
সত্যিই কি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একজন চা বিক্রেতা ছিলেন? দেশটির চলোমান লোকসভা নির্বাচনকে এমন প্রশ্ন এখন সারা ভারত জুড়ে। তাই নতুন করে দেখা দেয়া, এই বিতর্কের উত্তর খুঁজতে নেমে পড়েছেন দেশটির সাংবাদিকরা। এমন একটি তথ্যই উঠে এসেছে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে।
দেশটির মধ্যপ্রদেশের বডনগর স্টেশনে একটি মাত্র চায়ের দোকান তার সাক্ষ্য বইছে। যদিও চা সেখানে এখন আর মেলে না। শুধু একটি মাত্র ভাঙাচোরা টিনের ‘স্মারক’। আর তাতে লেখা— ‘নরেন্দ্র মোদীর চায়ের দোকান। আপনি সিসিটিভি-র নজরে।’
বেশ কয়েক বছর আগে এই স্টেশন চত্বরটিতে অনেক ভিড় হতো। সারিসারি দোকান ছিল চারপাশে। এখন সে সব নেই। বছর দুয়েক আগে খোদ নরেন্দ্র মোদি এসেছিলেন এই স্টেশন চত্বরে। মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে সংস্কৃতি মন্ত্রণায়ল ও রেল মন্ত্রণালয়ের সাথে মিলে যৌথভাবে ৮ কোটি টাকা খরচ করে গোটা স্টেশনটি নতুন করে সাজায়। কিন্তু ‘মোদি’র চায়ের দোকানটিকে অবিকল পুরনো অবস্থাতেই রাখা হয়েছে।
বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে তথ্য জানার অধিকারে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এই স্টেশনে নরেন্দ্র মোদী চা বেচেছেন, এমন কোনো প্রমাণ কি আছে? রেল মন্ত্রণালয়ের উত্তর ছিলো, না। মোদি সরকারের সেই জবাব ধামাচাপা দেয়ার করেছে।
তবে, কয়েকদিন আগেই ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল বলেছেন, `বডনগর স্টেশনটি আজও আছে। কিন্তু সেই কেটলি এখনো পর্যন্ত কেউ দেখেননি, মোদী যাতে চা বেচতেন। আজ পর্যন্ত কাউকে পাওয়া যায়নি, যিনি মোদীর কেটলি থেকে চা খেয়েছেন!’
সম্পর্ক তিক্ত হওয়ার আগে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রায় চার দশকের বন্ধুত্ব ছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রাক্তন নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়ার। তিনিও বলেছেন, `মোদীকে চা বেচতে কখনো দেখা যায়নি। শুধু সমীহ কাড়তে চা-ওয়ালা ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন!’
সত্যিই কি মোদী কখনও চা বেচেননি? চা বানিয়ে কাউকে খাওয়াননি? এই প্রশ্নের জবাব একমাত্র পুরনো লোকেরাই দিতে পারেন। কিন্তু স্টেশন চত্বরে তেমন লোক কই? গোটা স্টেশন এখন লাল পাথরে সাজছে। ভাঙাচোরা চায়ের দোকানের পাশে পুরনো টিকিট কাউন্টার। সেখানে উঁকি দিতেই কয়েকজন বের হলেন। কিন্তু তাঁরা ভিন্ন রাজ্যের শ্রমিক। তাই উপায় না দেখে, স্টেশনের বাইরে বের হতে হলো।
প্রথম যে দোকান পাওয়া গেল, সেটি রমনজি তাখাজির। দুই প্রজন্মের দোকান। রমনজির বয়সও ষাটের উপরে। প্রশ্নটি প্রথম তাকেই, নরেন্দ্র মোদীকে কখনো চা বানিয়ে বেচতে দেখেছেন? জবাব এল— `আমি তো কখনো দেখিনি। আগে দামোদরদাসের (মোদীর বাবা) চায়ের দোকান ছিল স্টেশনের বাইরে। যেখানে এখন চায়ের দোকান সাজিয়ে রাখা হয়েছে, সেখানে ছিলো না চায়ের দোকানটা। কিন্তু দেখুন, ওই এক চায়ের দোকান সাজানোর জন্য আশপাশের একশো দোকান উচ্ছেদ করে দিয়েছে। সকলে এখন বেকার।‘
কিন্তু কেউ কি দেখেছেন? এমন প্রশ্নে প্রবীণ দোকানি বলেন, `একটু দূরেই এক বৃদ্ধাশ্রম চালান মোদীর দাদা সোমভাই। সেখানে যান‘
‘শ্রী সাই ধাম‘ বৃদ্ধাশ্রম। ভিতরে ঢুকতেই আরাম কেদারায় জনা তিনেক বৃদ্ধ হাতজোড় করে বললেন, `জয় শ্রীকৃষ্ণ!‘ তাদেরই এক জন প্রজাপতি যাদব।
তার কাছেও একই প্রশ্ন করাতে উত্তর দিলেন, `আমরা তো দেখিনি, ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করুন।‘
বয়সে নবীন ম্যানেজার সচিন পটেল ঘোর বিজেপি সমর্থক। নির্দিধায় বলে দিলেন, দুটি ছাড়া গুজরাতের সব আসন যাবে বিজেপির ঝুলিতে। সোমভাই শহরে নেই। সচিনের কাছে উত্তরও নেই। কিন্তু উত্তর কে দিতে পারেন, তা নিয়ে ভাবলেন কিছু ক্ষণ। ফোনও করলেন কয়েক জনকে।
অবশেষে একটা ঠিকানা দিয়ে বললেন, `মোদীর স্কুলের সহপাঠীর কাছে যান। জাসুদ খান, ইনি পাঠান।‘
ঠিকানা ধরে ধরে মসজিদের নীচে এক দোকানে পাওয়া গেল জাসুদ খানকে। মোদীর সঙ্গে স্কুলে পড়েছেন দশ বছর। দু‘বছর আগে মোদী যখন বডনগরে এসেছিলেন, তখন দেখাও হয়েছে। মোবাইলে সে ছবিও দেখালেন। ব্যাঙ্ক থেকে অবসর নিয়ে এখন ছোট দোকান চালান।
আপনি দেখেছেন নরেন্দ্র মোদীকে চা বানাতে? এমন প্রশ্নে জাসুদ বললেন, `চা তো ও বানাত না! তার জন্য অন্য লোক ছিল। কিন্তু স্টেশনের পাশেই আমাদের বি এন হাইস্কুল। কদাচিৎ ছুটির পরে সময় পেলে বাবা-কাকাকে সাহায্য করতে যেত।‘
বাংলা