লাভ ইন দ্য টাইম অব করোনাভাইরাস!
করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত চীনে যাবতীয় উৎসবে এখন কালো ছায়া। দেশটির সবচেয়ে বড় উৎসব চীনা চন্দ্র বর্ষ উদ্যাপনের সময় ভাইরাসটিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকে মানুষ। মৃত্যুর সংখ্যা এখন দেড় হাজার ছুঁতে বাকি। আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫ হাজার।
ছোঁয়াচে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাময়িকভাবে বিয়ের অনুষ্ঠানেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন। জন্মদিনের পার্টি থেকে শুরু করে যে কোনো উপলক্ষে আজ শুধুই শোক। কোথাও কয়েকজন মিলে আড্ডায় মেতে উঠবে সে সুযোগও এখন বন্ধ চীনা নাগরিকদের।
এর মধ্যে বিশ্বব্যাপী চলছে ভ্যালেন্টাইনস ডে মানে ভালোবাসা দিবস। বিশ্বের তরুণ-তরুণীদের মনে আনে প্রেমের জোয়ার, ভালোবাসার আনন্দ। স্বাভাবিকভাবেই চীনা নাগরিকেরাও এমন দিনে মেতে ওঠেন উদ্যাপনে। প্রিয়জনের সঙ্গে কাটান দারুণ মুহূর্ত, পরিবার থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে খুশির উচ্ছলতা, যা আজ সবই ম্রিয়মান।
সাউথ চাইনা মর্নিং পোস্ট জানায়, চীনে এবার ভালোবাসার দিন আসল কভিড-১৯ নামে করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। বিশেষ করে ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশ এখনো গোটা চীন থেকে বিচ্ছিন্ন। প্রদেশটির রাজধানী উহানসহ বেশ কয়েকটি শহর রীতিমতো অবরুদ্ধ। রাজধানী বেইজিং, সাংহাইসহ অনেক শহরের বন্ধ ফুলের দোকান।
দোকানপাট, শপিং মল সব বন্ধ, সিনেমা হল-বিনোদন পার্কের গেটে তালা। রেস্টুরেন্ট, বার এমনকি ব্যাংক পর্যন্ত বন্ধ হয়ে আছে শহরগুলোতে।
আবাসিক এলাকাগুলোতে মানুষজনের চলাফেরাতেও আরোপ করা হয়ে কড়াকড়ি। কেউ ঘর থেকে বের হলে ফিরতে পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়। চেক করা দেখা হচ্ছে বাইর থেকে দেহে ভাইরাস সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে কী না।
অন্যান্য বছর ভালোবাসা দিবসে ফুল এবং চকলেটের ছড়াছড়ি থাকে, সেখানে এসবের নাম নিতেও অনাগ্রহী মানুষ এবার। ভালোবাসার মানুষকে উষ্ণ আলিঙনে জড়িয়ে নেবে সে উপায় নেই। হাতে হাত ধরে হাঁটবে সেখানে আছে নিষেধাজ্ঞা। চুম্বনে রাঙিয়ে দেবে ঠোঁট, বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাস্ক। ছোঁয়াচে রোগে ভালোবাসা তখন পরিণত হবে মরণব্যাধিতে।
জ্যামস চেন নামে বেইজিংয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই দিনে আমি সাধারণ কোথাও বের হওয়ার পরিকল্পনা করতাম। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু বদলে গেছে।
আমরা হয়তো এখন রেস্টুরেন্টে ঢুঁ মারা কাজটি এবার করবো না। তবে দিবসটি পালন করতে নতুন কিছু করার চেষ্টা করব।’
করোনাভাইরাসে কারণে পুরো চীনের অর্থনীতি থমকে আছে। মাঝারি থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অস্তিত্বের সংকটে আছেন রীতিমতো। এই সময়ে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন ফুল ব্যবসায়ীরা।
এশিয়ায় সবচেয়ে বড় ফুলের মার্কেট কুনমিংয়ে বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে। চীনের দক্ষিণ পশ্চিম শহরটিতে ফুলের ব্যবসা করেন পাং জুন। ভালোবাসা দিবসে তিনি অন্তত ১০ লাখ গোলাপ ফুল বিক্রি করতেন। কিন্তু এই বছর অর্ডার পেয়েছেন মাত্র ৪০ হাজার।
ভাইরাস আতঙ্কে দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ ফুলের দোকান এবং সবগুলো ফুলের বাজার বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রতি বছর এই সময় এক সপ্তাহ আগ থেকে ফুল ব্যবসায়ী ঝং ভেনপিংয়ের ব্যস্ততা বেড়ে যেত। হুবেই এর ছোট একটি শহরে ফুলের দোকান চালান তিনি। ভালোবাসা দিবসে ফুলের অর্ডার নেয়, সেগুলো প্রস্তুতি করা, দোকানে সাজিয়ে রাখা এবং গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয়া-সব মিলিয়ে দম ফেলার ফুরসত মিলতো না তার।
এই নারী বলেন, ‘এই সময় নববর্ষের ছুটি কাটিয়ে সবাই শহরে ফিরত। পুরো শহর জমজমাট হয়ে উঠত। এক সপ্তাহ আগ থেকে আমি গোলাপ ফুল প্রস্তুত করতে লেগে যেতাম। কিন্তু এবার মানুষ গত এক মাস ধরে ঘর থেকেই বের হতে পারছে না। কোনো কিছু উদ্যাপন করা থেকে তারা আজ বিচ্ছিন্ন।’ দেশ রূপান্তর