sliderস্থানীয়

সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু, প্রশাসনিক ব্যর্থতা নিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার স্টাটাস

হরিরামপুর মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : লিপু আর আমাদের মাঝে নেই! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন,লিপুর মৃত্যু কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়, আঞ্চলিক প্রশাসনিক ব্যর্থতার ফসল,
লিপু সড়ক দুর্ঘটনায় কিছুক্ষণ আগে ইন্তেকাল করেছে । লাইসেন্স বিহীন অবৈধ বালু বোঝাই মহেন্দ্র গাড়ি অবৈধ লাইসেন্স বিহীন অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক ওর শরীরের উপর দিয়ে উঠিয়ে দিয়েছে। এর দায় কোনভাবেই এড়ানো যায় না। বালু বোঝাই মাহিন্দ্র গাড়ির মালিক ছাত্রদলের এক নেতা।
Abdulla Sayem Lipu আমার নিকটতম প্রতিবেশী ছোট ভাতিজা, ওর পরিবারের সাথে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক, আমাকে কাকা বলে ডাকতো। বাবা-মার অতি আদরের একমাত্র ছেলে লিপু। লিপু রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছে, ওদের বয়সে যারা ছাত্রলীগ করত তাদের মধ্যে ও ছিল অন্যতম পুড়নো কর্মী।
গ্রামের সহজ সরল প্রকৃতির পরিবারের সন্তান লিপু। ওর বাবাকে শতকরা ১০০ ভাগ মানুষ ভালো সৎ বলে। এক সময় প্রচুর ধনসম্পদ থাকলেও নদীতে প্রায় সমস্ত জমিজমা ভেঙে গিয়েছে। ওর বাবার একমাত্র ভবিষ্যৎ অবলম্বন ছিল লিপু।
লিপু অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও ছাত্ররাজনীতিটা সততার সাথে করেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের জন্য ছিল সর্বদা নিবেদিত প্রাণ, স্বপ্ন ছিল একদিন অনেক বড় মাপের মানুষ হবে। হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ছিল আমাদের লিপু।
আমি গ্রামে গেলে চোখের আড়াল হতো না, অনেক কষ্টে ওকে বাসায় পাঠাতে হতো। আদর করে বলতাম, চাচ্চু আমার বন্ধুরা আসছে, এখন আমরা আড্ডা দিবো, তুমি এখন যাও কাকা!!!!
বাড়িতে গেলে আমার বাল্যবন্ধু রঞ্জন আর লিপু ছিল আমার সার্বক্ষণিক সঙ্গী।
লিপুর এই ছোট্ট জীবনে ছিল অনেক সংগ্রাম। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে পরাজিত হলো।।
মৃত্যু হল অনিবার্য বাস্তবতা।চিরন্তন সত্য। প্রত্যেক নর-নারীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।।
তবে লিপুর মৃত্যু কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়। হলফ করে বলা যায়, আঞ্চলিক প্রশাসনিক ব্যর্থতার ফসল।
আমাদের সমাজের একশ্রেণীর সচেতন মানুষ আজ থেকে প্রায় ১০ বছর যাবৎ বালু বুঝাই মাহিন্দ্র গাড়ী এবং ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালু ব্যবসার বিপক্ষে অবস্থান করছে। কিন্তু তাতে কি? ক্ষমতাবান কতিপয় কর্মকর্তা মূলত ব্যবসার মূল হোতা !!!
আমাদের হরিরামপুরের শান্তি প্রিয় মানুষ বংশ পরম্পরায় প্রশাসন লোক দেখে অনেকটা ভয় পায়, সমীহ সম্মান করে। রাজনৈতিক নেতার চাইতেও থানা পুলিশ সবসময় অনেক বেশি ক্ষমতাবান। এই জনপথে প্রশাসনের আশ্রয়-প্রশ্রয় ছাড়া কোন খারাপ কাজই সম্ভব নয়।
যাই হোক সে অনেক কথা, এসব কথা বলে নিরপরাধ লিপুকে তো আর ফিরানো যাবে না…. আল্লাহ যেন লিপুর পরিবারকে এই শোক সইবার শক্তি দেয়, লিপুর পরিবারের জন্য সমবেদনা রইলো। লিপুর মতো আর একটি প্রাণও যেন অকালে ঝরে না যায় সেজন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লিপুর জানাজার নামাজ আগামীকাল সকালে অনুষ্ঠিত হবে। লিপুর আত্মা শান্তি পাক সবাই এই দোয়া করবেন।
(স্টাটাসটি দিয়েছেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রাসেল হোসেন)

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিকেল তিনটার দিকে উপজেলার হরিরামপুর-ঝিটকা সড়কের আন্ধারমানিক এলাকায় ট্রাক্টরের ধাক্কায় আব্দুল্লাহ সায়েম লিপু (২৮) নামের মোটরসাইকেল আরোহী ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়েছেন ।
নিহত লিপু উপজেলার বয়ড়া ইউনিয়নের কর্মকান্দি বয়ড়া গ্রামের লালমদ্দিনের ছেলে।
লিপুর মামা উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক শহিদুর রহমান শহিদ বলেন, আজ বিকেলে হরিরামপুর-ঝিটকা আঞ্চলিক সড়কের আন্ধারমানিক এলাকার হামিদ মাস্টারের বাড়ির সামনে বালুবাহী ট্রাক্টর লিপুর মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় লিপুকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরবর্তীতে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি তানভীর সিদ্দিক বলেন, আব্দুল্লাহ সায়েম লিপু উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। সম্প্রতি হরিরামপুরে চালু হওয়া ওয়াল্টন প্লাজায় বিক্রয়কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এভাবে সড়কে হত্যা মেনে নেয়া যায় না।
লিপুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগ। সন্ধ্যায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. লুৎফর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান ফিরোজ স্বাক্ষরিত এক শোকবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। শোকবার্তায় গভীর শোক প্রকাশের পাশাপাশি লিপুর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তাঁরা।
হরিরামপুর থানার ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button