রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাখাইন রাজ্যের জনগণের ওপর সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে এই সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সফররত ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘তিনি বলেছেন, এই সমস্যা সমাধানে আমরা সহযোগিতা করব, তবে সবকিছুর আগে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। এই সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে, সামরিকভাবে নয়’।
শেখ হাসিনা বলেন, কোন দেশে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতে বাংলাদেশ কাউকে দেশের ভুখন্ড ব্যবহার করতে দিবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ দু’দেশের সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চায়। প্রয়োজনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মিয়ানমারে বিদ্রোহ বন্ধে সহযোগিতা করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সহযোগিতায় ভারত তার উত্তর-পূবাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সমস্যা সমাধান করেছে।
শেখ হাসিনা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের উল্লেখ করে বলেন, ‘প্রতিবেশি দেশটিকে আমাদের সমস্যা বুঝতে হবে। আমাদের জন্য এটি একটি বড় ধরনের বোঝা’।
প্রধানমন্ত্রী জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় বিপুল সংখ্যক শিশু, নারী ও বৃদ্ধ লোক মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘তারা বাংলাদেশে শরনার্থী হয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে’।
তিনি কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এই রিপোর্ট সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আলোচনার মাধ্যমে যেভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান করেছে, সেইভাবে এই সমস্যা সমাধান করতে মিয়ানমার সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজন হচ্ছে শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে নেয়া’।
বৈঠকে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তার দেশ ভূমিকা রাখতে চায়। বৈঠকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত রিনা প্রিতিয়াসমিয়ারসি সোয়েমারমো বলেন, তিনি ইতোমধ্যেই মিয়ানমারের সেনা প্রধানের সঙ্গে কথা বলে এই সহিংসতা বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। রাখাইন রাজ্যে শিশু ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন।
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাখাইন জনগণের জন্য তার দেশ ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছে। তিনি একইভাবে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গা শরনার্থীদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর প্রস্তাব করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত রিনা প্রিতিয়াসমিয়ারসি সোয়েমারনো উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ঢাকায় সদ্য নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত রিনা প্রিতিয়াসমিয়ারসি সোয়েমারনোর সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পুশইন বন্ধে এবং তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নীতি পরিষ্কার, প্রতিবেশি কোন দেশে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালানোর জন্য আমরা কাউকে আমাদের ভূমি ব্যবহার করার অনুমতি দিব না।
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত মানবিক কারণে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সুত্র : বাসস