sliderমহানগরশিরোনাম

যেভাবে কাটবেন মেট্রোরেলের টিকিট

পতাকা ডেস্ক : আগামীকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন। সাধারণ যাত্রীরা পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন। রাজধানীর উত্তরায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মেট্রোরেলে চড়ে আগারগাঁওয়ে গিয়ে নামবেন।

ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সংস্থাটি জানিয়েছে, শুরুতে মেট্রোরেল চলবে দিনে চার ঘণ্টা (সকাল ৮ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত) উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলার সময় ট্রেনগুলো মাঝপথে কোথাও থামবে না। ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের এই পথে ৯টি স্টেশন থাকলেও উত্তরা ও আগারগাঁওয়ের যাত্রী ছাড়া অন্যরা এ সুবিধা পাবেন না। পৌনে ১২ কিলোমিটারের এই পথ মেট্রোরেলে পাড়ি দিতে সময় লাগবে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ড।

মেট্রোরেলে যাতায়াতে কোনো কাগজের টিকিট থাকবে না। মেট্রোরেল স্টেশন থেকেই কার্ড কিনে যাতায়াত করতে হবে। শুরুতে উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশন থেকে টিকিট (কার্ড) কাটা যাবে। এই পথের ভাড়া ৬০ টাকা। প্রথম দিকে স্টেশনে দুই ধরনের কার্ড পাওয়া যাবে। স্থায়ী ও এক যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) কার্ড। যেকোনো টিকিট আপনি দুই পদ্ধতিতে কাটতে পারবেন, স্বয়ংক্রিয় ও ম্যানুয়াল। ভাড়া পরিশোধের জন্য থাকবে স্মার্টকার্ড ও টিকিটিং ব্যবস্থা। একজন যাত্রীর সর্বোচ্চ পাঁচটি টিকিট সংগ্রহের সুযোগ রাখা হয়েছে।

স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টিকিট কাটতে হলে যাত্রীকে প্রথমে মনিটরে ভাষা (বাংলা অথবা ইংরেজি) নির্বাচন করতে হবে। একক ও এককালীন (এমআরটি পাস) যাত্রার জন্য টিকিট নির্বাচন করতে হবে। এরপর আসবে গন্তব্যের তালিকা। কোন স্টেশন পর্যন্ত কত ভাড়া সে তালিকা দেয়া থাকবে। তারপরই গন্তব্য স্টেশন নির্বাচন করতে হবে।

এরপর কয়টি টিকিট কাটবেন তার অপশন আসবে। পছন্দমতো স্টেশন ও টিকিট সংখ্যা টাচ-স্ক্রিন মনিটরে নির্বাচন করে গন্তব্যের স্থান নির্বাচন করতে হবে। এরপর `ওকে` বাটন চাপলেই মেশিন টাকা চাইবে। টাকা দিলেই একক টিকিট বের হয়ে আসবে। মেশিনে সর্বনিম্ন ২০ টাকা আর সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা প্রবেশ করানো যাবে।

যারা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টিকেট কাটতে পারবেন না তাদের জন্য রয়েছে প্রচলিত পদ্ধতিতে কাউন্টার থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহের ব্যবস্থা। লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করে তা স্মার্টকার্ড পাসের মাধ্যমে গেট দিয়ে প্রবেশ করা যাবে।

স্থায়ী কার্ড : এ কার্ড পেতে নিবন্ধন করতে হবে। বৃহস্পতিবার ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের লিংক দেয়া হবে। নিবন্ধন করতে নিজের নাম, মা-বাবার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা পাসপোর্ট নম্বর, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল আইডি। ১০ বছর মেয়াদি স্থায়ী কার্ড কিনতে হবে ২০০ টাকা দিয়ে। এই কার্ড দিয়ে যাতায়াতের জন্য প্রয়োজনমতো টাকা রিচার্জ করা যাবে।

এক যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) : এ কার্ডের জন্য নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না। স্টেশন থেকে এই কার্ড কিনে যাত্রা করা যাবে। ট্রেন থেকে নামার সময় কার্ড রেখে দেয়া হবে। সিঙ্গেল রাইডসের কার্ডে সময় নির্ধারণ থাকবে। এরপর এই কার্ড আর কার্যকর থাকবে না। যাত্রা শেষ করে টিকিট স্টেশনের স্বয়ংক্রিয় দরজায় জমা দিয়ে আসতে হবে। কারণ এই টিকিট জমা না দিলে দরজা খুলবে না, ফলে যাত্রী স্টেশন থেকে বের হতে পারবে না। তবে যারা এটিএম কার্ড নিয়মিত ব্যবহার করেন তাদের জন্য মেট্রোরেলের সেবা নেয়া অনেক সহজ। কারণ মেট্রোরেলের টিকিট, কার্ড ও টাকা জমা দেয়ার পদ্ধতি একই ধরনের।

শুরুতে মেট্রোরেল স্টেশন থেকেই এই কার্ড কিনতে হবে। পরে পর্যায়ক্রমে স্টেশনের বাইরে কার্ড বিক্রির জন্য কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। স্টেশনের টিকিট অফিস মেশিন (টিওএম) থেকে বিক্রয়কর্মীর সহায়তায় কার্ড কেনা যাবে। এ ছাড়া ভেন্ডিং মেশিন থেকে যাত্রীরা নিজেরাই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

সরকার মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করেছে ২০ টাকা। এরপর প্রতি দুই স্টেশন পর ১০ টাকা ভাড়া যোগ হবে।
মেট্রোরেলের যাত্রীদের অবশ্য কয়েকটি বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে :
একটি স্টেশনে ট্রেন থেমে থাকবে ১০ মিনিট। সপ্তাহে এক দিন মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে চলাচল। টিকিট কাটার আগে নিবন্ধন করতে হবে। স্টেশন ও কোচ থাকবে সিসিটিভির আওতায়।

মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, বুধবার বেলা ১১টার দিকে মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল অংশের কাজ শেষ করে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন করা হবে। ২০২৫ সালে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেলের পুরো পথ উন্মুক্ত হবে।

২২ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল বানাতে সরকারের খরচ হচ্ছে ৩১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর স্টেশন সংখ্যা ১৭টি। মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বলেও জানান কাদের।

এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা। সর্বশেষ ব্যয় প্রস্তাব অনুযায়ী জাইকা দেবে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button