sliderস্থানীয়

রাজনীতিবিদদের সংস্কার হওয়ার আহ্বান ড. মঈন খানের

পতাকা ডেস্ক: রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, ‘সব কিছু সংস্কারের সাথে সাথে আমরা নিজেরাই সংস্কার হই।’

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে দি মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘জনগণের প্রত্যাশা: অন্তর্বর্তী সরকারের রোডম্যাপ’ শীর্ষক দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

দি মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রোখসানা খন্দকারের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু সাইদ খান, মাসুদ কামাল, মেজর (অব.) জামাল আহমেদ প্রমুখ।

ড. মঈন খান বলেন, ‘গণতন্ত্রের মূল হলো ভিন্নমত, এটি না থাকলে গণতন্ত্র থাকে না। এটি কিন্তু ৭২ সালেও হরণ করা হয়েছিল। ৫ আগস্টের দিন সরকার পালিয়ে যাওয়া কিন্তু দেশের জন্য সুখকর নয়, ভিন্নমত হরণের ফলে কিন্তু তার অবস্থা এমন হয়েছে। ভিন্নমত দমন না করলে রাষ্ট্র পরিচালনা কোনো সমস্যা হয় না, এটা আমি মনে করি। ভিন্নমত দমন করেছিল পূর্বের পতিত স্বৈরাচার হাসিনা সরকার।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান যে অবস্থায় আছি, এই সময়ে আইন নিয়ে কথা বললে, এটি অবান্তর। ডকট্রিন অব নেসেসিটিতে (Doctrine of Necessity) একটি আইনগত নীতি, যা সঙ্কটের পরিস্থিতিতে আইন বা নিয়মের প্রয়োগ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অনুমতি দেয়। এর মানে হলো, যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া বা কাজ করা জরুরি হয়, এবং সাধারণ আইন অনুসরণ করা সম্ভব নয়, তখন সেই পরিস্থিতিতে বিশেষ অনুমতি দিয়ে আইন প্রয়োগ করা হতে পারে। এটি সাধারণত সরকারি বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেখানে জরুরি অবস্থায় আইনগত বাধা অতিক্রম করতে হয়। এ সরকার ব্যর্থ হলে দেশের জন্য সামনে বিপদ অপেক্ষা করছে।’

তিনি মনে করেন, ‘সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, এটি কোনো সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমরা এখানে একটি পর্যায়ে এসেছি, সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। তাদেরকে ( অন্তর্বর্তী সরকার) যৌক্তিক সময় দিতে হবে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের মনে রাখতে হবে, এই সময় কিন্তু সীমাহীন নয়। এটা সরকারকে বুঝতে হবে কোন সময়টা যৌক্তিক আর কোনটি যৌক্তিক নয়। কোন কোন সংস্কার প্রয়োজনীয় এটা সরকারকে বুঝতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের কথা কেন এ দেশের ছাত্র ও তরুণ সমাজ বিশ্বাস করে না, এটি হৃদয় থেকে খুঁজে বের করতে হবে, আত্মোপলব্ধি করতে হবে। আমার গলা ফেটে যখন কথা বলি, তখন কেন ছাত্র-জনতা সেটি বিশ্বাস করে না, তারা মনে করে এটি কথার কথা। আস্থা আনতে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবর্তন হতে হবে।’

‘আজ এক কথা বলবেন, পরে এক কথা বলবেন’- রাজনীতিবিদদের এমন আচরণের সমলোচনা করে মঈন খান বলেন, ‘রাজনীতিতে শেষ বলতে কথা নেই- এটি বলে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা-তরুণদের কাছে আর পার পাওয়া যাবে না।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সংস্কার করলে আগে রাজনীতির দিকে চোখ দেয়া দরকার, যাতে রাজনীতিবিদদের লুটপাট, চাঁদাবাজি সব পরিহার করতে হবে। অনেকে বলেছে, নির্বাচন করতে যা সংস্কার করা দরকার, সেটি করেন। নির্বাচনের ছয় মাস পর সংস্কার করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যে নির্বাচনের পর সংস্কার করবে, এটা জনগণের বিশ্বাস করে না। এটা আগেও দেখছে, নির্বাচনের পর রাজনৈতিক দল তাদের কমিটমেন্ট ভুলে যায়।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ছাত্ররা এখনো কারো প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেনি। দল যে কেউ গঠন করতে পারে, এটা নাগরিক অধিকার। তবে করতে হবে স্বতন্ত্রভাবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে ঐক্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে, এ ঐক্যকে কোনো রাজনৈতিক দল প্রতিপক্ষ ভাবলে সেটা হয়তো রাজনৈতিকদের জন্য ভুল হবে।’

গণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘একটা পাহাড় সমান সমস্যা নিয়ে একটি সরকার বসেছে। একটু ধৈর্যশীল হন। টানাটানি বন্ধ করেন। উল্টাপাল্টা বক্তব্য থেকে বিরত থাকেন। এখনো কিছু সেটাপ করতে পারিনি। কোনোভাবেই এ সরকারকে ব্যর্থ করতে দেয়া যাবে না। অনেকে বলেন ৭১ ও ৯০ এ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারিনি। এবার যদি মিস হয়ে যায়, তবে এ প্রজন্ম তাদেরকে ক্ষমা করবে না।’

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘৭৫ বছরে দলের সভাপতি। যিনি নিজেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাধর নেত্রী বলে দাবি করতেন তাহলে তার নেতাকর্মীদের রেখে কেন পালিয়ে যেতে হলো? কী এমন অপরাধ করেছেন তা খুঁজে বের করতে হবে? গুম-খুন-দুর্নীতি ও লুটপাট কোনো পর্যায়ে গেলে বাবা-মা তার সন্তানকে নিয়ে শেখ হাসিনার পতনের জন্য রাজপথে নেমে আসে? একটি গোষ্ঠী যদি দাবি করে তারা আন্দোলনে সবকিছু করেছে, তা ভুল করবে। ইতোমধ্যে তাদের মধ্যেও বিভাজন শুরু হয়েছে। মূলত ১৭ বছর আন্দোলনের শেষটা তারা করেছেন। সংস্কার কাজ শেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচন দিতে হবে। বাকি সংস্কার কাজ করবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, ‘সার্বভৌমত্ব ও সুশাসন সর্বপ্রথম নিশ্চিত করা দরকার। অন্তর্বর্তী সরকারকে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার সব সংস্কার কাজ করতে পারবে না, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রয়োজন।’

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button