sliderস্থানীয়

রামু ভূমি অফিসে ভয়ংকর জালিয়াতি

এম.এ আজিজ রাসেল, কক্সবাজার : ভূমিমন্ত্রীর নানা উদ্যোগ ও হুঁশিয়ারির পরও ভূমি অফিসে দুর্নীতি আর জালিয়াতি থামছে না। এবার কক্সবাজারের রামু উপজেলা ভূমি অফিসে একটি ভয়ংকর জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার রশিদনগর ধলিরছড়া মৌজায় জালিয়াতির মাধ্যমে খতিয়ান থেকে কেটে চারজনের নামজারি খতিয়ানভুক্ত প্রায় আট একর জমি নি:স্বত্ত্ববান অন্য একজনের খতিয়ানে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। যে খতিয়ানের জমি জনৈক আকতার কামাল বিভিন্ন দলিলমূলে ৪০/৫০ বছর আগে বিক্রি করে নি:স্বত্তবান হওয়ার পরে তাদের আরেক ওয়ারিশের নামে নূরুল আলম সিকদারের একটি ভুয়া মামলায় প্রায় ৫০ বছর আগেই সব জমি বিক্রি করে নি:স্বত্ত্ববান হয়ে যায়।

অভিযোগ উঠেছে, ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট মোটা অংকের বিনিময়ে অত্যন্ত গোপনে এই জালিয়াতির কাজটি সম্পাদন করেছেন। পরে ভুক্তভোগীরা খাজনা দিতে গিয়ে এই ভয়ংকর জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। শুধু তাই নয়, জালিয়াতির ঘটনা জানতে পেরে প্রকৃত জমির মালিকরা অভিযোগ দিলেও তা আমলে না নিয়ে উল্টো ভুয়া নামজারি খতিয়ান সৃজনের পাঁয়তারা চলছে। এমন জালিয়াতির ঘটনা রামুতে জানাজানি হলে সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ধলিরছড়া মৌজার বদরুল হাসান গংয়ের নামে রেকর্ডীয় ১৯৪৯ খতিয়ান থেকে ২০১৩ সালে ৬.১০ একর জমি কেনেন ড. হারুনুর রশিদ নামের এক ব্যক্তি এবং তার নামে ২১৪৭ নং নামজারি খতিয়ান সৃজিত হয়। অন্যদিকে সেই থেকে জমিতে ভোগ দখলেও রয়েছেন তিনি। কিন্তু এর মধ্যে নানা কূটকৌশলে কাগজপত্রাদি গোপন করে ড. হারুনুর রশিদের ২১৪৭ সৃজিত খতিয়ানের পাঁচটি দাগ থেকে ২.৯৬ একর জমি কেটে নিয়ে প্রায় ৫০ বছর আগে নি:স্বত্তবান ১০০২ নং খতিয়ানে অন্তর্ভূক্ত করতে আবেদন করেন ধলিরছড়ার নূরুল আলম সিকদার। তার আবেদনের ভিত্তিতে রামু ভূমি অফিসের তৎকালীন অফিস সহকারী মনির ও কানুনগো জগদীশ চন্দ্র চাকমার এবং তহসিলদার অফিসের শাহেদ ও চন্দনের নেতৃত্বে নোটিশ গোপন করে অতি গোপনে ২১৪৭ নং খতিয়ান থেকে ২.৯৬ একর জমি কেটে ১০০২ নং খতিয়ানে অন্তর্ভূক্ত করে ফেলে। একইভাবে নবাব মিয়া, ইনানীর নূরুল ইসলাম ও জোয়ারিয়ানালার নূরুল ইসলামের জমিও ১০০২ নং খতিয়ানে অন্তর্ভূক্ত করে ফেলে অভিযুক্ত ধলিরছড়ার নূরুল আলম সিকদার। মোট চারজনের কাছ থেকে প্রায় আট একর জমি তার নি:স্বত্তবান খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত করে নেয় নূরুল আলম সিকদার। এরপর ১০০২ খতিয়ান নামজারি খতিয়ান সৃজনের পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ২০ লাখ টাকার লেনদেনের মাধ্যমে রামু ভূমি অফিসের কর্মকর্তা—কর্মচারী সিন্ডিকেট এই জঘন্য জালিয়াতিটি করেছেন। অতিগোপনে জালিয়াতির কাজটি সম্পন্ন করায় ভুক্তভোগীরা কোনো কিছু জানতেও পারেননি। এক পর্যায়ে জমির খাজনা আদায় করতে গেলে এই ভয়ংকর জালিয়াতির ঘটনা ভুক্তভোগী জমির মালিকেরা জানতে পারেন। সাথে সাথে তারা এই জালিয়াতির বিরুদ্ধে জেলা রাজস্ব শাখায় মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে রামু অফিসে থাকা সব নথিপত্র তলব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)।

কিন্তু অভিযোগ উঠে, জেলার রাজস্ব শাখায় নতি তলবের পরও ভুয়া খতিয়ান সৃজনের পাঁয়তারা অব্যাহত রাখে জালিয়াতিকারী সিন্ডিকেট। রাজস্ব শাখার তলব আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গতকাল বুধবার (১২ জুলাই) একটি শুনানীর আয়োজন করেন রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুম মজুমদার— যা আইনগতভাবে সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু শুনানীতে অংশ না দিয়ে তার প্রতিবাদ জানান ভুক্তভোগীরা।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ড. হারুনুর রশিদের পক্ষভুক্ত বদরুল হাসান মিলকি বলেন, ‘জালিয়াতিরও একটা সীমা আছে। কিন্তু রামু ভূমি অফিসের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট যে জালিয়াতিটি করেছে তা অত্যন্ত জঘন্য। ২০ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে সাবেক কর্মকর্তারা খতিয়ান থেকে জমিগুলো কেটে নিয়েছে। এবার বর্তমান কর্মকর্তারাও মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া নামজারি খতিয়ান সৃজন করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।’

আরেক ভুক্তভোগী ইনানীর নূরুল ইসলাম বলেন, ‘যেভাবে গোপনে এই জালিয়াতি করা হয়েছে তার চেয়ে বড় জালিয়াতি আর নেই। আমার রক্তঝরা অর্থ দিয়ে জমিগুলো কিনেছি এবং ভোগ দখলেও রয়েছি। কিন্তু অতি গোপনে জালিয়াতি করে নূরুল ইসলাম সিকদার আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বর্তমান কানুনগো কিরীতি রঞ্জন চাকমা সবকিছু এড়িয়ে যান এবং এতে তার সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন। কিন্তু ভুক্তভোগীদের অভিযোগ রয়েছে বিরুদ্ধেও।

জানতে চাইলে রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদারও কোনো কিছু জানাতে রাজি হননি। তবে তাদের করা তদন্ত প্রতিবেদন জেলা রাজস্ব শাখায় পাঠিয়ে দেবেন বলে জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button