sliderরাজনীতি

সরকার দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না : মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিনিধি : ক্ষমতায় আসতে পারবে না এই ভয়ে সরকার দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক তা চায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, ঘোষিত রোডম্যাপ সার্থক করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা না হলে সত্যি সত্যি এদেশের মানুষ পালাবার পথ দেবে না। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের খুব পরিষ্কার কথা, আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই, আগে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন, রাস্তা তৈরি করুন, তাহলে রোডম্যাপ দেয়াটা সার্থক হবে। অন্যথায় হবে না। নির্বাচনে যদি রাজনৈতিক দলগুলোই যেতে না পারে, আবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি মতো ওই কুকুর-ছাগল ভেড়া নিয়ে নির্বাচন করতে হবে, মানুষকে নিয়ে তো নির্বাচন করতে পারবেন না।
নয়া পল্টনে বিএনপির ঢাকা মহানগর কার্যালয়ের মওলানা ভাসানী মিলনায়তনে ‘বিএনপির ভিশন ২০৩০ : নারী সমাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতির মিশন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল।
সংগঠনের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় মহিলা দলের সিনিয়র সহসভাপতি নুর জাহান ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা ফরিদা মনি শহীদুল্লাহ, নূরুন্নাহার, শামুসন্নাহার ভুইয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশন গত রোববার একাদশ নির্বাচনের কর্ম পরিকল্পনা দিয়েছে। খুব ভালো কথা। রাস্তাটা কই? ইলেকশন করবে কে? রাজনৈতিক দলগুলোতো। তাদেরকে যে আপনি নির্বাচনে নিয়ে যাবেন, তার রাস্তা কোথায়? ম্যাপ দিয়ে দিচ্ছেন, এই করছেন, ওই করছেন, অথচ রাস্তাই নাই। সারাদেশে রাস্তা তো আপনারা খানা-খন্দক খুঁড়ে শেষ করে দিয়েছেন, প্র্যাকটিক্যালি গোটা ঢাকাতে তাই, বাংলাদেশেও তাই। সেভাবেই নির্বাচনের রাস্তাকে আপনারা খানা-খন্দক খুঁড়ে শেষ করে দিয়েছেন। নির্বাচনে যাতে বিরোধী দল যেতে না পারে, সেজন্য আপনারা ব্যবস্থা করছেন।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, এসব বাদ দিন, পথে আসুন। সব রাজনৈতিক দলের সাথে কথা বলে পথ বের করুন। আমরা বলতে চাই, তারা যে অপকর্ম করেছে, হত্যা-গুম-খুন-জখম করেছে, দুর্নীতি করেছে, লুট করেছে সেখানে তারা পালাবার পথ খুঁজে পাবেনা। পালাবার একটাই পথ আছে, সব রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তা না হলে সত্যি সত্যি এদেশের মানুষ পালাবার পথ দেবে না।
রাজনীতিতে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের প্রশংসা করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপিকে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী করতে পারেন এই নারীরা। গ্রামে আমাদের ভোটার বেশি নারীরা, দেশের সবচেয়ে বেশি ভোটার নারীরা। এটা কেনো? বিএনপির ধানের শীষ মহিলাদের স্বার্থের কথা ভাবে, মানুষের ভালোর কথা বলে, দেশের ভালো বলে এবং কাজ করে। এই দায়িত্বটা সবচেয়ে বেশি আপনাদের পালন করতে হবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনে প্রচণ্ড বাঁধা। এ সরকার চায় না যে, দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। এই সরকার চায় না যে আমরা নির্বাচনে যাই। কারণ ওরা জানে যে, আমরা যদি নির্বাচনে যাই আর আমাদের মা-বোনেরা ও ভাইয়েরা যদি ভোট দিতে পারে, তাহলে ওরা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তারা যত অপকর্ম করেছে, চুরি-চামারি করেছে, এগুলো দেখে জনগণ ওদের ভোট দেবে না।
বিএনপিকে সমাবেশ-সভা করতে দেয়া হচ্ছে না অভিযোগ এনে এর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন করার আগে নির্বাচনের পরিবেশ তো তৈরি করতে হবে। আপনি আমাকে রাস্তায় বের হতে দেবেন না, আপনি আমাকে মিটিং করতে দেবেন না, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিটিং করতে দেবেন না, কাউন্সিল করতে দেবেন না। এমনকি ‘ভিশন ২০৩০’ আলোচনা করার জন্য জেলাগুলোতে একটা জায়গা পর্যন্ত দেবেন না, ঢাকাতেও দেবেন না। অন্যদিকে আপনি বলবেন যে নির্বাচন করো।
গত ১৩ জুলাই রাতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের অনুষ্ঠানে পুলিশি বাধা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের কথা বাদ দিলাম। এই আ স ম আবদুর রব সাহেব ও অন্যান্য কয়েকট দল, ডা. বদরুদ্দোজার মতো মানুষ, ড. কামাল হোসেন সাহেবের মতো মানুষ তারা রাজনৈতিক আলোচনা করার জন্য আবদুর রব সাহেবের বাসা গিয়েছিলেন। পুলিশ সেখানে গিয়ে উপস্থিত। বলছে, মিটিং করতে পারবেন না। আমি এর আগে একদিন বলেছিলাম, এদেশটাকে এরা বাপের তালুকদারি মনে করে। সমস্যাটা এই জায়গায়। যে কারণে ওরাই সব কিছু করবে, মিটিং করবে, ইলেকশন করবে, বিনাভোটে নির্বাচন করবে, ক্ষমতায় যাবে, মন্ত্রী হবে, এমপি হবে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করবে। আমরা-আপনারা ওই সাধারণ মানুষ শুধু হাত তালি বাজাবো, হ্যাঁ বেশ বেশ। এটা হবে না। এটা গণতন্ত্র নয়।
সবাইকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী আরো বলেন, বোনেরা আমাদের সবাইকে জেগে উঠতে হবে। এটা আমার দেশ। জোর করে কেউ নিয়ে যায়, আমি কি ছেড়ে দেব। বর্গিরা জোর করে নিয়েছিল, ব্রিটিশরা জোর করে নিয়েছিল, পাকিস্তানিরা জোর করে নিয়েছিল, আমরা তো যুদ্ধ করে সেখান থেকে ফেরত আনছি। সুতরাং এটাকে আমরা ছেড়ে দেব না। আমরা গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই, আমাদেরকে প্রতিবাদ করতে হবে। সরকারকে বাধ্য করতে হবে সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটা অবাধ নির্বাচন করতে দিতে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button