেশী-বিদেশী পর্যটকদের সমাগম ছিল চোখে পরার মত। অব্যহত ভাঙনে সমুদ্র সৈকতের প্রস্থ কমে যাওয়া এবং জোয়ারের প্রভাবে উপস্থিত পর্যটকরা সমুদ্র সৈকতের বালু ভুমিতে নেমে প্রকৃত স্বাদ গ্রহন করতে পারছেনা। শত-শত পর্যটকরা দাড়িয়ে রয়েছে রাস্তার উপরে।
সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, বর্তমানে কুয়াকাটার ভাঙন এত তীব্র আকার ধারন করেছে জোয়ারের সময়ে কোন পর্যটক সী-বিচে নামার বিন্দুমাত্র সুযোগ নাই। রাস্তার মুলাংশের ভাঙন ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ বালুর বস্তা ফেলে রেখেছেন। কিন্তু তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছেনা। এক থেকে দেড় কিলোমিটারের প্রস্থ্য বর্তমানে ৫শ মিটারের পরিনত হয়েছে। বিগত দিনে ভাঙন ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিসি ঢালাই দিয়ে প্রাচীর নির্মান করলেও তা ছিল ক্ষনস্থায়ী। মুর্হুতেই সেই সিসির প্রাচীর সমুদ্রের বিলীন হয়ে গেছে।
এছাড়াও প্রাকৃতিক র্দূযোগে সমুদ্র সৈকতের এলাকা জুড়ে সবুজ বেষ্টনী অনেক আগেই সাগরে বিলীন হয়েছে। এরমধ্য রয়েছে খায়ের মিয়ার নারিকেল বাগান, ঝাউবাগান, বন বিভাগের ইকোর্পাক লেম্বুরচর এলাকার ম্যানগ্রোভ ও গেওরা বাগান এবং এলজিইডির বায়োগ্যাস প্লান্টসহ কুয়াকাটার একাধিক দর্শনীয় স্পটগুলো। বিংশ শতাব্দিতে সৌন্দার্য্য মন্ডিত এস্পট গুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করলেও ২০০৭ সালের সিডরের ভাঙনে এর সুচনা হয়। এর পর পরবর্তী একাধিক র্দূযোগে ক্রমশই বিণষ্ট হতে থাকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের দর্শনীয় স্পটগুলো। ফলে কুয়াকাটাকে নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
কুয়াকাটা ইলিশ পার্কের সত্ত্বাধিকারী রুমান ইমতিয়াজ রুষার জানান, কুয়াকাটাকে পর্যটন মূখি করতে হলে, সী-বিচ রক্ষার উদ্যোগ নেয়া দরকার। তা না হলে পর্যটন শিল্পে বিরুপ প্রভাব পরবে। ব্যবসা-বানিজ্য গুটিয়ে নিতে হবে একাধিক বিনিয়োগকারীদের। পাশাপাশি দ্রুত কুয়াকাটার উন্নয়ন নিয়া সরকারের যে মহাপরিকল্পনা রয়েছে তা সুষ্ঠুভাবে সম্পান্ন করতে সরকারের প্রতি আহবান জানাই।
পটুয়াখালী জেলার আরো একটি সম্ভবনাময় পর্যটন কেন্দ্র হলো সোনারচর। পটুয়াখালী জেলা বিচ্ছিন্ন নব্য উপজেলা রাঙ্গাবালীর পূর্ব ও দক্ষিণ কোনে বঙ্গোপসাগরের কোল জুড়ে এই দ্বীপটির নাম দেয়া হয়েছে সোনারচর। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি নানা মুখি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার। কিন্তু প্রাকৃতিক র্দূযোগের কবল থেকে রক্ষা করা যাচ্ছেনা এইপর্যটন কেন্দ্রটিকে। ক্রমশই সোনারচরের একাংশ বিলীন হয়ে যাচ্ছে বঙ্গোপসাগরের পেটে।
এই সোনারচরে রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট খাল, আর দিঘল বন ভুমিতে রয়েছে হরিন, বুনো মহিষ, পাতি হাস, শুকর, মোছোবাঘ,শৃগাল, নানা প্রজাতির সাপ এবং অতিথি পাখি। ৫ হাজার হেক্টর জমির মধ্য ২ হাজার হেক্টর জমি সংরক্ষিত বনাঞ্চলেও আওতায় এসে বন্য প্রানীর অভয়ারন্য করে বন বিভাগ। যাতায়াত পথ তুলনামুলক ভাবে অনেকটা দুর্গম হলেও সৌন্দর্যের নিপুন কারুকাজ সেই দুর্গমতাকে লাঘব করে দেয়। এছাড়াও রয়েছে স্থায়ী ও অস্থায়ী জেলে পল্লী ও দোকানপাট। সৌন্দর্য্য পিপাসুদের অনেকেই সোনার চরের রূপ দেখে প্রলুব্ধ হওয়া গল্প সোনা গেছে।
এছাড়াও একই স্থানে দাড়িয়ে উপভোগ করা যায় সূর্যাস্ত কিংবা সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য। পাশাপশি চরের ছোট ছোট চ্যানেল গুলোতে দেখা যাবে স্থানীয় জেলেদের মাছ শিকারের দৃশ্য। দূরদুরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে স্থানীয় বন বিভাগ কর্তৃক নির্মান করা হয়েছিল একটি গেষ্ট হাউজ, সমুদ্র সৈকতে কুল জুড়ে একটি সিসি সড়ক এবং টয়লেট। কিন্তু লাগামহীন প্রাকৃতি র্দূযোগে সাগরের বিলীন হয়ে গেছে সিসি সড়ক। পাশাপশি পূর্ব ও দক্ষিনাংশের বিশাল বনভুমি সমুদ্র সৈকতের আচরে পরে রয়েছে। সাগরের অব্যহত ভাঙনে যেমন জেলার এ সম্ভবনাময় পর্যটনকেন্দ্রটি অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে, তেমনি শ্রীহীন হয়ে পরছে। দীর্ঘ এক কিলোমিটারের সৈকতের প্রস্থ এখন দুশ গজে পরিনত হয়েছে। যত্রতত্র স্থানে পরে রয়েছে বিশালাকৃতির গাছ।
এদিকে কুয়াকাটার উন্নয়ন নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকটি দরপত্র আহবান করলেও তা নিয়ে মেয়রের বিরুদ্ধে রয়েছে নানাবিধ অভিযোগ। তবে এসকল অভিযোগ অস্বীকার করে পৌর মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, কুয়াকাটা পৌরসভা ইতিমধ্য ১২ থেকে ১৩ কোটি টাকার দরপত্রে মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে এবং পর্যটন এলাকার উন্নয়ন নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রক্রিয়াধিন এবং অনুমোদন হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ কোটি টাকার প্রকল্প।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ড. মাছুমুর রহমান জানান, কুয়াকাটাকে আর্ন্তজাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র করতে সরকার একটি মাষ্টার প্লান হাতে নিয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করতে আন্তঃমন্ত্রনালয়সহ সকল মন্ত্রনালয়ে আলোচনা চলছে। খুব শীঘ্রই কুয়াকাটাকে আধুনিকায়ন করতে বেশ কয়েকটি দপ্তর নানা মুখি প্রকল্প গ্রহন করবে। সুত্র : নয়া দিগন্ত

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button