নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ সময়ের ফ্যাসিবাদের সুযোগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িয়ে পড়েছে দুর্নীতিতে। ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বেরিয়ে আসছে অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র। রাজউকের অনেক কর্মকর্তার দুর্নীতি প্রকাশ্যে এলেও অনেক কর্মকর্তার দুর্নীতি রয়েছে অগোচরে। বর্তমান সময়ে বাক স্বাধীনতা ফিরে পেয়ে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন সাধারণ ভুক্তভোগী জনতা। এবার প্রকাশ্যে এলো রাজউকের ইমারত পরিদর্শক সোলাইমান হোসাইনের দুর্নীতির চিত্র।
ঝিনাইদহের চাপড়ী গ্রামের সন্তান মোঃ সোলাইমান হোসেন রাজউকে ইমারত পরিদর্শক হিসেবে চাকুরিতে যোগদান করেন ২৫ অক্টোবর ২০১৫ সালে। যোগদানের পরে জোন ১/৩ এ কর্মরত থাকাকালিন নোটিশ ব্যবহার করে ভবন মালিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ উপার্জন, ঘুষ গ্রহন করে অনৈতিক ও আইন বিরোধী কাজে লিপ্ত হন।
পরিদর্শক মোঃ সোলাইমান হোসাইন জোন ৩/২ সাভার আশুলিয়ার বিরুলিয়া ব্রীজ পার হয়ে চারাবাগ বাজারের সাথে কিংশুক হাউজিং ও তার আশে পাশে নানান অপকর্ম সাধন করেছেন।
এছাড়াও জানা গেছে, ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানীর বিল্ডিং তৈরির পরে মোটা অংকের ঘুষ গ্রহন করে প্লান অনুমোদন করিয়ে দিয়েছেন। ৪ জুলাই ২০২৪ এ রাজউকের এড়িয়া পুনরায় ভাগের পূর্বে সোলাইমান জোন ১/৩ এ কর্মরত থাকাকালিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোন ৩/২ এর এড়িয়ায় ঢুকে এই অপকর্ম করতেন।
কিংশুক হাউজিং এর এক বাড়ির মালিক আলাউদ্দিন বলেন পরিদর্শক সোলাইমান ও অথোরাইজড অফিসার নুর আলম ৪০-৫০ লক্ষ টাকা দাবি করেন পরে তারা ০৭ জন বিল্ডিং মালিকের থেকে ১৫ লক্ষ টাকা গ্রহন করেন।
অন্য এক বাড়ির মালিক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মোঃ তারিকুল ইসলাম ধ্রব বলেন তার বিল্ডিংয়ের কাজ চলাকালিন পরিদর্শক মোঃ সোলাইমান হোসাইন সেখানে গিয়ে নাম পরিচয় না দিয়ে মাফিয়া স্টাইলে কাজ বন্ধ করতে বলেন এবং শ্রমিকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ ইউসুব আলি জানান, ম্যাজিষ্ট্রেট উপস্থিত হয়ে ত্রুটিপূর্ন যে বাড়িগুলো ভেঙে দিয়েছেন সেই বাড়িগুলোর কাগজ ঠিক করতে পরিদর্শক সোলাইমান ও অথোরাইজড অফিসার নুর আলম প্রতি বাড়ি থেকে ১ লক্ষ করে টাকা নিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, কিংশুক হাউজিংয়ের আশেপাশে এই হাতিয়ে নেয়া অর্থে পরিদর্শক সোলাইমান বাড়ি করেছেন।
কিংশুক হাউজিংয়ের মোঃ খোকন মিয়া জানান আমরা প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনুমোদন এনে বাড়ি তৈরি শুরু করলে রাজউক বাধা দেয়। আমরা একাধিকবার রাজউকে অনুমোদনের জন্য গিয়েও অনুমোদন না পেলে পরিদর্শক সোলাইমান আমাদের কাছে প্রতি বিল্ডিংয়ের জন্য সাড়ে ৬-৭ লক্ষ টাকা দাবী করে। তার এখানে একটা জমি আছে বলেও আমি শুনেছি।
একাধিক ব্যক্তি জানান ইমারত পরিদর্শক সোলাইমান বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে নোটিশের মাধ্যমে উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে এবং তাতেও কাজ না হলে উচ্ছেদ করে অথবা বিল্ডিংয়ের কিছু অংশ ভেঙে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
পরিদর্শক সোলাইমান ও অথোরাইজড অফিসার নুর আলমের এই অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে ভবন মালিকগন মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট পিটিশনের আশ্রয় নিলে হাই কোর্টের বেঞ্চ ঐসকল ভবনগুলোতে রাজউকের সকল কার্যক্রমে স্থগিতের নির্দেশ প্রদান করেছেন।
মহাখালী রাজউক অফিসে গিয়ে ইমারত পরিদর্শক সোলাইমানের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে সে সকল বিষয় অসত্য ও বানোয়াট বলে দাবি করে আরও ভালোভাবে অনুসন্ধান করার অনুরোধ করেন। তিনি আরও বলেন কিছু অসাধু ব্যক্তিদের চাঁদা না দেয়ায় তার বিরুদ্ধে এই সকল অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।