sliderস্থানীয়

শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে এসে পদে পদে ভোগান্তিতে রোগী

এম এ কাইয়ুম চৌধুরী, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রায় ৯ বছর আগে নির্মিত হয় মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন। কিন্তু ৮ কোটি ৮২ লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচে নির্মিত ভবনটিও সেবাপ্রত্যাশী মানুষের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ। জনসাধারণের অভিযোগ, এখানে এসে তাদের সেবা নিতে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। যদিও এ জন্য জনবল, ওষুধ ও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির সংকটকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

শিবালয়ের ৭টি ইউনিয়নের বসবাস করেন প্রায় ৫ লাখ মানুষ। তাদের সুবিধার জন্য ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১৫ সালের ২৫ জুন ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। সূত্র জানায়, এখানে শীত মৌসুমে গড়ে ৪০-৫০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। গরমকালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০-৬০ জনে। তখন শয্যা সংকটে অনেক রোগীকেই থাকতে হয় মেঝেতে। এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী আসেন সেবা নিতে। তাদের সেবা দিতে ২৪ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। অথচ ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও ৫০ শয্যার হাসপাতাল চালু করতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, অন্যান্য কর্মী ও ওষুধ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৯টি মেডিকেল অফিসার পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র পাঁচজন।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখানে ২৩ সিনিয়ার স্টাফ নার্স থাকার কথা থাকলেও আছেন ১৪ জন। ২৯ জন স্বাস্থ্য সহকারী জায়গায় ২২ জন আছেন, অফিস সহায়কের চারটি পদের বিপরীতে একজনও নেই। ওয়ার্ডবয়ের তিনটি পদের মধ্যে আছেন একজন। দু’টি বাবুর্চি পদের বিপরীতে একজনও নেই। দু’জন আয়া থাকার কথা থাকলেও আছেন একজন। কোনো মালী নেই। পাঁচজন পরিছন্নতা কর্মীর মধ্যে আছে তিনজন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য ২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট অতিরিক্ত ১৯ শয্যার মূল ভবন ও ডরমিটরি ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ ছাড়া চিকিৎসক, কনসালট্যান্ট, নার্স ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি নির্মাণকাজ শেষ করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বঙ্গ বিল্ডার্স লিমিটেড। তারা ওই বছরের ২৫ জুন কর্তৃপক্ষের কাছে নতুন ভবনগুলো বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ এখনও হয়নি। এ ছাড়া আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, মলমূত্র, এক্স-রে,রক্ত পরীক্ষার যন্ত্রসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ওষুধপত্রও বরাদ্দ হয়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আনিছুর রহমানের ভাষ্য, প্রয়োজনীয় জনবল, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, ওষুধপত্রসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে এখানে। ফলে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও রোগীরা যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। শুধু সরকারিভাবে চালু করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পাঁচজন মেডিকেল অফিসারের বাইরে আরও দু’জন চিকিৎসককে এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা প্রেষণে অন্য জায়গায় কর্মরত। এ হাসপাতালে শিশু বিভাগ, পঙ্গু বিভাগ, অর্থোপেডিক্স বিভাগ, চক্ষু বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। এমনকি, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার (আরএমও) পদটিও খালি।

মানিকগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সির্ভিল সার্জন ডা. মোকছেদুর মোমিন বলেন, শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল নিয়োগ দেওয়া যায়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগের চেষ্টা চলছে। কয়েকজন চিকিৎসক প্রেষণে থাকায় বেশি সমস্যা হচ্ছে। জনবল, ওষুধপত্র ও যন্ত্রপাতি পাওয়া গেলে এখানে রোগীদের সমস্য আর থাকবে না।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button