মোঃ আলাউদ্দীন মন্ডল,রাজশাহী : রাজশাহীতে জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল ও বিজ্ঞ দায়রা জজ-২ আদালতে একটি হত্যা মামলার রায়ে ০৩ (তিন) আসামীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০,০০/-টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ০৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
রবিবার (০৯ জুন) বেলা সাড়ে এগারোটায় রায় ঘোষণা শুরু করেন জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল ও বিজ্ঞ দায়রা জজ-২ আদালত এর বিজ্ঞ বিচারক জনাব মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সিদ্দিক প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী রায় পাঠ করে শোনান।এসময় রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী আসাদুজ্জামান মিঠু ও আসামীপক্ষের আইনজীবী এড: হামিদুল হক, এড:সাজ্জাদ হোসেন প্রামাণিক,এড: হুমায়ন কবির সাম্মি এবং আসামীগন কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পিপি এড: আসাদুজামান মিঠু রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের বলেন যে, রাষ্ট্রপক্ষ আসামী ১।মোঃ মিনারুল ইসলাম, ২। মোঃ মাসুদ রানা, ৩। মোঃ জুলহাস ইমরুল কায়েস ওরফে জুয়েল গণের বিরুদ্ধে ৩০২/৩৪ দ:বি: ধারায় অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় প্রত্যেক আসামীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০,০০০/- টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ০৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন বিজ্ঞ আদালত।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায় যে, এজাহারকারী মো: আ; মানিক গত ১০/১০/২০২০ ইং তারিখে চারঘাট মডেল থানায় এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করেন যে, গত ০৯/১০/২০২০ খ্রী: সন্ধ্যা অনুসন্ধান ১৭.৪৫ ঘটিকার সময় চারঘাট চৌ-রাস্তার মোড় হতে বাদীর বাবা ভিকটিম ব্যাটারি চালিত অটো ভ্যানে ২/৩ জন অজ্ঞাত নামা যাত্রীসহ রওনা করেন। একই তারিখ রাত অনুমান ১৮.৪৫ ঘটিকায় চারঘাট থানাধীন পশ্চিম বালিয়াডাঙ্গা গ্রামস্থ জনৈক মো: জুয়েল এর আম বাগানের পূর্ব পশ্চিম পার্শ্বে হিয়ারিং রাস্তা সংলগ্ন মেহেগুনি গাছের গোড়ায় বাদীর বাবা ভিকটিম বাঁচাও বাঁচাও বলে ডাক চিৎকার করেন জনৈক জীবন সরকার ও মো: তহরুলদ্বয় ঘটনাস্থলে এসে আমার বাবাকে গলার ডান পার্শ্বে গুরুতর জখম অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে মো: তহুরুল এর ভ্যানযোগে বাদীর বাবাকে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চিকিৎসা প্রদান করা অবস্থায় ০৯/১০/২০২০ খ্রি: সন্ধ্যা অনুমান ১৯.৩০ ঘটিকায় সময় বাদীর বাবা ভিকটিম জালাল উদ্দিনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বাদী ও বাদীর ছেলে অনিক মোবাইলে সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে সাক্ষীদের নিকট ঘটনার বিষয়ে শুনেন এবং বাদীর গলার ডান পার্শ্বে আড়াআড়ি প্রায় ৪ ইঞ্চি কাটা গভীর রক্তাক্ত জখম এর চিহ্ন দেখতে পান। তার পরনে একটি চকলেট রঙের কালার যুক্ত হাফ শার্ট ও নীল চকলেট রঙের চেক লুঙ্গি ছিল । গলার ক্ষতস্থান হতে প্রচুর রক্ত গড়ে তার পরিহিত পোশাক ও সারাদেহ ভিজে গেছে। ঘটনাস্থলের অদুরেই ০১টি চাকু এবং বাদীর বাবার ব্যবহৃত ভ্যানটি পুকুরের পানিতে পড়ে ছিল। পরে থানা পুলিশ স্থানীয় জনগণের সহায়তায় বাদীর বাবার ব্যবহ্নত ভ্যানটি পুকুরের পানি হতে উদ্ধার করে। বাদীর বাবাকে গত ০৯/১০/২০২০ খ্রি: তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ১৮.৪৫ ঘটিকায় কে বা কাহারা (২/৩ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি) একই উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ধারালো অস্ত্র দ্বারা গলায় আঘাত করে হত্যা করে। উক্ত ঘটনার বিষয়টি চারঘাট মডেল থানার মোবাইল ফোনে সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছে বাদীর বাবার মৃতদেহ উদ্ধার পূর্বক পুলিশ কার্যক্রম গ্রহণ করে ময়না তদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পোস্ট মর্টেমের জন্য পাঠায় ।
উপরোক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে চারঘাট মডেল থানার মামলা নং ০৮, তারিখ ১০/১০/২০২০ ইং, জিআর মামলা নং -২৬১/২০(চারঘাট) রুজু হয়। মামলাটির তদন্তভার এস আই আনোয়ার হোসেন প্রাপ্ত হন। অতঃপর তদন্তে তিন জন আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে প্রমানিত হওয়ায় চারঘাট থানার অভিযোগ পত্র নং-১৪৩,তারিখ২৫/০৪/২০২১ ইং, ধারা ৩০২/৩৪ দ:বি: দাখিল করেন। চার্জ গঠনের পরে ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। উল্লেখ্য যে একজন আসামী মিনারুল ইসলাম ১৬৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট জবানবন্দি প্রদান করেন।