sliderস্থানীয়

রাষ্ট্রীয়ভাবে আলেমদের বিষোদগার করা, জাতির জন্য দুর্ভাগ্য ডেকে আনা; ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

সিলেটে প্রতিনিধি : আলেম উলামারা হচ্ছেন জাতির আধ্যাত্মিক রাহবর। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁদের বিষোদগার করা জাতির জন্য দুর্ভাগ্য ডেকে আনা। সে জাতির কপালে খুবই দুর্ভাগ্য এবং তাদের জন্য আফসোস হয়, যে জাতি আলেমদের সম্মান দিতে জানেনা।
২৩ ডিসেম্বর (বুধবার) রাত ৮টায় সিলেটের বৃহৎ শতাব্দীর প্রাচীনতম মাদরাসা জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গার বার্ষিক মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, মুহাদ্দিস ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন উপরিউক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি আরও বলেন, আলেমরা হচ্ছে নবী সা. এর ওয়ারিস, সাহাবী, তাবেয়ী, তবে তাবেয়ী, আইম্মায়ে মুজতাহিদীনদের প্রতিনিধিত্বশীল। তাঁরা সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বাবস্থায় অশ্রু ফেলে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানায়। ইহকালের কোনো লোভ লালসা ছাড়াই পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকে; হক ও শান্তির সুগম পথে আহ্বান করে। তিনি ছাহাবা রা. এর মুমূর্ষু দাওয়াতে ইসলামের কাহিনি তোলে ধরে বলেন বর্তমানে একমাত্র মাদ্রাসাতুল ইসলামীয়া বা মাদারিসে কাওমিয়া-ই সেই ছাহাবীওয়ালা পথের পথিক৷
তিনি বলেন, আমি ২৪ বছর চট্টগ্রাম এক ভার্সিটিতে পড়িয়েছি। কে আমার ছাত্র, কোথায় যায়, কী করে কোনো খোঁজখবর নেই; এখন আমি চট্টগ্রামের এক বড় মাদ্রাসায় হাদীসের কিতাব পড়াই; এখানে ছাত্রদের প্রতিনিয়ত দেখাশোনা করা হয়, তালীম তরবিয়ত দেওয়া হয়; ফলে কওমীর সন্তানরা ক্রাইমের সাথে জড়িত থাকে না, টেন্ডারবাজি, দূর্নীতিতে জড়িত থাকে না।
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা হচ্ছে এমন শিক্ষা যে শিক্ষায় শিক্ষিত কোনো হক্কানি রব্বানী আলেম কোনো দেশে না থাকলে সে দেশে একজন হক্কানি রব্বানী আলেম নিয়ে আসা ওয়াজিব হয়ে পড়ে। যে দেশে মাদারিসে ইসলামীয়া না থাকে, সে দেশের জাতির কী যে দুর্ভাগ্য তা বলে বুঝানো যাবে না। বাংলাদেশে হাদীসের চর্চা শুরু হয় সর্বপ্রথম ঢাকার সোনারগাঁওয়ে। এদেশে কুরবানী করা যেতো না, কিন্তু যুগের হক্কানি রব্বানী আলেম উলামারা জেল, জুলুম, নির্যাতন সহ্য করে গলায় ফাঁসির দড়ি হাসিমুখে বরণ করে দেশের প্রতিটি পরতে পরতে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছেন, মাদারিসে কাওমিয়া প্রতিষ্ঠা করেছেন, মানুষকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। এভাবেই প্রতিটি যুগে প্রতিটি যায়গায় ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, মুজাদ্দাদে আলফে সানির মত মুকুটহীন সম্রাটদের দ্বারা ইসলামের ঝাণ্ডাকে উঁচু করে রেখেছেন।
তিনি আরও বলেন যে এই দেশ, এই সুন্দর ও সুস্থ পোশাকের সংস্কৃতি, এই ভাষা, এই দেশের নাম, এই স্বাধীন মানচিত্র সবকিছুর পিছনে মুসলমানদের এবং আলেমদের ভূমিকা আছে; ইতিহাসের পাতা খোলে দেখুন, এই দেশের নাম বাংলাদেশ ছিলনা, এই রাজ্যে সেলাইবিহীন কাপড় পরত মানুষ, মুসলিম শাসকই সেলাইযুক্ত কাপড় পরা শিখিয়েছেন, এই ভাষা আল্লাহর অনেক বড় নেয়ামত, ভাষা আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন সবাই মুসলমান ছিল। ভারতবর্ষ স্বাধীন করেছিলো আলেমরা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আলেমদের ভূমিকা ছিলো অনস্বীকার্য। মুসলমান এবং আলেমদের নিয়ে যারা বিষোদগার, তারা অজ্ঞ, জানেনা কিছু।
ড. আ ফ ম খালিদ এক প্রেক্ষাপটে আরও বলেন, মুসলমানরা এখন নিজদের মাঝে ইজতিহাদী ও ইনফেরাদী মাসআলায় মতানৈক্য না করে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরী করতে হবে। কেননা খৃষ্টানরা চতুর্দিকে ফেৎনার জাল আর ইতিহাসের ভুল অপব্যাখ্যা দিয়ে মিশন চালু করছে। মুসলমানদের নিজেদের মধ্যে ইখতিলাফ সৃষ্টি করে তারা লাগছে তাদের ধর্ম প্রচারে। মানুষকে বানাচ্ছে মুশরিক ও মুরতাদ। তিনি বলেন আমি ইতিহাসের ছাত্র, ইতিহাস পড়ে খৃষ্টানদের বর্তমান মিশন সম্পর্কে গবেষণা করছি, বিভিন্ন রাষ্ট্র সফর করেছি; তাদের কাজ সম্পর্কে কিছুটা অনুধাবন করতে পেরেছি; আমি ভারতের মেঘালয় সীমান্ত দেখার জন্য সিলেটের বিছানাকান্দি সফর করেছি, বুঝতে পারছি যে খৃষ্টানরা সীমান্ত এলাকায় খুব জোর দিয়ে কাজ করছে। বিছনাকান্দি সীমান্ত থেকে নিয়ে একেবারে চট্টগ্রামের কক্সবাজার সাগরপাড়, বান্দরবন সীমান্ত পর্যন্ত তারা অনেক কাজ করে যাচ্ছে। ইয়াহুদী এই সীমান্ত এলাকায় তাদের লোক তৈরী করে চাচ্ছে এখানে ইয়াহুদীদের আলাদা রাষ্ট্র তৈরী করবে৷ তিনি বলেন, আমি ইতিহাসের একজন পাঠক হিসেবে একটা মন্তব্য করছি, আমরা দেখবো না, কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এই সীমান্ত এলাকাগুলো বাংলাদেশ থেকে আলাদা হয়ে ইয়াহুদী রাষ্ট্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমরা আমাদের পূর্বসূরিদের এতো কষ্টে প্রতিষ্ঠিত করা দ্বীন ইসলামকে হেফাজত করতে সকলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ইনফেরাদি মাসআলায় ইখতিলাফ করে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইয়াহুদী নাসারা যেনো সুযোগ না পায়৷ সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আলেমদের বিষোদগার করে না জেনে, না বুঝে ইয়াহুদীদের কাজের সুযোগ যেনো না করে দেই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button