sliderশিক্ষাশিরোনাম

যৌন হয়রানির অভিযোগে চাকরীচুত্ত রাবি শিক্ষক’কে নিয়ম না মেনে পুনোরায় নিয়োগ

রাজশাহী জেলা প্রতিনিধিঃ যৌন হয়রানির অভিযোগে চাকুরী থেকে বরখাস্ত কৃত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক শাওন উদ্দিন’কে নিয়ম নিতির তোয়াক্কা না করে পুনোরায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত-২৮/০৮/২০১২ইং তারিখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের (বি,বি,এ) ১৩তম ব্যাচের প্রায় ৮২ জন ছাত্রছাত্রীবৃন্দ তাদের স্বাক্ষরিত ততকালীন বিভাগের সভাপতি বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন সেখানে উল্লেখ করা হয় যে, আমরা ব্যবস্থাপনা বিভাগের (বি,বি,এ) ১৩ তম ব্যাচের ছাত্রছাত্রীবৃন্দ আমরা অতি দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, চতুর্থ বর্ষের ১ম সেমিস্টারে ৪০৫ নাম্বার কোর্সের কোর্স শিক্ষক মোঃ শাওন উদ্দিন,অজানা কারণে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে বিশেষতঃ ছাত্রীদের সাথে বেশ কিছুদিন থেকে ক্লাশ চলাকালীন সময়ে দুর্ব্যবহার করতে থাকেন এবং গত ০২/০৮/২০১২ তারিখে ক্লাশ চলাকালীন সময়ে এক পর্যায়ে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে করে আপত্তিকর কথা বলেন।

তিনি ক্লাশের ছাত্রীদের পতিতার সাথে তুলনা করে বলেন, “তোমরা নিজেদের কি ভাবো,তোমাদের মত মেয়ে ১০০ টাকায় পাওয়া যায় আর ১০০০ টাকায় Aristocrat মেয়ে পাওয়া যায়,তোমাদের যা আছে ওদের মধ্যেও তা-ই আছে, তাদের সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী” এমতাবস্থায়, আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি এবং আমরা মনে করি স্যারের এ বক্তব্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমগ্র ছাত্রী সমাজকে তথা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করেছে। বর্তমানে উক্ত কোর্স শিক্ষকের ক্লাস করতে আমরা অস্বস্তি বোধ করছি, কোর্স শিক্ষক প্রভাষক শাওন উদ্দীন ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময় ক্লাসে অসংগতি ও কুরুচিপূর্ণ আচরণ করেছেন, যা আমরা সহ্য করে এসেছি এ পরিস্থিতিতে আমরা আপনার নিকট ন্যায় বিচার আশা করছি বলে তারা অভিযোগ দায়ের করেন ।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগের ভিক্তিতে,গত-০১/০৯/২০১২ইং তারিখে ব্যবস্থাপনা বিভাগের জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বলা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক প্রভাষক শাওন উদ্দীন, বি.বি.এ ১৩তম ব্যাচের বি.বি.এ এবং এম.বি প্রোগ্রামের সকল কোর্সের পাঠদান এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল কাজ থেকে বিরত থাকবেন।

৩/০৬/২০১৩ইং তারিখে ততকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি নিপীড়ন নিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ডঃ মাহবুবা কানিজ কেয়া স্বাক্ষরিত এক তদন্ত রির্পোটে বলা হয়।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন নিরোধ কমিটি,অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি ততকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর মোঃ সাইফুল ইসলাম ও (অভিযুক্ত শিক্ষক শাওন উদ্দীন) সহ সর্বমোট-১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

এতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৩তম ব্যাচের ৮২জন ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাক্ষরিত ব্যবস্থপনা বিভাগের শিক্ষক শাওন উদ্দীন’র বিরুদ্ধে বিভাগের ৪থ বর্ষের ২য় সেমিস্টারের নির্ধারিত ক্লাসের বাইরে প্রায়ই অতিরিক্ত ক্লাস নিতেন ক্লাস চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে তিনি ছাত্রীদের নানা অপিত্তিকর কথা বলতেন।

ছাত্র- ছাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণ করতেন তিনি শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতায় চোখ বন্ধ করে রোল নম্বর হাত দিতেন যেখানে তার হাত আটকে যেত সেই রোল নম্বর ধারিকে কে গান বলতে বাধ্য করতেন তিনি এবং তিনি ক্লাস চলাকালীন সময়ে এক পর্যায়ে ক্লাসের ছাত্রীদের পতিতার সাথে তুলনা করে বলেন, তোমাদের মত মেয়ে ১০০ টাকায় আর ১০০০ টাকায় Aristocrat মেয়ে পাওয়া যায়

গত-২৩ ও ২৪/১২/২০১৩ইং তারিখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মুহাম্মদ মিজান উদ্দিন’ প্রশাসন আমলে বিশ্ববদ্যালয়ের ৪৫০ তম সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয় সেখানে,বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক প্রভাষক শাওন উদ্দিনের বিরুদ্ধে যে সীদ্ধান্ত নেয়া তা হলো-যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা-২০১০ অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক শাওন উদ্দীন এর বিরুদ্ধে উথাপিত অভিযোগসমূহ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়। সিন্ডিকেটের বিবেচনায় তিনি নৈতিক স্খলন’র অপরাধে দোষী সাবস্ত হয়েছে তাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাষ্ঠ১৯ এর ৫৫(৩) ধারা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন এবং চুড়ান্ত শাস্তি প্রদানের জন্য বিধি অনুযায়ী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। (তদন্ত কমিটি) প্রাপ্ত সকল তথ্যাদি পর্যালোচনা করে বিধিমত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করায় ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক প্রভাষক মোঃ শাওন উদ্দীনকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী থেকে চুড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হলো।

এদিকে যৌন হয়রানির অভিযোগে বরখাস্ত কৃত ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক প্রভাষক মোঃ শাওন উদ্দীন তার চাকরি তে পুনোরায় স্বপদে বহালের জন্য উচ্চ-আদালতে আবেদন করেন তার আবেদন মোতাবেক উচ্চ আদালত অভিযুক্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক প্রভাষক শাওন উদ্দীন’ বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সঠিক তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ কে নির্দেশনা প্রদান করেন এবং সেখানে উল্লেখ করা হয় বিশ্বিবদ্যালয় চাইলে স্বাধীনভাবে অন্য কমিটি গঠন করা বা পূর্বে গঠিত কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আবেদনকারীর বিরুদ্ধে “নৈতিক স্খলন” অভিযোগের তদন্ত এবং তারপর উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ততকালীন উপাচার্য মোঃ আব্দুস সোবহান, যৌন হয়রানির অভিযোগে বরখাস্ত কৃত শিক্ষক শাওন উদ্দীন’র বিষয়ে উচ্চ আদালত বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ কে পূর্বের কমিটি অথবা নতুন কমিটির মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছিল ততকালীন উপাচার্য মোঃ আব্দুস সোবহান কোনো নির্দেশনা না মেনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক প্রভাষক শাওন উদ্দীন কে পুনোরায় নিয়োগ দেন।

এবিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ততকালীন উপাচার্য মোঃ আব্দুস সোবহান’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন এবিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবোনা এই কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button