
শেষপর্যন্ত মরণোত্তর পদক পাচ্ছেন বিশিষ্ট গীতিকবি ফজল-এ-খোদা। তাকে এবারের ২১শে পদকে ভূষিত করা হচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দেওয়া যায়। উল্লেখ্য, ফজল-এ-খোদা ২০২১ সালের ৪ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
ফজল-এ-খোদা ছিলেন বহু গুনের অধিকারী। তিনি একাধারে ছিলেন গীতিকার, শিশু-সাহিত্যিক শাপলা-শালুকের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ বেতারের সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা।
তার লেখা ও আবদুল জব্বারের গাওয়া ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি ২০০৬ সালে বিবিসি’র সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের সেরা ২০টির মধ্যে ১২তম স্থান পায়। তবুও কালজয়ী গীতিকার ফজল-এ-খোদা জীবিত অবস্থায় কোন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পাননি। এ নিয়ে দোস্ত আনওয়ারুল কবীর বুলুসহ অনেকেই লেখালিখি করেছেন। আমিও দুবার লেখা পোস্ট করেছি। সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। তার সাথে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে, যা ভবিষ্যতে স্মৃতিকথায় লিপিবদ্ধ করবো।
ফজল-এ-খোদার জন্ম ১৯৪১ সালের ৯ মার্চ পাবনার বেড়া উপজেলার বনগ্রামে। বাবা মুহাম্মদ খোদা বক্স এবং মা মোসাম্মাৎ জয়নবুন্নেছার প্রথম সন্তান তিনি। তার কর্মজীবন শুরু বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার হিসেবে ১৯৬৩ সালে। ৬৪-তে তিনি তালিকাভুক্ত হন টেলিভিশনে। তাঁর লেখা অসংখ্য গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তারমধ্যে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি মুক্তিযুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছিল। ১৯৭১-এ অসহযোগ অন্দোলন চলাকালে তার লেখা গণসংগীত ‘সংগ্রাম, সংগ্রাম, সংগ্রাম চলবে, দিন রাত অবিরাম’ গানটি তৎকালীন টেলিভিশনে নিয়মিত প্রচারিত হতো।
ফজল-এ-খোদার অসংখ্য কালজয়ী গান এখনও মানুষকে আন্দোলিত করে। ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে, ভালবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না, কলসি কাঁধে ঘাটে যায় কোন রূপসী, বাসন্তী রং শাড়ি পড়ে কোন রমণী চলে যায়, আমি প্রদীপের মতো রাত জেগে জেগে, প্রেমের এক নাম জীবন, ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো, পথের ধুলোয় লুটাবে, ডোরা কাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়’-সহ অজস্র গানের রচয়িতা ফজল-এ-খোদার গান প্রয়াত বশীর আহমেদ, আবদুল জাব্বার, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, রথীন্দ্রনাথ রায়ের মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের কণ্ঠে দর্শক শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেছে। আজাদ রহমান, আব্দুল আহাদ, ধীর আলী, সুবল দাস, কমল দাশগুপ্ত, আবেদ হোসেন খান, অজিত রায়, দেবু ভট্টাচার্য, সত্য সাহার মত সঙ্গীতজ্ঞ ফজল-এ-খোদার গানে সুর করেছেন।
মূলত ছড়া দিয়ে তার লেখালিখি শুরু। তার রচিত ছড়াগ্রন্থের সংখ্যা ১০টি আর কবিতা গ্রন্থ ৫টি। গান, নাটক, প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য নিয়ে তার সর্বমোট বইয়ের সংখ্যা ৩৩। সত্তর দশকে শিশু কিশোরদের মাসিক পত্রিকা ‘শাপলা শালুক’ ফজল-এ-খোদা’র নিপুণ সম্পদনায় প্রকাশিত হতো। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নৃশংসভাবে খুনের শিকার হলে ফজল-এ-খোদা তার দুঃখ ও ক্ষোভ গানের মাধ্যমে প্রকাশ করেন, যা সে সময়ের জন্য ছিল কল্পনাতীত। বশীর আহমদের সুরারোপে আবদুল জাব্বারের গাওয়া ফজল-এ-খোদার সেই গানটি ছিলো ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মত/পথের ধুলোয় লুটোবে/সাত রঙে রাঙা স্বপ্ন-বিহংগ/সহসা পাখনা লুটোবে/এমনতো কথা ছিলো না’। গানটি ১৯৭৬ সালে রেকর্ড করা হয় এবং বেতারে প্রচারিত হয়।
© আহমেদ জহুর, কবি, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক