পতাকা ডেস্ক: মোনাজাতউদ্দিন বাংলাদেশের মফস্বল সাংবাদিকতা জগতের একটি স্মরণীয় নাম। তিনি শুধু একজন সাংবাদিক ছিলেন না, নিজেই হয়ে উঠেছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান ও গবেষণার বিষয়বস্তু।
আজকের দিনের মতো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ডেস্কে বসে নাগরিক সাংবাদিকতা নয়, তিনি ছিলেন তৃণমূলের খেটে খাওয়া মানুষের সংবাদকর্মী, ছিলেন আপামর জনসাধারণের মুখপাত্র।
গতকাল ২৯ ডিসেম্বর ছিল বাংলার চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৫ সালের এ দিনে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের কালা সোনাচরের কাছে শেরেবাংলা ফেরি থেকে পড়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মফস্বলের হাজারও সংবাদকর্মীর প্রেরণার উৎস হয়ে হৃদ মাজারে থাকবেন তিনি। খবরের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা খবর, তথ্যানুসন্ধান ও রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে মোনাজাতউদ্দিন নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন আমাদের দেশীয় সাংবাদিকতার ইতিহাসে।
গ্রামের মেঠো পথে ঘুরে ঘুরে এ তথ্যানুসন্ধানী সংবাদকর্মী তার সাংবাদিক জীবনে করেছেন নানা ধরণের অসাধারণ সব রিপোর্ট। পাশাপাশি লিখেছেন জীবনের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ সব ঘটনা। তিনি তার কর্মের মাধ্যমেই অমর হয়ে থাকবেন প্রান্তিক জনপদের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়।
১৯৪৫ সালের ১৮ জানুয়ারি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন বরেণ্য এ সাংবাদিক। তৎকালীন সময়ে তিনি দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় কাজ করতেন। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি অর্জন করে নিয়েছেন ১৯৯৭ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর)।
এছাড়া তিনি আরও অনেক অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তবে মোনাজাত উদ্দিন এ পুরস্কারের চাইতেও বড় পুরস্কার মনে করতেন মানুষের স্নেহ-শ্রদ্ধা ও ভালবাসাকে, যা তিনি আমৃত্যুই পেয়েছেন।
৬০-এর দশকে বগুড়া থেকে প্রকাশিত বুলেটিনের মাধ্যমে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি ঘটে তার। কর্ম-জীবনে পরবর্তীতে তিনি ঢাকার দৈনিক আওয়াজ, দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ ও সর্বশেষে দৈনিক জনকণ্ঠে কাজ করেছেন।
তার সংবাদ ক্ষেত্র ছিল বাংলার মেঠো পথ, পিছিয়ে পড়া জনপদ। গ্রাম থেকে গ্রামের পথে হেটে দীর্ঘ জীবনে সঞ্চয় করেছেন অনেক অভিজ্ঞতা। আর এসব অভিজ্ঞতার আলোকেই লিখেছিলেন ১১টি বই।
দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন দৈনিক সংবাদে, সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন ‘দৈনিক রংপুর’ পত্রিকার। আজকের এইদিনে মহান এ মানুষকে স্মরণ করবে মফস্বল এবং শহরের হাজারও সংবাদকর্মী। যারা মোনাজাতউদ্দিনের রেখে যাওয়া কর্ম থেকে প্রতিনিয়তই শিখছে।
পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মোনাজাতউদ্দিন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন মর্মান্তিকভাবে। ১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর যমুনা নদীর ড্রেজিং পয়েন্টে, তিস্তামুখ ঘাট থেকে বাহাদুরাবাদ যাবার পথে রেলওয়ে ফেরির ছাদে উঠে ছবি তোলার সময় পা ফসকে নদীতে পড়ে গেলে তাঁর সলিল সমাধি ঘটে!
মফস্বল তথি চারণ সাংবাদিক মোনাতাজউদ্দিনের আত্মার প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসা।