sliderরাজনীতিশিরোনাম

সরকার দেশকে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের ভয়াবহ পঙ্কে ডুবিয়ে দিয়েছে

আজ সকালে সেগুনবাগিচায় সংহতি মিলনায়তনে বাম জোট আহুত সংবাদ সম্মেলনে জোটের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দেশ, জনগণ ও দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ গণসংগ্রামের পথে বিদ্যমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনকে বিদায় দিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার প্রতিষ্ঠা ও নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে বাম জোট গণআন্দোলন-গণসংগ্রাম জোরদার করার ঘোষণা প্রদান করেন। একই সাথে তিনি বাম জোট চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, দুর্বৃত্ত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মাফিয়া এবং মুনাফাখোর অসৎ বাজার সিণ্ডিকেটের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ জোরদার করারও আহ্বান জানান। তিনি জানান, সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ, অবস্থান, ঘেরাও ও হরতালের মাধ্যমে ধাপে ধাপে আন্দোলন বিকশিত ও শক্তিশালী করা হবে। ধারাবাহিক এই আন্দোলনে রাজপথে তিনি বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি ও জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, সরকার পরিচালনায় শাসক দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও নৈতিক জোর না থাকায় ক্রমে নৈরাজ্যের বিস্তার ঘটছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে যারা সরকারকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছে সরকার এখন তাদের কাছেই জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকার সমগ্র রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে তারা জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। হুদা কমিশন ও রকিব কমিশনের মত তারা আর একটি সরকার অনুগত নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। লক্ষ্য হচ্ছে নিজেদের নীলনক্সা অনুযায়ী আগামী নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া, নিজেদের জবরদস্তিমূলক অনৈতিক ক্ষমতা আরও প্রলম্বিত করা। এই অবস্থা চলতে দিলে দেশ আরও বড় বিপর্যয়ে নিপতিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক বলেন, সরকার দেশকে দুর্নীতি আর দুর্বৃত্তায়নের ভয়াবহ পঙ্কে নিমজ্জিত করেছে; দুর্নীতিকে তারা নীতি হিসাবে গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ক’দিন আগে মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম এর শত শত কোটি টাকার আয় বহির্ভূত অর্থ সম্পদের খতিয়ান জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম করে সরকারি প্লট পরিবর্তন, বন্ধুর নামে প্লট নিয়ে নিজে আমমোক্তার হওয়া, ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৬ লাখ কালো টাকা সাদা করাসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি’র রাজনৈতিক প্রভাবে কিভাবে তার ভাইয়েরাসহ পরিবারের সদস্যরা চাঁদপুরে সরকারের অধিগ্রহণকৃত জমির দাম বাড়িয়ে সরকারি কোষাগার থেকে বাড়তি কয়েক শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেবার পাঁয়তারা করছে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনে তা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। দুইজন কেবিনেট মন্ত্রীর বিরুদ্ধে গুরুতর এসব সুনির্দিষ্ট তথ্যভিত্তিক অভিযোগের ব্যাপারে এই পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দুর্নীতির তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে যেভাবে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে তা রীতিমত বিস্ময়কর। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটনকারী এই কর্মকর্তার অপসারণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক এর অবশিষ্ট নৈতিক অবস্থানকে ধ্বংস করেছে। এই ঘটনা দেশব্যাপী দুর্নীতিবাজ, দুর্বৃত্ত ও জবরদখলদারদের আরও উৎসাহিত করবে সন্দেহ নেই। দুদক পরোক্ষভাবে যে চিহ্নিত, দুর্নীতিবাজদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে তাও স্পষ্ট। বোঝা যাচ্ছে দুর্নীতিবাজেরা আজ খোদ দুদক এর মধ্যেই আশ্রয় গ্রহণ করেছে।
করোনা দুর্যোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বহুল আলোচিত অনিয়ম ও দুর্নীতির গোটা বিষয় এখন কার্যত: ধামাচাপা পড়ে আছে। এ্কই ধরনের গুরুতর সব অভিযোগ রয়েছে আরও অনেক মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। আলোড়ন সৃষ্টিকারী ক্যাসিনো দুর্নীতির বিশ^াসযোগ্য তদন্ত ও বিচারের অবস্থাও দীর্ঘসূত্রিতায় ঢাকা পড়ে আছে। সম্প্রতি আইনমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টার অডিও ফাঁসের মধ্যে দিয়ে অর্থ ও ব্যবসা সংক্রান্ত যেসব তথ্য এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে উচ্চ আদালতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত ও ব্যবহার করার যেসব কথা উঠে এসেছে তা দেশের জনগণের মধ্যে বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে; ক্ষমতার অবৈধ ও অনৈতিক ব্যবহারের প্রশ্নও সামনে চলে এসেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বা সরকারের দিক থেকে এসব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ও গ্রহণযোগ্য কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে জোটের সমন্বয়ক লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, সরকারের পক্ষে ভূমিকা রাখার জন্য সরকার বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে ‘লবিষ্ট ফার্ম’ রেখেছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর অতি সম্প্রতি সরকারের পক্ষে আইনজীবীও নিযুক্ত করা হয়েছে। নির্দিষ্টভাবে এসব লবিষ্ট ও আইনজীবীদের কি দায়িত্ব, কোন কোন বিষয়ে তারা ভূমিকা রাখছেন, তাদের জন্য রাষ্ট্রের ব্যয়ই বা কত দেশবাসীর কাছে সরকার এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করেনি। কিন্তু এসব নিয়ে অস্বচ্ছতার কোন সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, সরকারের কার্যকরি কোন নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং না থাকায় মুনাফাখোর ও দুর্নীতিবাজ অসৎ বাজার সিণ্ডিকেট দেশের মানুষকে পুরোপুরি জিম্মি করে ফেলেছে। আমদানিকারক, আড়তদার, মিলার, চাতালের মালিক, ফড়িয়া মধ্যস্বত্ত্বভোগী অসৎ ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন মানুষের পকেট থেকে বাড়তি শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের অশুভ আঁতাতের কারণে গোটা বাজার ব্যবস্থায় এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। দেশের মানুষ এই অবস্থা চলতে দিতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ কাফি রতন, বাসদ-মার্কসবাদীর সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মানস নন্দি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ওয়ার্কার্স পার্টি-মার্কসবাদীর সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা বাচ্চু ভূঁইয়া, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি হামিদুল হক, অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, শহীদুল ইসলাম সবুজ, জুলফিকার আলী প্রমুখ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button