slider

মেডিকেলে চান্স পেলেও দুশ্চিন্তায় জয় বসাকের পরিবার

তৈয়বুর রহমান কিশোর, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : মা-বাবার স্বপ্ন থাকে তাদের ছেলে-মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাবে। আর কোন মা-বাবার সন্তান সেই সুযোগ পেলে পরিবারে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। অথচ এর উল্টাটা ঘটেছে জয় বসাকের পরিবারে। ছেলে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে কিন্তু আনন্দের পরিবর্তে দুশ্চিন্তায় ছেয়ে গেছে জয় বসাকের মা বাবার চোখ মুখ। দুশ্চিন্তার কারণ একটাই কিভাবে ছেলেকে ভর্তি করবে আর কিভাবে চলবে মেডিকেলে পড়ালেখার খরচ ? এমন কি কবে থেকে মেডিকেলে ভর্তি শুরু সেই তারিখও জানে না জয় ও তার পরিবার।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার মেডিকেল কলেজ সমূহের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি রোববার ফলাফল প্রকাশিত হয়। ফলাফলে দেখা যায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বোয়ালমারী বাজারের কেষ্ট বসাকের ছেলে জয় বসাক (২০) বরিশাল মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। বোয়ালমারী সদর বাজারের গোশ হাটার পাশে খোলা রাস্তায় সেলাই মেশিন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন কেষ্ট বসাক। নিজের কোন জমিজমা নেই। উত্তরাধিকার সূত্রে বসত বাড়ির ২ শতক জমি পেয়েছেন যেখানে ছোট একটা ঘর করে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন কেষ্ট বসাক। স্ত্রী, ছেলে জয় বসাক আর এক মেয়ে জয়া বসাককে নিয়ে ছোট ঘরে বসবাস তার। মেয়ে জয়া বসাক বোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী। জয় বসাক ২০২১ সালে বোয়ালমারী জর্জ একাডেমি থেকে এসএসসি এবং ২০২৩ সালে ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। উভয় পরীক্ষায়ই সে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্ব দেখায়। স্কুল কলেজের শিক্ষকদের সহযোগিতায় উচ্চ মাধ্যমিক পাস করলেও বরিশাল মেডিকেলে কলেজে পড়ালেখার খরচ কিভাবে নির্বাহ করবেন সে চিন্তায় ঘুম নেই কেষ্ট বসাকের দুচোখে।

কেষ্ট বসাক বলেন, রাস্তার ধারে বসে সেলাই মেশিন চালিয়ে সংসার চালাই। কোনদিন বাজার করার টাকা হয় কোন দিন আবার হয় না। খেয়ে না খেয়ে, ধার-দেনা করে, স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করছি। ছেলে জয় বসাকের লেখাপড়া চালাতে সহযোগিতা করেছেন শিরগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী মৃধা, সহকারী শিক্ষক অসীম কুমার রাজবংশী, কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের প্রভাষক দেবাশিষ সাহা, জর্জ একাডেমির শিক্ষক বিকাশ চন্দ্র, খরসূতী চন্দ্র কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অধীর কুমার প্রমুখ। ছেলেকে ঢাকায় পড়িয়েছি কিন্তু কিভাবে, কোথা থেকে খরচ জোগাড় করেছি তা ছেলেকে কখনও বুঝতে দেইনি। ছেলের একটা মোবাইলও নেই। পরিবারের মধ্যে আমার নিজের পুরাতন একটা বাটন ফোন আছে। কত তারিখের মধ্যে ভর্তি হতে হবে তা এখনও আমরা জানিনা। মোবাইল না থাকায় ছেলে খোঁজ নিতে পারছেনা। তাকে মেডিকেলে ভর্তি করাতে পারবো কি না তাও জানিনা। কারণ এখন পর্যন্ত কোন টাকা পয়সা জোগাড় করতে পারিনি। ছেলের লেখা পড়ায় যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
জয় বসাক মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে খুশি। তবে বাবার কপালে চিন্তার রেখায় তারও মন খারাপ। সে ডাক্তার হয়ে অবহেলিত, অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে চায়।

আলফাডাঙ্গা উপজেলার শিরগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী মৃধা বলেন, জয় ছেলেটা মেধাবী। যে কারণে আমরা তাকে সহযোগিতা করেছি। আমার নিকট সে বিনা বেতনে গণিত, রসায়ন প্রাইভেট পড়েছে। বইপত্র দিয়েও তাকে সহযোগিতা করেছি। তার মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়ার খবর শুনে খুশি হয়েছি। তার প্রতি শুভ কামনা এবং সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button