sliderমতামতশিরোনাম

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ঠিক করতে সংবিধান পুনর্লিখন করতে হবে : আলী রীয়াজ

পতাকা ডেস্ক: রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক করতে কনস্টিটিউশনাল অ্যাসেম্বলি(গণপরিষদ) করে হলেও সংবিধান পুনর্লিখন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক আলী রীয়াজ। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সিজিএসের উপদেষ্টা তার মূল বক্তব্য তুলে ধরার পর প্রশ্নোত্তর পর্বে দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র, নির্বাচনসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, সংবিধানের পুনর্লিখন করতে হবে। এর বাইরে আপনি প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি করতে পারবেন না।

আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের কাজ জরুরি। রাষ্ট্রের যেসব প্রতিষ্ঠান, সেসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। বাংলাদেশকে যদি ভবিষ্যতে পুনর্গঠন করতে হয় তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে। তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র অন্তর্বর্তী সরকার সবকিছু করতে পারবে না। আমাদের প্রত্যেকের ভূমিকা আছে, আসুন সেই ভূমিকা পালন করি।

সরকারপ্রধান হিসেবে একজন সর্বোচ্চ কত মেয়াদে থাকতে পারবেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দুই মেয়াদ, নাকি তিন মেয়াদ—এই প্রশ্নটা থেকে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সরকারপ্রধান হিসেবে একই ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ থাকতে পারেন।

টিআইবির প্রস্তাবিত একই ব্যক্তি ‘দলীয় প্রধান, সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না’—এ বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ক্ষমতা যাতে এক হাতে কেন্দ্রীভূত না হয়, সেটাই টিআইবি বলেছে। এসব সংস্কার জরুরি। ক্ষমতার কেন্দ্রভূত করার এসব পথ সাংবিধানিকভাবে বন্ধ করা না হলে ভবিষ্যতে আরও একজন স্বৈরাচার তৈরির পথ বন্ধ করা যাবে না।

গণপরিষদের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধান পুনর্লিখনের কথা বলছি এই কারণে যে সংবিধান সংশোধনের উপায় নেই। বর্তমান সংবিধান সংশোধনের উপায় সীমিত। কারণ, সংবিধানের এক–তৃতীয়াংশ এমনভাবে লেখা যে তাতে হাতই দেওয়া যাবে না। এর মধ্যে এমন সব বিষয় আছে, যেগুলো না সরালে কোনো কিছুই করতে পারবেন না। এ কারণে পুনর্লিখন শব্দটা আসছে। পুনর্লিখনের পথ হিসেবে গণপরিষদের কথা বলছি। আর কোনো পথ আছে কি না, আমি জানি না।

ভারতীয় গণমাধ্যমের অপতথ্য প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো ৫ আগস্ট থেকে যেসব অপতথ্য (ডিসইনফরমেশন) ও ভুল তথ্য (মিসইনফরমেশন) প্রচার করছে, সেগুলোর বড় জবাব হচ্ছে সত্য ঘটনা তুলে ধরা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। আমি তাদের বলেছি, আপনারা ঢাকায় যান, দেখুন, তারপর তা তুলে ধরুন। একই কথা আপনাদের (সাংবাদিক) জন্যও। আপনারা সত্য তথ্য তুলে ধরুন।

আগামী পাঁচ মাস জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সিজিএস ধারাবাহিক সংলাপের আয়োজন করবে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় পর্যায়ের সংলাপের অংশ হিসেবে ঢাকায় আটটি জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিষয়বস্তুর মধ্যে থাকছে সংবিধান, মানবাধিকার ও গুরুতর আইন লঙ্ঘনের শিকার ভুক্তভোগীদের বিচার নিশ্চিতকরণ, বিচারব্যবস্থা, নাগরিক প্রশাসন, সাংবিধানিক সংস্থা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, অর্থনৈতিক নীতিমালাসহ ব্যাংকিং খাত ও বৈদেশিক ঋণ এবং গণমাধ্যম।

এই অধ্যাপক আরও বলেন, ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ও খুলনায় চারটি আঞ্চলিক সংলাপ হবে। এতে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের প্রত্যাশা, প্রস্তাবনা ও সুপারিশ খোলাখুলি প্রকাশ করতে পারবেন।

আলী রীয়াজ বলেছেন, দীর্ঘ ১৫ বছর এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনের কারণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচনব্যবস্থা—সবই পরিকল্পিতভাবে রাজনীতিকরণ হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের অনেক কিছু করার আছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে চাই। সে লক্ষ্যে সিজিএস ধারাবাহিক সংলাপের আয়োজন করেছে।

পরে ২০২২ সাল থেকে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এক মাস বাড়িয়ে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৩ মাস সময় বৃদ্ধি করে বন মন্ত্রণালয়। এ সময় সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ ধরা বন্ধের পাশাপাশি পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button