sliderস্থানীয়

লালপুরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল

নাটোর প্রতিনিধি : উত্তারাঞ্চলে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায় অনেকেই বিনিয়োগে আগ্রহ দেখান না। তৈরি হয় না নতুন উদ্যোক্তা। বেকারের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি তাই পিছিয়ে পড়ছিলো দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো। তবে আশার আলো জেগে উঠেছিল নাটোরের লালপুরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইকোনমিক জোন) প্রতিষ্ঠার ঘোষণার মধ্য দিয়ে । নাটোরবাসী ভেবেছিল দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি গড়ে উঠবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। খুলে যাবে কর্মসংস্থানের দুয়ার। কিন্তু অনুমোদনের ৭টি বছর পেরিয়ে গেলেও উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি । ফলে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইকোনমিক জোন) প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল
উত্তারাঞ্চলের নাটোর জেলায় গড়ে তোলা হবে অর্থনৈতিক অঞ্চল। এতে আশপাশের জেলার মানুষেরাও কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আর্থিকভাবে হবেন স্বাবলম্বী এ আশায় বুক বেঁধে ছিল নাটোরবাসী । বিপুল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির হাতছানির মধ্যেই এগিয়ে চলেছে নাটোরের লালপুর উপজেলায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইকোনমিক জোন) প্রতিষ্ঠার কাজ। শুরুতে কাগজে-কলমে থাকলেও এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি বাস্তবায়ন এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। এ সময় কতদিনে হবে তা জানে না কেউ । ইতমধ্যে এটি স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে এরই মধ্যে এলাকাটি সফর করেছে ভারতের একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দলস্থানীয় রেলওয়ে, সওজ (সড়ক ও জনপথ), বিদ্যুৎ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, বিমানবন্দর, গ্যাস কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন শেষে ভারতীয় পরামর্শক দল সে সময় সাংবাদিকদের জানান, একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মতো প্রচুর জমি, সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা, গ্যাস-বিদ্যুতের সহজলভ্যতা, কাঁচামাল প্রাপ্তিসহ প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধাই রয়েছে নাটোরের লালপুরে পদ্মার চর এলাকায়। দলটির সদস্য অভিষেক মুখার্জি জানান, লালপুরে পদ্মার চরে নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য সব সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এলাকার হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। এতে এলাকারও উন্নয়ন ঘটবে।
২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেপজার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী ও নাটোর জেলায় দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দেন।২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর বেজার নির্বাহী সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ এনডিসি এবং ২৫ ডিসেম্বর নির্বাহী সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব এসএম শওকত আলী প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করে জানান, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সকল সুযোগ সুবিধাই ওখানে রয়েছে।
তারা আরও জানান, কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অঞ্চলে ইলেক্ট্রনিক পণ্যের কারখানাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে।লালপুর উপজেলায় মূলত কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক জোন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অর্থনৈতিক জোন হলে এখানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিজ পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়ে যাবে। ফলে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠবে। দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তাদের আহ্বান করা হবে। পাঁচ-সাত হাজার বেকার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
লালপুর উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি উপজেলার লালপুর, বালিতিতা, বাকনাই, আরজি বাকনাই, রসুলপুর, চরজাজিরা ও বন্দোবস্ত গোবিন্দপুর মৌজার মোট ৩৪১৮.৪৬ একর জায়গার ওপর করার প্রস্তাব করা হয়েছে।প্রস্তাবিত জমি পয়স্তি খাস। ঈশ্বরদী-বাঘা-রাজশাহী জাতীয় সড়ক প্রকল্প থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। প্রকল্প এলাকা থেকে মূল পদ্মা নদীর দূরত্ব পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার। ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনের দূরত্ব ১৫ কিমি। ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের দূরত্ব ১০ কিমি। মূল পদ্মা নদীকে নদীবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা বা ব্যবহার করা যাবে।প্রস্তাবিত স্থানে ব্যক্তিগত ভূস¤পত্তি রয়েছে ২৯৫১.১২ একর, খাস জমি ৩৯৭.৩৪ একর এবং বন্দোবস্ত গোবিন্দপুর মৌজায় মোট ৭০ একর।
পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরদী উপজেলায় গ্যাসলাইন থাকায় গ্যাস সংযোগের সুবিধা পাওয়া যাবে। কৃষিনির্ভর এলাকা হওয়ায় প্রয়োজনীয় কাঁচামালের পর্যাপ্ত সুবিধা পাওয়া যাবে। প্রস্তাবিত স্থানকে বন্যামুক্ত উচ্চতায় উন্নীত করতে আনুমানিক চার থেকে পাঁচ ফুট মাটি ভরাটের প্রয়োজন হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ ড. ইলিয়াস আলী জানান,রাজশাহী ও নাটোরও ছিল। অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের ব্যবসা ও অর্থনীতির রক্ত সঞ্চালন শুরু হবে বলে মনে করেন ।তিনি বলেন, অর্থনীতিতে যেমন প্রাণ ফিরে পাবে, ঠিক তেমনি নতুন উদ্যোক্তাও তৈরি হবে। ব্যবসায়ীরা পাবেন বিশেষ কিছু সুবিধা। তৈরি হবে কর্মসংস্থানের বিশাল ক্ষেত্র। দেশীয় কাঁচামাল ভিত্তিক শিল্প গড়ে ওঠার অপার সম্ভবানাও আছে। সবমিলিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল আর্শীবাদস্বরূপ।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শিগগিরই নাটোরে আসবেন। এরপর এই প্রকল্পটি চূড়ান্ত রূপ পাবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল এমপি জানান, প্রস্তাবিত নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল লালপুর তথা নাটোরবাসীর কাছে সময়ের দাবি এবং আশীর্বাদস্বরূপ। এতে এলাকার হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। স্থানীয় অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button