sliderমতামতশিরোনাম

শুভ্র আলোয় এক নীল তক্ষক!

শাহীন রাজা : শ্বেত, শুভ্র আলোয় এক নীল তক্ষক! যার কলমে’র কলমের ছোঁয়ায় দাউ, দাউ করে জ্বলে উঠেছে বাংলাদেশ। নীল বিষে, অবশ হয়ে ওঠে বাংলাদেশ।
বিষ নামাতে ডেকে আনা হয়েছে, ওঝা ! জানি না কি হয় ? হয়-তো নতুন আলো। এবং নতুন বাংলাদেশ। এই আশা নিয়েই আমাদের আবার নতুন যাত্রা।

এক যুগ ধরে বাংলাদেশে এক ভয়াবহ সংকট শুরু হয়। এই সংকটের প্রধান রূপকার, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক।
লোকটা দেখতে শুনতে মন্দ নয়। সন্তু রূপী এক দানব। তাঁর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, রায়ের কারণে সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে যায়। দেশ থেকে বিতারিত হয় গণতন্ত্র। মানুষ হারায় তার ভোটের অধিকার। এর সবটাই দায় ভার সাবেক প্রধান বিচারপতি, খায়রুল হকের।
একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য হাইকোর্টের আপিল এই রায় রিভিউ করার অনুরোধ। এটা যতটা দ্রুত সম্ভব।

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরে আসলে নির্বাচনে বিশ্বাস, অবিশ্বাসের শঙ্কা নির্মুল হবে। বাংলাদেশের জনগণ নির্বিঘ্নে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে। এবং শুরু হবে গণতন্ত্রের শুভ যাত্রা। তাই অনুরোধ দ্রুত আপিল বিভাগে এই রায়টি রিভিউ-এর ব্যবস্থা নেয়া।
খায়রুল হকের অশুভ যাত্রা শুরু হয়, ২০০৫ সালের ২৯ আগষ্ট। মুন সিনেমা হলের রায় দিতে যেয়ে, পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দেন। বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর-ও তাঁর সহযোগী ছিলেন। মুন সিনমা হলে’র রায় দিতে যেয়ে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ছিল উদ্দেশ্য প্রণোদিত। পরবর্তীতে তাঁর কার্যক্রমে এই আর-ও প্রথিত হয়। এবং এই সময় থেকেই বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার যাত্রা শুরু হয় !

এবং তৎকালীন বিএনপি সরকারের আইনমন্ত্রী ছিলেন মওদুদ আহমেদ। এব্যাপারে তিনি ছিলেন একেবারেই নিঃশব্দ! বিএনপি সরকারকে-ও তেমন কোন উদ্যোগ নেয়নি। সবটাই এক অজানা রহস্য!
২০১১ সালের ১০ মে সাবেক প্রধান বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দেযন। এছাড়াও ঐ রায়ে বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করা হয়।
আদালত তবে ঐ দিন সংক্ষিপ্ত আদেশে বলেছিলেন, সংসদ চাইলে দুটি নির্বাচন এ ব্যবস্থায় (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে) হতে পারে।’

সংক্ষিপ্ত আদেশটি দেয়ার পর সরকার পক্ষ থেকেও একই দাবি করা হয়। বলা হয়, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি আদালত বাতিল করেছেন। আদালতের রায়কে অস্বীকার করা কখনো সম্ভব নয়। আইনের শাসন মানলে আদালতের রায় মেনে চলতে হবে।
রায়ের পর্যবেক্ষণ অংশে বলা হয়েছে, সংসদ মনে করলে পরবর্তী দুই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আসতে পারে। তবে বিচার বিভাগকে জড়িত করা যাবে না।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।

মহাজোট ক্ষমতায় আসার বছরখানেক পর ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ জিয়াউর রহমানের আমলে করা পঞ্চম সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করে। এরপরই সংবিধান সংশোধনের তোড়জাড় শুরু হয়। আপাতদৃষ্টে মনে হয়েছিল, সামরিক শাসনামলে সংবিধানে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছিল, সেগুলো সংশোধনের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এমন উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেও তেমন ইঙ্গিত ছিল।

২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই এ মামলার শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১১ সালের ১ মার্চ শুরু হয়ে মাত্র ১০ কার্যদিবসে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলার শুনানি শেষ হয় এবং বিচারপতি খায়রুল হকের অবসরে যাওয়ার মাত্র আট দিন আগে একটি সংক্ষিপ্ত আদেশ দেওয়া হয়। প্রায় ১৬ মাস পরে দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আদেশের পার্থক্য দেখা যায়। দুই টার্ম তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা থাকার বিষয়টি আর উল্লেখ হয়নি !
লেখক:সিনিয়র সাংবাদিক

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button