পতাকা ডেস্ক : রাজধানীর চারপাশে বৃত্তাকার নৌপথ চালুর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বুড়িগঙ্গা নদীর দখল ও দূষণ রোধে সাত দফা দাবিতে রাজধানীর সোয়ারীঘাটে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন।
আলমগীর কবির বলেন, ‘নদীকে নারীদের মতো প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করা হচ্ছে। ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা। বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহর গড়ে উঠেছে। বুড়িগঙ্গা বাঁচলে ঢাকার মানুষ বাঁচবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাঁচবে।’
তিনি বলেন, ‘রিজওয়ানা (বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান) আপা নিজেই নদী রক্ষায় একটি করে নদী দূষণমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। আমাদের দাবি শুধু একটি নয় দেশের সব নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। ঢাকার চারদিকে চক্রাকার নৌপথ চালু করলে যানজট নিরসন সম্ভব হবে।’
এ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক মিহির বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা নদী নষ্ট হলে ঢাকার জনজীবন স্থবীর হয়ে পড়বে। বিগত সরকার গুলো অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু তার বাস্তবায়ন করেনি। বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ বুড়িগঙ্গাসহ দেশের সব নদী রক্ষা করার।’
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাহাবুব হোসেন বলেন, ‘দুই দশক ধরে আন্দোলন করে আসছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছু হয়নি। যারা এখানে দায়িত্ব আসে তারাই অসদুপায় অবলম্বন করে। আগে বুড়িগঙ্গার পানি শরীরে লাগলে ময়লা পরিষ্কার হতো আর এখন বুড়িগঙ্গার পানি শরীলে লাগলে নিজেদেরই পরিষ্কার করতে হয়। এটাকে এখন ময়লার ভাগাড় বলা হয়। তাই এই বুড়িগঙ্গা নদীর রক্ষায় সরকারসহ সব স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করছি।’
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গার প্রাণ নেই। স্বাধীনতার পর গত চার দশকে বুড়িগঙ্গা তিলে তিলে দখল ও দূষণের কবলে পড়ে একটি মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। এ নদীর জায়গা দখল করে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও গড়ে উঠছে স্থাপনা। কমছে নদীর প্রশস্ততা, কমছে প্রাণপ্রবাহ। প্রতি মুহূর্তে নদীর ভেতর ফেলা হচ্ছে পানি দূষণকারী ভয়ংকর সব বর্জ্য। বুড়িগঙ্গার বড় অংশেই নেই জলজ প্রাণী বা মাছ। এ নদীর পানি বহু আগেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়েছে। এমনকি নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে শ্বাস নেওয়া যায় না। পানির দুর্গন্ধে আশপাশে টেকাই দায়।
তারা বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীর উৎসমুখ চুনার থেকে বসিলা হয়ে লালবাগ লোহারপুল পর্যন্ত আদি বুড়িগঙ্গা সম্পূর্ণরূপে দখল করে ধর্মীয় ও দাতব্যপ্রতিষ্ঠান, সরকারি স্থাপনা, বিদ্যুৎকেন্দ্র বেসরকারি ও শিল্প কারখানার মতো বৃহৎ প্রকল্প ও ব্যাপক আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে।
বক্তারা বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দেশের নদী দখলদারদের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরি, কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে আমরা দীর্ঘ দিন যাবৎ বিগত সরকারের কাছে অবিরাম দাবী তোলার পরও বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারদিকের নদীর তলা-তট-পাড়ের উপর স্থাপিত অসংখ্য ছোট বড় বেআইনি স্থাপনা এখনও অক্ষত রয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিগত সরকার নদীগুলো নদী হিসেবে রাখতে আগ্রহী নন। কিন্তু আমরা জানি বর্তমান সরকার নদী রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তারা বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে নিকট দাবি করছি বুড়িগঙ্গাসহ দেশের সকল নদী ও জলাশয়কে দখলমুক্ত করে দেশের নদীগুলোকে প্রবাহমান রাখবে।’
বাপার ৭ দফা দাবি হলো:
১. সীমানার অভ্যন্তরে তালিকা অনুযায়ী সরকারি স্থাপনা, বেসরকারি প্রকল্প ও শিল্পকারখানা, মাঝারি আবাসনসহ সব প্রকারদখলী স্থাপনাউচ্ছেদ অথবা পুনর্বাসন করার মাধ্যমে নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে;
২. আদি বুড়িগঙ্গা নির্মোহভাবে ও সম্পূর্ণ দখলমুক্ত ও পুনঃখনন করতে হবে এবং এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে;
৩. প্রত্যেকটি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খাল, প্লাবন অঞ্চল ও কৃষি জমি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষন করতে হবে;
৪. জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে পুণর্গঠন করে হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে দেশের অভ্যন্তরে সমস্ত নদী-বিল-হাওর এবং জলাশয়ের অভিবাবক হিসাবে দায়িত্ব দিয়ে নদীগুলোর দখলদারদের তালিকা পূর্ণাঙ্গ করতে হবে।
৫. রাজধানীর চারিদিকে চক্রাকার নৌপথ চালু করতে অবিলম্বে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে চক্রাকার নৌপথ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬. নদীর সীমানা নির্ধারণের ভিত্তি হিসাবে মূল ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে (সিএস) এবং ভরা মৌসুমে নদী প্রবাহের ধারা ব্যবহার করতে হবে;
৭. নদী, খাল ও জলাশয় দূষণকারীদের ওপর উপযুক্ত জরিমানা আরোপ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।