slider

রংপুরে ভারী বর্ষণে আবারও পানি বৃদ্ধি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ৬ হাজার বাড়িঘর

আব্দুর রহমান রাসেল,রংপুর ব্যুরো: উজানের পাহাড়ি ঢল আর গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে উত্তরের তিস্তা নদীর পানি। ফলে রংপুরের গংগাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। এতে নি¤œাঞ্চলসহ তিস্তা চরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে গ্রামগুলো। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার বাড়িঘর। প্রতিবছর অন্তত: ৫ থেকে ৬ বারের ঢলে ভাঙ্গে বসতবাড়ীসহ আবাদী জমি এবং বন্যায় ভাসে এ অঞ্চলের মানুষ,জীব জন্ত্রুসহ আর গাছপালা।
আজ শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীতে হুহু করে বাড়ছে পানি। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারি ইউনিয়নের পশ্চিম বাগেরহাট ও শংকরদহ এলাকায় পানিতে প্লাবিত হয়েছে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জমির ফসল। এতে হুমকির মুখে রয়েছে রাস্তা-ঘাট, বিদ্যালয়, মসজিদ-মাদ্রাসা, ঈদগাহসহ, দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ। নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে ভাঙন ক্রমেই প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। ফলে দিশাহারা মানুষ অসহায়ের মতো অপেক্ষা করছেন নিয়তিকে ভর করে। বাড়িঘর সহায় সম্পদ বাঁচাতে শেষ চেষ্টা করছেন তারা। স্থানীয়রা বলছেন, এক সপ্তাহ ধরে পানির নিচে পড়ে আছি আমরা। বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় বাসা করছি। খাওয়া দাওয়া করছি অনেক কষ্ট করে। সরকারিভাবে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি এখনো। এদিকে, তিস্তার পানি প্রায় সাত দিন ধরে বাড়ছে। দিনে দিনে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে জানায় স্থানীয়রা। কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনিয়াচরের পশ্চিমপাড়ায় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভেঙে যাচ্ছে বাঁধ, বাঁশঝাড়, জমি, বসতবাড়ি।

প্রতিবছরই উজানের ঢল এবং ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে একাধিকবার তিস্তায় বন্যা দেখা দেয়। এতে অনেকের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়, আবাদি ফসল ডুবে যায়, জমির ক্ষতি হয় এবং গ্রামের রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে যায়। গত কয়েকদিন থেকে বৃষ্টি ও উজান থেকে পানির ঢল নেমে আসায় তিস্তার পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। পানির বাড়তি চাপে বেড়েছে উঠেছে ব্যারেজের ভাটি। তীব্র বেগে পানি গড়াচ্ছে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নি¤œাঞ্চলে। এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চড়ের কৃষি জমি। তাই বড় বন্যার শঙ্কায় রয়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষ।
পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন,কয়েকদিনের বর্ষনে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে, আমনের বীজতলা, ভুট্টা, বাদাম, পাটসহ বিভিন্ন ফসল। যে কারনে ফসল ওঠা নিয়ে শঙ্কায় আছে কৃষকরা। বন্যার পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে গ্রামগুলো। তবে গত বারের তুলনায় ছাওলায় এবারের বন্যায় নদী ভাঙ্গেনি।
লক্ষীটারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদি জানান, বেড়িবাঁধে ভাঙনের ফলে ভোররাত থেকে বিপদসীমার ওপর দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই এলাকায় ৬ শতাধিক বাড়িঘর পানির নিচে। রাস্তা ভেঙে গেছে ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের। পানি বৃদ্ধির ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।
কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, বেড়িবাঁধটির পূর্বের অংশ এরই মধ্যে ভেঙে গেছে। এখন খৈখাওয়া অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যদি এই ভাঙন রোধ করা না যায়, তাহলে খৈখাওয়া,পাঙ্গাটারি, মধ্যপাড়া, আমিনগঞ্জসহ আশপাশের প্রায় ১১ থেকে ১২টি গ্রামে ভাঙন দেখা দেবে। আউলিয়া বাজার, বিনবিনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। হু হু করে বাডছে তিস্তার পানি। এছাড়া চিলাখালচর ও মটুকপুরচরে পানি ঢুকেছে।
সংগ্রাম পরিষদের নেতা শাফিয়ার রহমান বানে ভাসা পরিণতি থেকে রেহাই পেতে নদী শাসন করার জোর দাবি জানান। প্রতি বছর বর্ষা আসলে সংগ্রামী হয়ে ওঠেন তিস্তা পারের মানুষরা। দীর্ঘ দিনের চলা এই দুর্ভোগের স্থায়ী সমাধান চান তারা। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ভাঙনকবলিত কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনিয়া চর ও লক্ষীটারি ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতির মুখে। তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এসব এলাকার বাসিন্দারা একটু সমস্যায় পড়ছে। তাদেরকে উঁচু স্থানে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, টেকসই মজবুত বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি সমীক্ষা করা হচ্ছে। সমীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের ভাঙন দেখা দেয়নি। বেড়িবাঁধের বাইরে যদি ভাঙনের খবর পাওয়া যায় সেখানেও জিওব্যাগ দেওয়া হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে পানি বৃদ্ধি ফলে নোহালীর চর, বৈরাতি, ছালাপাক, মর্নেয়ার চর এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরশাদ উদ্দিন পিএএ জানান, পিআই ও উপজেলা প্রকৌশলীকে সাথে নিয়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পর্যাপ্ত খাদ্য রয়েছে। সহায়তা দেওয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button