উপমহাদেশশিরোনাম

শিলিগুড়ি করিডর দখল করে নেবে চীন : উদ্বিগ্ন ভারত

শিলিগুড়ি করিডর নিয়ে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন ভারতের সামরিক বাহিনী। কারণ চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী মনোভাব। যেভাবে ভুটান, সিকিমের নাকের ডগায় এসে চীনের পিপলস লিবারেশন অফ আর্মি (পিএলএ) নিয়ম করে মহড়া দিচ্ছে, পরিকাঠামো নির্মাণ করছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ক্রমাগত উত্তেজনা ছড়াচ্ছে তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান সুনীল লানবা এই আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেছেন, শিলিগুড়ি করিডরের ভৌগোলিক অবস্থান যথেষ্ট চিন্তায় ফেলছে। সামরিক বাহিনীর পরিভাষায় ‘চিকেন নেক’ শিলিগুড়ির ভৌগোলিক অবস্থানের সুযোগ নিয়ে কোনো বিশেষ প্ল্যান নিয়ে চীন এগোচ্ছে কিনা সেটাই স্পষ্ট নয়। তবে শিলিগুড়ি করিডর যে চীনের নজরে রয়েছে সে ব্যাপারে নৌসেনা প্রধান নিশ্চিত। ভারতীয় মিডিয়ায় এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।
ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান বলেন, সামরিকভাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে চীনের আগ্রাসন যেভাবে বেড়ে চলেছে তার সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো দোকালাম ইস্যু। চীনের সামরিক শক্তির সম্প্রসারণ সাম্প্রতিককালে বিপুলভাবে বেড়ে চলেছে। একইসঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে প্রভাবিত করার জন্য চীন এখন অনেক বেশি সক্রিয়। এই দু’টি কৌশলের প্রকাশ্য আস্ফালনেই আরো বেশি করে সন্দেহের উৎপত্তি হচ্ছে দিল্লির। বিশেষ করে নৌবাহিনী প্রধান শিলিগুড়ি করিডর নিয়ে এভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছেন তাহলে কি সিকিম, ভুটান, দার্জিলিং নিয়ে চীনের কোনো বৃহত্তম প্ল্যানের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না দিল্লি? উল্লেখ্য, গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন দার্জিলিঙে আগুন জ্বালিয়ে পাহাড়কে বাকি সমতলভূমির থেকে পৃথক করে দেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেছিল বিমল গুরুং বাহিনী। সেই সময় লাগাতার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, দার্জিলিং এবং শিলিগুড়ির অবস্থানগত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কিছু বহিরাগত শক্তি বড়সড় আঘাত হানতে পারে।
মমতা কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করে বলেছিলেন উত্তর পূর্ব ভারতের সঙ্গে গোটা ভারতের যোগসূত্রের করিডর হলো শিলিগুড়ি। সুতরাং সেই নিরিখে এই অশান্তি যথেষ্ট উদ্বেগের। আজ প্রায় সেই সুরেই ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান বলেছেন, উত্তর পূর্ব ভারতের সঙ্গে ভারতের সংযোগের অন্যতম প্রধান করিডর হলো শিলিগুড়ি। তাই চীনের এই অংশে এত বেশি সক্রিয়তা ও আস্ফালন আমাদের চিন্তায় ফেলছে। এর পাশাপাশি বুধবারই ভারতীয় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত বলেছেন, দোকালাম নিয়ে এখন আর তেমন চিন্তার কিছু নেই। সমস্যার মীমাংসা হয়েছে। আমরাও যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবিলায় তৈরি।
অন্যদিকে, ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধানের শিলিগুড়ি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে প্রশ্ন উঠছে, আচমকা কেন সামরিক বাহিনী শিলিগুড়ি করিডর নিয়ে এতটা উদ্বিগ্ন? কোনো বিশেষ সঙ্কেত কী পাওয়া যাচ্ছে? উদ্বেগ বাড়ার কারণ হলো সম্প্রতি আবার চীনের জে টেন, জে ইলেভেন সিঙ্গল সিটার টুইন ইঞ্জিন জেট ফাইটার উত্তর পূর্ব ভারত লাগোয়া সীমান্তের অকাশে চক্কর দিয়েছে। এই প্রশ্ন উত্থাপনের কারণ হলো সম্প্রতি সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখলে খুব গোপনে ভুটানে গিয়েছিলেন। নিঃশব্দ সেই সফরের বিশেষ উদ্দেশ্য থাকলেও কোনো সরকারি অ্যাজেন্ডা ছিল না। এমনকী সফর শেষে কোনোরকম বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। জানা গিয়েছিল সরকারের এই তিন সর্বোচ্চ পদাধিকারী ভুটানের রাজার সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেছেন। সেখানে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে তাও অজানা। কোনো পক্ষই মুখ খোলেনি।
এদিকে মালদ্বীপের অশান্তির সূত্র ধরে আগ বাড়িয়ে ভারত মহাসাগরে চীনের যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনীও তাদের যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে দেয়। ফলে পিছু হঠতে বাধ্য হয় চীনা নৌবাহিনী। সূত্রের খবর, এরপরই মালদ্বীপ অভিমুখ থেকে সরে গিয়ে চীনা নৌবাহিনী দক্ষিণ সাগরের দিকে সরে পড়ে। অন্যদিকে, ভারতীয় নৌবাহিনী আরব সাগরে বিশাল মহড়া শুরু করে জানিয়ে দেয় নয়াদিল্লি একচুলও জমি হারাতে নারাজ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button