জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদদের রক্তের সাথে বেঈমানি করে সংস্কারের আগে দেশে কোনো নির্বাচন আয়োজন করতে দেয়া হবে না।
শুক্রবার রাতে রংপুর প্রেসক্লাব চত্ত্বরে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন রংপুর জেলা শাখা আয়োজিত বিভাগীয় রাষ্ট্র সংস্কার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক আইনজীবি হাসনাত কাইয়ূম।
সংগঠনের রংপুর জেলা শাখার সমন্বয়ক অধ্যাপক চিনু কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশটি পরিচালনা করেন ফরিদুল ইসলাম।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন লেখক-কলামিষ্ট ও সংগঠক নাহিদ হাসান।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির ন্যায়পাল অ্যাডভোকেট রায়হান কবীর, জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য সামিউল আলম রাসু, কনক রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সমন্বয়ক সাধনা মহল, রাষ্ট্র সংস্কার যুব আন্দোলনের সমন্বয়ক মাশকুর রাতুল, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি আহমেদ ইসহাক, বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসির উদ্দিন, সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভুমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সংগঠকবার্নাবাস টুডু সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসনাত কাইয়ূম নতুন বাংলাদেশের বিজয় যেন হাতছাড়া না হয় এবং তার সুফল যেন দেশের আপামর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দ্বারে পৌছানো যায়, সেজন্য রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সকল নেতা কর্মীদের আরো স্বোচ্চার ও সংগঠিত হবার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমরা ২০১৮ সালে রাষ্ট্র সংস্কারের সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছি। ছয় বছর পর এখন সবাই বলছে, রাষ্ট্র সংস্কার লাগবে। আমরা এখন একধাপ এগিয়ে নূন্যতম কী কী সংস্কার লাগবে এবং কিভাবে তা টেকসই করা যাবে, সে আলাপ করছি।
আজ আমরা বলছি, ১৯৪৬ ও ১৯৭০ সালের মতো একটি সংবিধান সংস্কার সভার নির্বাচন হচ্ছে সবচেয়ে কম ঝুঁকি ও বেশি স্থায়িত্বের পরীক্ষিত পথ। শত শত শহিদের রক্তের দায় আমাদেরকে মেটাতেই হবে।
রায়হান কবীর বলেন, শহিদ আবু সাঈদ এর রংপুরের ভূমি বিপ্লব বিদ্রোহ আর গণঅভ্যুত্থানের সুতিকাগার। আমরা রংপুর বিভাগ বৈষম্যের শিকার আর আমরা কোন বৈষম্য মানব না। রাষ্ট্র সংস্কার এর সাত দফা বাস্তবায়ন করে অবিলম্বে বৈষম্য বিলোপ করতে হবে।
ইমরান ইমন বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে লুটপাট ও স্বৈরতন্ত্র বাংলাদেশের জারি ছিল। কেউ যদি চায় আবার নতুন করে এই খেলায় মেতে উঠবে তা আমরা হতে দেব না। রাষ্ট্র সংস্কার করে দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর এমনভাবে করতে হবে ভবিষ্যতে আর কেউ যেন স্বৈরাচার হয়ে না উঠতে পারে।
নাহিদ হাসান সংবিধানের বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক ধারা উল্লেখ করে বলেন, সংবিধান সংস্কার ছাড়া রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর অসম্ভব।
বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত কোনো সরকারই জনগণ বা জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতার জবাবদিহি করেনি। আমাদের প্রায় সকল সমস্যার মূলে জবাবদিহিতাহীন সরকারব্যবস্থা।
শুধুমাত্র ফ্যাসিস্ট মাফিয়া শাসকদের সরানোর জন্য এতো মানুষ জীবন দেয়নি। মানুষ জীবন দিয়েছে এমন একটি ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে যাতে রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে আর কোনো শাসক আওয়ামী ফ্যাসিস্ট, মাফিয়া ও জুলুমবাজ হয়ে উঠতে না পারে।
শহিদ আবু সাঈদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হলে আজ আমাদের একটি জবাবদিহিমূলক মানবিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দরকার। গণ-আকাঙ্ক্ষার এই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য এই সাতটি ক্ষেত্রে সংস্কার করতে হবে।
ক্ষেত্রগুলো হলো নির্বাচন ব্যবস্থা, আইন বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং সাংবিধানিক ক্ষমতাকাঠামো।
সূত্র : বাসস