Uncategorized

‘রাজা বাবুর’ ওজন দেড় টন!

মানিকগঞ্জে দেড় টন ওজনের ষাড় গরু পালন করে তাক লাগিয়েছেন জেলার সাটুরিয়া উপজেলার দেলুয়া গ্রামের পরিষ্কার বিবি ও তার স্কুল পড়ুয়া কন্যা ইতি আক্তার।
ফিজিয়ান জাতের ষাঁড়টিকে সম্পূর্ন প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ায়ে বড় করেছেন মা-মেয়ে। আদর করে নাম দিয়েছেন “রাজা বাবু”। রাজা বাবুর ওজন রবিবার পর্যন্ত ১৫৬৬ কেজি যা দেড় টনেরও বেশি। ষাড়টিকে একনজর দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ।
পরিষ্কার বিবি ও কন্যা ইতি আক্তারের সংসার চলে গরু পালন করেই। গেল বছর কোরবানি ঈদে ২৭ মন ওজনের একটি ষাঁড় ১০ লাখ টাকা বিক্রি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তারা। অবশ্য ১০-১২ বছর আগে থেকেই পরিষ্কার বিবি ও তার স্বামী খান্নু  মিয়া গরু লালন- পালন করতেন। কিন্তু তার কন্যা ইতি আক্তার দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করা শুরু করেন। আর প্রথম বছরেই লাভবান হওয়ায় এ বছর তিনি আরও বড় আকৃতির গরু কিনে মোটাতাজকরণ শুরু করেন।
গেল বছরে গরু বিক্রি করা টাকা  দিয়ে ঋণ পরিশোধ করেন, বাকি টাকা দিয়ে এক বছর আগে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে ২ বছর বয়সী ফিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড় কিনে আনেন। সেই থেকে শুরু। ইতি ও তার মা সাদা ও কালো রংয়ের ষাঁড়টির যত্ন নেয়া শুরু করেন। নাম দেন ‘রাজা বাবু’। ‘রাজা বাবু’ বললেই তাদের ডাকে সাড়া দেয় ষাড়টি। প্রতিদিন খাবার খাওয়ানো শুরু করেন। মিষ্টি লাউ, দেশি লাউ, সবরি ও বিচি কলা, ছোলা, বুট, কুঁড়া, ভুষি, খড় ও কাঁচা ঘাস। মাঝে মাঝে আঙ্গুর, মালটা ও তেঁতুল খাওয়ানোও বাদ যায় না।
এ ব্যাপারে ইতি আক্তার জানান, রাজা বাবু মাঝে মাঝে রেগে যান, তখন ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দিয়ে সবরি কলা সমানে ধরলেই সব ঠিক হয়ে যায়। তাছাড়াও এ ষাড়টি খুব ঠান্ডা প্রকৃতির।

ইতি আরো বলেন, রাজা বাবুকে দিনে ২ বার ১৪ টি শ্যাম্পু ও ৬ কন্ডিশনার শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করাই। লম্বায় ৭ ফুট ৩ ও ৯ফুট  ১ ইঞ্চি বেড়ের এ ষাঁড়টির দাঁত আছে ৪ টি। বর্তমান  ওজন ১৫৬৬ কেজি (৩৯ মন) হলেও ঈদের আগে আরও ওজন বাড়বে।
পরিষ্কার বিবি বলেন, আমাদের রাজা বাবুকে সম্পূর্ণ দেশী খাবার খাওয়ানো হয়। ওর পিছনে ৩ জন মানুষ সারা বছর সময় দিয়েছি। ২ টি সিলিং ফ্যান লাগানো হয় ওর মাথার ওপরে। বিদ্যুত্ চলে গেলেই বড় পাখা দিয়ে সারাক্ষণ বাতাস করি। ওর ব্যায়াম করার জন্য দিনে ২০-২৫ বার বিভিন্ন স্থানে বেঁধে রাখি।
সরেজমিনে রবিবার বিকালে পরিষ্কার বিবির বাড়ীতে গেলে দেখা যায়, উপজেলা ছাড়াও আশে পাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট বড় মানুষ  রাজা বাবু কে এক নজর দেখার জন্য ভীড় করছে । কথা হয় টাঙ্গাইল জেলারনাগরপুর উপজেলার পাকুটিয়া গ্রামের মান্নান মিয়ার সাথে, তিনি জানান,  ইচ্ছে থাকলে এক বছরে এক গরুই মোটাতাজাকরণ করে অনেক  লাভবান হওয়া যায় তা স্বচক্ষে দেখার জন্য এসেছি এ বাড়িতে।
এ ব্যাপারে পরিস্কার বিবির স্বামী খান্নু মিয়া জানান, আমি গ্রামের মহাজনদের নিকট থেকে সুদ করে  টাকা এনে এ ষাঁড়টি কে বড় করেছি। প্রতিদিন ১০০০-১২০০ টাকার ২৫ কেজি পরিমাণ খাবার খাচ্ছে ৭-৮ মাস ধরে।  সরকারীভাবে সহজ শর্তে ঋণ পেলে আরো বড় পরিসরে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করণ করতাম।
এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ খুরশেদ আলম বলেন, ঈদ কে সামনে রেখে সাটুরিয়া উপজেলায় ৭ হাজার গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ইতি ও পরিষ্কার বিবির লালিত এ ষাঁড়টির ওজন আমি নিজে মেপেছি। রবিবার পর্যন্ত ওর ওজন ১৫৬৬ কেজি, যা ৩৯ মন ও দেড় টনেরও বেশী। আমরা নিয়মিত এ গরুটির দেখভাল করেছি। ঈদের পরে এ পরিবার কে সহজ শর্তে সরকারী কোন ব্যাংক থেকে ঋণ সহায়তা দেবার জন্য আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করব।
ইত্তেফাক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button